মহামারি করোনায় বিশ্বের শীর্ষ আক্রান্ত দেশ যুক্তরাষ্ট্রে ভাইরাসটির সংক্রমণ কমছেই না। গতকাল মঙ্গলবার একদিনে আরও ৪৭ হাজারেরও বেশি কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছে। প্রাদুর্ভাব শুরুর পর দেশটিতে এটাই একদিনে সর্বোচ্চ সংক্রমণ শনাক্তের ঘটনা। এদিকে মার্কিন শীর্ষ সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ সতর্ক করে বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রে একদিনে এই সংখ্যাটা লাখ ছুঁতে পারে।
প্রথমদিকে করোনার প্রাদুর্ভাব শুরুর পর যুক্তরাষ্ট্রে ভাইরাসটির সংক্রমণের কেন্দ্র ছিল সবচেয়ে জনবহুল অঙ্গরাজ্য নিউইয়র্ক। কিন্তু সেখানে ভাইরাসটির বিস্তার এখন অনেকটা কমলেও নতুন করে ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাবের কেন্দ্র হয়ে উঠেছে ক্যালিফোর্নিয়া, টেক্সাস, অ্যারিজোনা ও ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্য। আরও বেশ কিছু রাজ্যেও সংক্রমণ আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে।
ট্রাম্প প্রশাসনের করোনা টাস্কফোর্সের সদস্য এবং শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয় বিশ্বের শীর্ষ সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে পরিচিত ড. অ্যান্থনি ফাউচি মঙ্গলবার মার্কিন সিনেট কমিটির এক শুনানিতে বলেছেন, ‘স্পষ্টতই, এটি (মহামারি) এখনও আমাদের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে নেই। আমি খুবই উদ্বিগ্ন কারণ এটা খুব ভয়াবহ হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেসের পরিচালক ফউচি বলেন, ‘আমি হয়তো যথাযথভাবে আভাস দিতে পারছি না, তবে এটা বলতে পারি পরিস্থিতি খুব ভয়াবহ হবে। এ ব্যাপারে আমি নিশ্চিত। ভাইরাসটির বিস্তার রোধে দেশজুড়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হয় তাহলে দৈনিক আক্রান্ত এক লাখে পৌঁছালেও আমি বিস্মিত হবো না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা কেবল সেসব অঞ্চলগুলোতে মনোযোগ দিতে পারি না যেগুলোতে সংক্রমণ বাড়ছে। এটা পুরো দেশকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে। যদিও ভ্যাকসিনের বিষয় ইতিবাচক পূর্বাভাস পাওয়া যাচ্ছে তথাপি ভ্যাকসিন যে কার্যকর হিসেবে প্রমাণিত হবেই তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। ভ্যাকসিন আসলেও আগামী বছরের শুরুতে তার ডোজ পাওয়া যেতে পারে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের করা একটি খতিয়ানে দেখা যাচ্ছে, জুনে যুক্তরাষ্ট্রের কমপক্ষে ১০টি অঙ্গরাজ্যে ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্তের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। টেক্সাস এবং অ্যারিজোনার কিছু অংশের হাসপাতালগুলোতে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) বেডের সংখ্যার সংকট দেখা দিয়েছে। আরও অনেক রাজ্যেই এমন সংকট তৈরি হয়েছে।
মহামারি করোনায় ইতোমধ্যে ১ লাখ ২৬ হাজারের বেশি মানুষে প্রাণ হারিয়েছেন। এছাড়া ২৭ লাখেরও বেশি মার্কিনির দেহে ভাইরাসটির সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এদিকে করোনায় অর্থনীতি ব্যাপক সংকটে পড়ায় দেশটির ৪০ লাখেরও বেশি মানুষ চাকরি হারিয়েছেন। বছরের প্রথম প্রান্তিকে অর্থনীতির যে বেহাল দশা তৈরি হয়েছে দ্বিতীয় প্রান্তিকে তার আরও ভয়াবহ হতে পারে।