দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে সব ধরনের আন্তঃকোরিয়ান যোগাযোগ বন্ধ রাখার কথা জানিয়েছে উত্তর কোরিয়া। এমনকি দুই দেশের নেতাদের যোগাযোগের হটলাইনও বন্ধ থাকবে। দক্ষিণ কোরিয়াকে ‘শত্রু’ উল্লেখ করে উত্তর কোরিয়া জানায়, এটি আগামীতে দেশটির বিরুদ্ধে নিতে নেওয়া কয়েকটি পদক্ষেপের একটি মাত্র।
বিবিসি জানায়, মঙ্গলবার (৯ জুন) থেকে উত্তর কোরিয়ার সীমান্তবর্তী শহর কেসংয়ে অবস্থিত দুই কোরিয়ার লিয়াজোঁ অফিসে দৈনিক ফোনকল বন্ধ থাকবে। অনেক আলাপ-আলোচনার পর দু’দেশের মধ্যকার সম্পর্কের সংকট কমানোর জন্য ২০১৮ সালে লিয়াজোঁ অফিস খোলার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। ১৯৫৩ সালে কোরীয় যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটলেও কোনো শান্তিচুক্তিতে না পৌঁছানোয় আদতে উত্তর এবং দক্ষিণ কোরিয়া এখনো যুদ্ধে রয়েছে।
কোরিয়ান সেন্ট্রাল নিউজ এজেন্সি (কেসিএনএ) এক প্রতিবেদনে বলে, ‘উত্তর-দক্ষিণ যৌথ লিয়াজোঁ অফিসের মাধ্যমে উত্তর এবং দক্ষিণ কোরিয়ার কর্তৃপক্ষের মধ্যে যে যোগাযোগ হতো, ২০২০ সালের ৯ জুন রাত ১২টা থেকে তা সম্পূর্ণভাবে ছিন্ন এবং বন্ধ করা হবে।’ সেই সঙ্গে সামরিক যোগাযোগ চ্যানেলও বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছে উত্তর কোরিয়া।
করোনা ভাইরাসের বিস্তার রোধে বিধিনিষেধের কারণে জানুয়ারি মাসে লিয়াজোঁ অফিসটি সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করা হয়। তখন ফোনের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে যোগাযোগ হতো। অফিসের মাধ্যমে ফোনকলে প্রতিদিন সকাল ৯টা এবং বিকেল ৫টায় দুই কোরিয়া যোগাযোগ করতো। তবে ২১ মাসের মধ্যে প্রথমবারের মতো সোমবার (৮ জুন) সকালে দক্ষিণ কোরিয়ার করা কলের উত্তর দেয়নি উত্তর কোরিয়া। তবে বিকেলে দু’দেশের মধ্যে যোগাযোগ হয়েছে বলে জানানো হয়।
কেসিএনএর প্রতিবেদনে উত্তর কোরিয়া বলে, ‘আমরা এ উপসংহারে পৌঁছেছি যে, দক্ষিণ কোরিয়া কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মুখোমুখি বসার কোনো প্রয়োজন নেই এবং তাদের সঙ্গে আলোচনা করারও কিছু নেই, কেননা তারা কেবল আমাদের ক্ষোভ জাগায়।’
এর আগে উত্তর কোরিয়ার শীর্ষ নেতা কিম জং উনের বোন কিম ইয়ো জং হুমকি দিয়ে জানান, দক্ষিণ থেকে উত্তরে দেশদ্রোহীদের লিফলেট পাঠানো বন্ধ না হলে, লিয়াজোঁ অফিস বন্ধ করে দেওয়া হবে। ২০১৮ সালের পানমুনজম সম্মেলনে দক্ষিণের প্রেসিডেন্ট মুন জে ইনের সঙ্গে কিম জং উনের যে শান্তিচুক্তি হয়েছিল, লিফলেট ক্যাম্পেইনের কারণে সেটি ভঙ্গ হয়েছে বলে জানান তিনি।
উত্তর কোরিয়ার দেশদ্রোহীরা প্রায়ই দক্ষিণ থেকে ব্যালুনের মাধ্যমে উত্তরের বিভিন্ন অঞ্চলে লিফলেট বা বার্তা পাঠিয়ে থাকে। উত্তরের বাসিন্দারা শুধু রাষ্ট্রীয় বার্তাসংস্থার মাধ্যমে সংবাদ জানতে পারে এবং তাদের অধিকাংশের কাছেই ইন্টারনেট নেই।
তবে শুধু সীমান্তের ওপারে লিফলেট পাঠানো সংক্রান্ত বিষয়ে দক্ষিণের সঙ্গে উত্তর কোরিয়া সব যোগাযোগ ছিন্ন করেছে, এমন নাও হতে পারে। এ পদক্ষেপ উত্তরের বড় ধরনের কোনো পরিকল্পনার অংশ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।