মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ার সক্ষমতা রয়েছে চীনে ফ্লু ভাইরাসের এমন একটি নতুন স্ট্রেইন শনাক্ত করেছেন বিজ্ঞানীরা। খুব সম্প্রতি এর উৎপত্তি হয়েছে এবং এর বাহক প্রাণী হচ্ছে শূকর। এটি মানুষকেও সংক্রমিত করতে পারে বলে ওই বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন। খবর ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির।
গবেষকরা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলছেন যে, এই ফ্লু ভাইরাসটি ক্রমশই রূপান্তরিত হয়ে সহজেই এক ব্যক্তি থেকে অপর ব্যক্তিতে ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং এটিরও করোনার মতো একটি বৈশ্বিক মহামারির রুপ নেওয়ার সক্ষমতা রয়েছে। তাই বিষয়টি নিয়ে সতর্ক করে দিয়েছেন তারা।
বিজ্ঞানীরা আরও জানিয়েছেন, ‘মানুষের মধ্যে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার মতো সব ধরনের চিহ্ন ভাইরাসটির মধ্যে দেখা যাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে আমাদের নিবিড় পর্যবেক্ষণ প্রয়োজন। কেননা নতুন ফ্লু স্ট্রেইন হওয়ায় এর বিরুদ্ধে মানুষের খুব সামান্য কিংবা একেবারে কোনো ধরনের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা না থাকার সম্ভাবনাই বেশি।’
বিশ্বে এখন চীন থেকেই প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়া নভেল করোনাভাইরাসের মহামারি চলছে। ভাইরাসটি এক কোটিরও বেশি মানুষের দেহে সংক্রমিত হয়েছে; কেড়ে নিয়েছে ৫ লাখ মানুষের প্রাণ। এই সময়েও বিশেষজ্ঞরা যে শীর্ষ রোগের ঝুঁকির ওপর নজর রাখছেন তার মধ্যে ইনফ্লুয়েঞ্জার একটি ক্ষতিকর নতুন স্ট্রেইন রয়েছে।
সবশেষ ২০০৯ সালে বিশ্ব ফ্লু মহামারির কবলে পড়েছিল। সোয়াইন ফ্লু নামে এর প্রাদুর্ভাব শুরু হয়েছিল মেক্সিকোতে। অবশ্য প্রাথমিক শঙ্কার চেয়ে তুলনামূলক এটি ছিল কম মারাত্মক। এর বিরুদ্ধে বয়স্ক ব্যক্তিদের কিছুটা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা ছিল; সম্ভবত আগের ফ্লু ভাইরাসের সঙ্গে মিল থাকায় এমনটা হয়েছিল।
বিজ্ঞানীরা চীনে ফ্লুর যে নতুন স্ট্রেইনটি শনাক্ত করেছেন তা ২০০৯ সালের সোয়াইন ফ্লু ভাইরাসের মতো হলেও এর মধ্যে নতুন কিছু পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। শঙ্কাটা বেশি এ কারণেই। বিষয়টি নিয়ে গবেষণারত অধ্যাপক কিন-চো চ্যাং বলেন, এখন পর্যন্ত এটা মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করেনি তবে এর ওপর নজর রাখতে হবে।
গবেষকরা ফ্লুর নতুন এই ভাইরাসটিকে জি৪ইএএইচ১এন১ নাম দিয়েছেন। ভাইরাসটি কোষের মধ্যে বৃদ্ধি ও বহুগুণে বাড়তে পারে; যা মানুষের বায়ুগ্রহণের পথগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তারা সম্প্রতি এমন ব্যক্তির মধ্যে এর সংক্রমণের প্রমাণ খুঁজে পেয়েছেন যারা চীনের কসাইখানা কিংবা শূকর প্রক্রিয়াজাত শিল্পের সঙ্গে জড়িত।
বর্তমানে ফ্লুর যে ভ্যাকসিন/টিকা রয়েছে তা এই ভাইরাসটির সংক্রমণ রোধ করতে পারছে না। যুক্তরাজ্যের নটিংহ্যাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কিন চো চ্যাং বিবিসিকে বলেন, ‘এই মুহুর্তে আমরা করোনা নিয়ে বিপর্যস্ত। তবে আমাদের অবশ্যই সম্ভাব্য বিপজ্জনক নতুন ভাইরাসগুলোর প্রতি দৃষ্টি হারাতে দেওয়া ঠিক হবে না।’
যদিও তিনি বলছেন, ‘নতুন এই ভাইরাস হয়তো শিগগিরই আমাদের জন্য তেমন বিপজ্জনক সমস্যা হয়ে উঠবে না, তবুও আমাদের এটাকে অবহেলা করা উচিত নয়।’