মহামারি করোনাভাইরাসে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ বিপর্যস্ত হয়ে পড়লেও উত্তর কোরিয়ায় থাবা বসাতে পারেনি। দেশটির নেতা কিম জং উন দাবি করেছেন, প্রাণঘাতী ভাইরাসটি ঠেকাতে তার দেশ ‘উজ্জ্বল সাফল্য’ দেখিয়েছে। তবে কেউ করোনায় আক্রান্ত হননি বা মারা যাননি তিনি এমন দাবি করলেও তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ করছেন বিশ্লেষকরা। গত মে মাসে কিছু গণমাধ্যমে গুজবও ছড়িয়েছিল, করোনা আক্রান্তদের গুলি করে মেরে ফেলছে উত্তর কোরিয়া। খবর বিবিসি ও সিএনএনের।
উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম কেসিএনএ শুক্রবার জানায়, ক্ষমতাসীন দলের পলিটব্যুরো বৈঠকে কিম বলেছেন, ‘দেশ মারাত্মক ভাইরাসটির অনধিকার প্রবেশ ঠেকিয়ে দিয়েছে এবং স্থিতিশীল পরিস্থিতি ধরে রেখেছে।’ বৈঠকে করোনা প্রতিরোধে নেওযা কর্মসূচির বিস্তারিত তুলে ধরে কিম বলেন, ভাইরাসটি নিয়ন্ত্রণে উজ্জ্বল সাফল্য অর্জিত হয়েছে পার্টির সেন্ট্রাল কমিটির দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণে।
প্রতিবেশী দেশগুলোতে এখনও ভাইরাসের উপস্থিতি থাকায় উত্তর কোরিয়ার শীর্ষ নেতা ‘লড়াই শিথিল না করে সর্বোচ্চ সতর্কতা’ বজায় রাখার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি বলেন, ‘মহামারি প্রতিরোধী পদক্ষেপে একটুও শিথিলতা আনলে তা হতে পারে অকল্পনীয় ও অপূরণীয় সংকটের কারণ।’
তবে কিমের এমন দাবি মানতে পারছেন না বিশ্লেষকরা। সিউলের উত্তর কোরিয়া বিরোধী গণমাধ্যম এনকে নিউজের ম্যানেজিং এডিটর ওলিভার হথম্যান বলেন, চীনের সীমান্তে থেকেও দেশটিতে করোনা আক্রান্ত হয়নি, এটি বিশ্বাসযোগ্য নয়। চীনের সঙ্গে তাদের বাণিজ্য রয়েছে। আমি বিশ্বাস করি না, তারা করোনাকে এভাবে প্রতিরোধ করতে পেরেছে।
যদিও দেশটিতে থাকা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত জানুয়ারিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যখন করোনার সংক্রমণ ছড়াচ্ছিল, তখনই উত্তর কোরিয়া প্রতিবেশী চীন ও দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ করে দেয় এবং হাজার হাজার লোককে আইসোলেশনে থাকতে বাধ্য করে। দেশে থাকা বিদেশিদের রাজধানী পিয়ংইয়ংয়ে কোয়ারেন্টাইনে পাঠায়। বন্ধ করে দেয় স্কুল-কলেজ।
ডব্লিউএইচওর এক কর্মকর্তা জানান, উত্তর কোরিয়ায় মাত্র ৯২২ জনের করোনা টেস্ট করা হয়েছে এবং সবার নেগেটিভ এসেছে।
পিয়ংইয়ংয়ে বিদেশি কূটনীতিকরা জানিয়েছেন, এখন স্কুল-কলেজ খুললেও জনসমাবেশ নিষিদ্ধ করে দিয়েছে কিম সরকার। এছাড়া জনসমাগম হয় এমন জায়গায় মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করেছে দেশটি। রাস্তাঘাটে মাস্ক পরা ও শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে কঠোর অবস্থানে রয়েছে দেশটির আইন-শৃঙ্খলিাবাহিনী।
তবে তাদের মতে, করোনার উৎপত্তিস্থল চীনের সঙ্গে দীর্ঘ সীমান্ত থাকলেও উত্তর কোরিয়ায় এখন পর্যন্ত একজনও আক্রান্ত না হওয়া বেশ বিস্ময়কর।