Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

hajj-agencyএবারের মৌসুমে হজ ‘সীমিত’ করার ঘোষণায় চোখে অন্ধকার দেখছে বাংলাদেশের হজ ও ট্রাভেল এজেন্সিগুলো। মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। প্রতি হজ মৌসুমে দেশে সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকার লেনদেন হলেও এ বছর এই অংক ‘শূন্যের’ কোঠায় থেকে যাচ্ছে। ফলে অনেক হজ ও টিকিট বিক্রি করা ট্রাভেল এজেন্সিকে প্রতিষ্ঠানে তালা দিতে হবে। আর করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) কারণে আন্তর্জাতিক বিধিনিষেধে ধুঁকতে থাকা বিমান হারাবে রাজস্ব আয়ের সবচেয়ে বড় সুযোগটি। ফলে তাদের সামনে আরও ‘মহাসংকট’।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০২০ সালে বাংলাদেশ থেকে এক লাখ ৩৭ হাজার ১৯১ জনের হজে যাওয়ার কথা ছিল। তবে গত সোমবার (২২ জুন) এক আদেশে সৌদি সরকার ‘সীমিত আকারে হজ’ সম্পন্ন করার ঘোষণা দেয়। ওই আদেশ অনুসারে, শুধু সৌদি আরবে বসবাসরতরাই এবারের হজে অংশ নিতে পারবেন। এছাড়া বিভিন্ন দেশের মুসলিম যারা বর্তমানে সৌদি আরবে বসবাস করছেন, তারাও হজে অংশ নেয়ার সুযোগ পাবেন। অর্থাৎ বিশ্বের অন্যান্য মুসলিমদের মতো এবার বাংলাদেশের কেউও সেখানে হজ করতে যেতে পারছেন না।

chardike-ad

হজ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন খাতের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সৌদি সরকারের এ সিদ্ধান্তে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে হজ এজেন্সিগুলো। হজ ভিসা থেকে শুরু করে মক্কা-মদিনায় বাড়িভাড়া, গাড়িভাড়া, হজযাত্রীদের খাওয়া—সার্বিক ব্যবস্থাপনার প্রতিটি ক্ষেত্রেই আয় হতো তাদের। তবে হজ সীমিত করার সিদ্ধান্তে তারা এই আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

হজ এজেন্সিস অব বাংলাদেশ (হাব) জানায়, তাদের বর্তমান সদস্য এক হাজার ২৩৮ (এজেন্সি)। এজেন্সিগুলোর মালিকসহ কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় ২০ হাজারের মতো। এছাড়া এ পেশার সাথে পরোক্ষভাবে বাংলাদেশে ও সৌদি আরবে আরও প্রায় এক লাখ লোক নিয়োজিত। সৌদির সিদ্ধান্ত এ বছর তাদের অনেক ভোগাবে বলে মনে করছে হাব।

এ বিষয়ে হাবের সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম বলেন, এ বছর বাংলাদেশ থেকে এক লাখ ৩৭ হাজার জনের হজে যাওয়ার কথা ছিল। হজকেন্দ্রিক প্রায় সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকার লেনদেন হতো। তবে সৌদির সিদ্ধান্তের কারণে এই বড় লেনদেনটি হচ্ছে না। এতে ছোট-বড় সব হজ এজেন্সিই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এমনকি অনেক এজেন্সির টিকে থাকাও কষ্ট হয়ে যাবে।

হজযাত্রীদের সৌদি পাঠাতে না পেরে ক্ষতির মুখে পড়তে হবে টিকিটিং এজেন্সিগুলোকেও। এ বছর হজের বিমানভাড়া ধরা হয়েছিল এক লাখ ৩৮ হাজার টাকা। প্রতিটি টিকিটিং এজেন্সি টিকেটপ্রতি ৭ শতাংশ হারে কমিশন পেতো। হজ সীমিত হওয়ার কারণে তারাও এই কমিশন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব) জানায়, করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে কয়েক মাস ধরে দেশে ফ্লাইট চলাচলে নিষেধাজ্ঞার কারণে বন্ধ ছিল প্রায় সব ট্রাভেল এজেন্সি। যেসব বিশেষ ফ্লাইট চলেছে সেগুলোর টিকিট পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং এয়ারলাইন্স কোম্পানি নিজেরাই বণ্টন করেছে। ফলে গত তিন মাস ধরে কোনো আয় নেই তাদের। হজের মৌসুমের অপেক্ষায় ছিল তারা। কিন্তু হজ সীমিত করার সিদ্ধান্ত তাদের জন্য ‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে হাজির হয়েছে।

আটাবের সাধারণ সম্পাদক মো. মাজহারুল এইচ ভূঁইয়া বলেন, দেশে ৬০০ থেকে ৬৫০টি এজেন্সি সক্রিয়ভাবে হজযাত্রী বহন করে। প্রতিটি এজেন্সি থেকে কমপক্ষে ১০০ থেকে ৩০০ জন হজযাত্রীর টিকিট কাটা হতো। হজ সীমিতকরণের ঘোষণায় আমাদের অনেক বড় ক্ষতি হয়ে গেল। অনেক এজেন্সি কয়েক মাস ধরে চরম সংকটে রয়েছে। হজ সীমিত করার সিদ্ধান্তে এই সংকট আরও প্রকট হলো। আমরা ২-১ দিনের মধ্যে আমাদের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করে সবাইকে জানাবো।

আটাবের কার্যনির্বাহী পরিষদের সভাপতি মনসুর আহমদ কালাম বলেন, গত চার মাস ধরে আমাদের ব্যবসা নেই। অন্যান্য খাতগুলো ধীরে ধীরে সচল হলেও এই সেক্টরটা এখনো থমকে আছে। এজেন্সিগুলো এতোদিন কোনো মতে কর্মীদের ঠিকঠাক বেতন দিয়ে ধরে রেখেছে। তবে এই অবস্থা চলতে থাকলে আগামী জুলাই মাসে কর্মীদের বেতন দেয়া সম্ভব হবে না। আমরা অর্থমন্ত্রী বরাবর একটি প্রণোদনা চেয়ে চিঠি পাঠালেও কোনো সাড়া পাইনি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হজ সীমিতকরণের ঘোষণা সবচেয়ে মারাত্মক আঘাত হানবে রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে। গত তিন মাস ধরে ‘দৈন্যদশা’য় চলতে থাকা বিমান ইতোমধ্যে সোনালী ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছে এক হাজার কোটি টাকা। হজ সীমিত করার সিদ্ধান্তে জরাগ্রস্ত হয়ে পড়বে তারা।

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলীর দেয়া সাম্প্রতিক তথ্য মতে, ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই- ডিসেম্বর) বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স কর পূর্ব নিট লাভ করেছে ৪২৩ কোটি টাকা।

বিমানের এই লাভের সিংহভাগ এসেছে হজফ্লাইট থেকে। কারণ দেশে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও সৌদি এয়ারলাইন্স একচেটিয়াভাবে সব হজযাত্রী বহন করে। ২০২০ সালে বাংলাদেশ থেকে এক লাখ ৩৭ হাজার ১৯১ জনের হজে যাওয়ার কথা ছিল। যার ৫০ শতাংশ অর্থাৎ ৬৮ হাজার ৫৯৫ জনকে বহন করতো বিমান। প্রতি টিকিট এক লাখ ৩৮ হাজার টাকা হলে শুধু হজযাত্রী বহন করে ৯৪৬ কোটি ৬১ লাখ ১০ হাজার টাকা আয় হতো বিমানের। হজ ফ্লাইট পরিচালনা না করার কারণে গোটা ৯৪৬ কোটি টাকার আয়ই হারাবে তারা।

করোনাভাইরাসের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সরকারের কাছে এক হাজার ৫০০ কোটি টাকা সুদমুক্ত প্রণোদনা চেয়ে গত এপ্রিলে সংবাদ সম্মেলন করে হাব। অর্থমন্ত্রীকে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি পাঠানোর পর হাব সভাপতি শাহাদাত হোসাইন তসলিম জানান, হজ, ওমরাহ, ট্রাভেল এজেন্সি ও ট্যুর অপারেটরসহ সংশ্লিষ্ট এ গুরুত্বপূর্ণ খাতকে বাঁচিয়ে রাখতে এবং এ খাতের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সংশ্লিষ্ট প্রায় এক লাখ ২০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের জন্য প্রণোদনা চাওয়া হয়েছে। তবে ২৩ জুন পর্যন্ত কোনো প্রণোদনার সংবাদ পাননি তারা।

সৌজন্যে- জাগো নিউজ