দক্ষিণ কোরিয়ার উচ্চশিক্ষা নিয়ে বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের মধ্যে আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে। অনেকেই বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে চান কিভাবে দক্ষিণ কোরিয়ায় পড়াশোনা করতে আসা যায় কিংবা কিভাবে স্কলারশীপ পাওয়া যায়। মূলত তাদের উদ্দ্যেশ্যেই আমার অভিজ্ঞতার আলোকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরছি। দক্ষিণ কোরিয়ায় সাধারণত দুটি সেমিস্টারে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হয়। প্রথম সেমিস্টার মার্চ মাস থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত; দ্বিতীয় সেমিস্টার সেপ্টেম্বর মাস থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত। আজকের লেখাটা সসম্পূর্ণ আন্ডারগ্রাজুয়েট বা ব্যাচেলর করতে যারা আসবেন তাদের উদ্দেশ্যে লেখা।
প্রথমেই বলে রাখি দক্ষিণ কোরিয়ায় অনার্সের এপ্লিকেশন এবং মাস্টার্স বা পিএইচডিরএপ্লিকেশন প্রসেসটা সম্পূর্ণ ভিন্ন। এই লেখাটা শুধুই আন্ডারগ্রাজুয়েটে আবেদন সংক্রান্ত। যেহেতু সম্পূর্ণ আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার আলোকে লিখছি, কোন বিষয়ে কারো দ্বিমত থাকলে আমাকে ইমেইলে বা ইনবক্সের মাধ্যমে জানানোর অনুরোধ রইল। কোরিয়াতে বর্তমানে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের অধিকাংশই মাস্টার্স কিংবা পিএইচডির। এর মূল কারণ স্কলারশীপ। মাস্টার্স বা পিএইচডির তুলনায় আন্ডারগ্রাজুয়েট স্কলারশিপ খুবই কম। এখানে কেজিএসপি (কোরিয়ান গভর্নমেন্ট স্কলারশীপ), বিভিন্ন ইউনিভার্সিটির স্কলারশিপ এবং বিভিন্ন অর্গনাইজেশনের স্কলারশীপ পাওয়া যায়, তবে তা খুবই অল্প। আর কিছু ইউনিভার্সিটিতে টিউশন ফি’র ৫০-৭০% স্কলারশিপ দেওয়া হয়।
কোরিয়ান গভর্নমেন্ট স্কলারশিপ (কেজিএসপি): প্রতি বছর আন্ডারগ্রাজুয়েট কোর্সের জন্য বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীদের স্কলারশিপ দিচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়া সরকার। প্রতিবছর এই স্কলারশীপের আওতায় বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আবেদন চাওয়া হয়ে থাকে। কিন্তু এই স্কলারশীপের জন্য বাংলাদেশের কোটা থাকে অল্প কয়েকজন। বুঝতেই পারছেন কতটা প্রতিযোগিতা হয় এই স্কলারশিপের জন্য। এই স্কলারশিপ পেতে হলে নিজেকে সবার থেকে আলাদাভাবে উপস্থাপন করতে হয়। যেমন একাডেমিক রেজাল্ট, আইইএলটিএস, কোরিয়ান ল্যাংগুয়েজ সার্টিফিকেট (যদি থাকে), এক্সট্রা কারিকুলাম সার্টিফিকেট ইত্যাদি। যদিও উল্লেখিত সার্টিফিকেটের কথা উল্লেখ থাকে না বা অপশনাল হিসেবে উল্ল্যেখ থাকে কিন্তু সবার চেয়ে নিজেকে যোগ্য হিসেবে উপস্থাপন করতে হলে এই ধরণের সার্টিফিকেটগুলো কাজে দিবে। সেজন্য উচ্চমাধ্যমিকে থাকা অবস্থায় প্রিপারেশন নেওয়া উচিৎ বলে মনে করি। যদিও একই যোগ্যতা থাকা স্বত্বেও ভাগ্যের কারণে অনেকেই এই স্কলারশীপ থেকে বঞ্চিত হন।এই স্কলারশিপে নির্বাচিত শিক্ষার্থীরা বিমান ভাড়াসহ যাবতীয় খরচ পাবেন কোরিয়া সরকারের পক্ষ থেকে। শিক্ষার্থী নিজ যোগ্যতা অনুযায়ী যে কোন বিষয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় পছন্দ করতে পারবেন। প্রথম ১ বছর কোরিয়ান ভাষায় পড়ে লেভেল ৩ পাশ করে তারপর অনার্সের মূল কোর্সের পড়াশোনা শুরু হয়ে থাকে। যদি আপনার পছন্দ করা সাবজেক্টে ইংরেজি লেকচার হয় সেক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা ইংরেজিতে পড়তে পারবেন। কিন্তু বেশিরভাগ ইউনিভার্সিটিতে আন্ডারগ্রাজুয়েটে কোরিয়ান ভাষায় লেকচার হয়। ইংলিশ না কোরিয়ানে পড়তে হবে সেট ইউনিভার্সিটির ওয়েবসাইট থেকে চেক করে নিবেন এপ্লাই করার আগে। কেজিএসপি স্কলারশীপের আওতায় যা যা পাওয়া যাবে তার একটু সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দিই। আসা যাওয়ার বিমানের টিকেট, সেটেলমেন্ট এলাউন্স ২ লাখ উওন, লিভিং এলাউন্স ৮ লাখ উওন, মেডিকেল ইন্স্যুরেন্স মাসিক ২০ হাজার উওন, ল্যাংগুয়েজ কোর্স ফি ৮ লাখ উওন, টিউশন ফি, এক্সিলেন্ট ল্যাংগুয়েজ প্রফিসিয়েন্সি অ্যাওয়ার্ড বাবদ মাসিক অতিরিক্ত ১ লাখ উওন, রিসার্চ সাপোর্ট প্রতি সেমিস্টারে ২ লাখ দশ হাজার উওন। এছাড়া অন্যান্য প্রয়োজনীয় সকল খরচ কর্তৃপক্ষ বহন করবে। আগ্রহী শিক্ষার্থীকে বাংলাদেশে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের(বর্তুমানে এম্বাসী সরাসরি জমা নেয় কেনা দেখে নিবেন) নির্ধারিত ফর্মে আবেদন করতে হবে। প্রতি বছর সেপ্টেম্বরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে চোখ রাখতে হবে। তবে আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আগেই প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে। সেক্ষেত্রে আগের বছরের আবেদন ফর্মের সাথে যুক্ত ‘প্রয়োজনীয় কাগজপত্র’ অংশ দেখে নিতে পারেন।
অন্যান্য স্কলারশিপ কিভাবে পাবেন?: কোরিয়াতে দুই সেমিস্টারে শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হয়। সরকারী স্কলারশীপের জন্য বছরে একবার আবেদন করার সুযোগ থাকলেও অন্যান্য অনেক স্কলারশীপের জন্য দুইবার আবেদন করা যায়। আগেই বলেছি আন্ডারগ্রাজুয়েট স্কলারশিপ কম পাওয়া যায়। তবে কোথায় কোন ইউনিভার্সিটিতে কোন স্কলারশিপ পাওয়া যাবে সেটা আপনাকেই খুঁজে বের করতে হবে।
প্রশ্ন হলো, কিভাবে খুঁজে পাবেন?: শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত গুগল আপনাকে সহযোগিতা করবে। গুগল থেকে ইউনিভার্সিটি খুঁজে বের করে সেই ইউনিভার্সিটির ওয়েবসাইটে গেলে সব তথ্য পাওয়া যাবে। ওয়েবসাইটে কোরিয়ান ভাষা দেখে ঘাবড়ানোর কিছু নাই, ওয়েবসাইটের ডানপাশের কোনায় ইংরেজির একটা অপশন থাকে সেখানে ক্লিক করলেই ইংরেজি ওয়েবসাইট ওপেন হবে। ইউনিভার্সিটিগুলোর ওয়েবসাইট দেখে আপনাকে স্কলারশিপের লিস্ট করতে হবে এবং কোন ইউনিভার্সিটি কি সুবিধা দিচ্ছে সব দেখে এবার এপ্লাই করা শুরু করে দেন বিভিন্ন ইউনিভার্সিটিতে। অনলাইন/ অফলাইন দুইভাবেই আপনি এপ্লাই করতে পারবেন।
তবে মনে রাখবেন আপনার পছন্দ করা সাবজেক্ট কোন মিডিয়ামে পড়ানো হবে, মানে ইংরেজি না কোরিয়ান ভাষায় তা ভালভাবে দেখে নিতে হবে। নিচে আমি কিছু ইউনিভার্সিটির নাম এবং কিছু গুরুত্তপূর্ণ লিংক দিয়ে দিবো আপনারা সেখান থেকে গুগল করে বাকি তথ্য পেয়ে যাবেন। তাছাড়া, কোরিয়ায় বাংলাদেশী স্টুডেন্টস’ অ্যাসোসিয়েশন ইন কোরিয়া কর্তৃক পরিচালিত Study in Korea: BSAK Wing এই গ্রুপের মাধ্যমেও অনেক ইনফরমেশন পাওয়া যাবে। এই গ্রুপের ফাইল সেকশনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইনফরমেশন অভিজ্ঞ ভাইয়েরা লিখে ফাইল সেকশনে দিয়ে থাকেন এবং প্রতিনিয়ত বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরগুলো দেখলে ভালো ধারণা পাবেন আশাকরি।
নিজের টাকায় পড়তে আসবেন?: আমি একেবারেই নিজের টাকায় কোরিয়াতে এসে পড়ার পক্ষপাতী না। কারণ কোরিয়াতে টিউশন ফি অনেক বেশি, সেই সাথে আপনার থাকা খাওয়ার খরচও অনেক বেশি। আমি জেনারেল একটা হিসাব দিচ্ছি, এখানে টিউশন ফিস প্রতি সেমিস্টারে ২৫ থেকে ৬০ লাখ উওন বা টাকায় ২ লাখ ১০ থেকে ৫ লাখ টাকার মত (ইউনিভার্সিটি ভেদে ভিন্নও হতে পারে)। আর থাকা খাওয়ার বাবদ মাসে ৫ থেকে ৭ লাখ উওন (সিটি অনুযায়ী ভিন্ন হবে কিছুটা)।
যদি আমি কম করে হিসাব করি তাহলে দাঁড়ায়, ৩লাখ x ৮ সেমিস্টার= ২৪ লাখ টাকা ৪ বছরে। আর থাকা খাওয়া , ৩৫ হাজার x ৪৮ মাস= ১৭ লাখ টাকা(প্রায়)। তাহলে মোট হিসাব দাঁড়ায়, ২৪+১৭= ৪১ লাখ টাকা।
আপনি যদি চিন্তা করে থাকেন পার্টটাইম জব করে নিজের খরচ নিজেই বহন করবেন, তাহলে তার একটা হিসাব দেওয়া যাক। প্রথমেই বলে রাখি কোরিয়ান ভাষা জানা না থাকলে আপনি পার্ট-টাইম জব পাবেন না। আগে অনেকেই ফ্যাক্টরিতে ভারী কাজ করতো যদিও স্টুডেন্টদের জন্য এই কাজ নিষেধ ছিল। গত ২০১৮ সাল থেকে আইন করা হয়েছে স্টুডেন্টরা ফ্যাক্টরিতে কাজ করলে তার ছাত্রত্ব বাতিল করা হবে। অন্য দিকে প্রথম ৬ মাসের কাজের কোন অনুমোদন নাই। ধরে নিলাম আপনি কাজ পেয়ে গেছেন আসার পরদিন থেকে যদিও আকাশ কুসুম কল্পনা। তারপরও ধরে নিলাম পেয়ে গেছেন। আপনার সপ্তাহে ৫ দিন ক্লাস থাকবে, মাত্র দুইদিন ফ্রি থাকবেন সেমিস্টার চলাকালীন সময়ে। যদি আপনি সেই দুইদিন কাজ করেন তাহলে মাসে ৮ দিন ফ্রি থাকবেন।
৪৮ মাসের মধ্যে আপনার ছুটি থাকবে ১৬ মাস আর সেমিস্টার চলবে ৩২ মাস। তাহলে হিসাব করা যাক সেমিস্টার চলাকালীন আর ভেকেশন টাইমে আপানার পার্ট-টাইমের ইনকাম। ৩২ মাস x ৮= ৮৯,৬০০০ টাকার অনুমানিক। আর ভেকেশন টাইমে আপনার ইনকাম ১,২৮,০০০০ লাখ টাকা অনুমানিক। তাহলে আপনার মোট আয়ের পরিমাণ দাঁড়ায় ২১ লাখ ৭৬০০০টাকার মত কিন্ত আপনার ৪ বছরের মোট খরছের জন্য ২০ লাখ টাকার মত ঘাটতি থেকে যায়। এই টাকাটা আপনাকে দেশ থেকে আনতে হবে। এখানে আপনি আসার সাথে সাথে কাজ পাবেন না, ভাষা জানা থাকলেও সবসময় কিন্তু আপনি কাজ পাবেন না। এবং আপনি যদি এর মধ্যে দেশে বা অন্য কোন দেশে ঘুরতে যান তাহলে ইনকামের যে হিসাব দিয়েছি সেটা আরো কমবে। ক্লাসের দিনগুলোতে যদি আপনি কাজ করতে চান তাহলে আসলে পড়াশোনা করা খুবই কঠিন। ক্লাস লেকচারে মনোযোগী হওয়া, প্রেজেন্টেশনসহ ক্লাস, বিভিন্ন পরীক্ষার প্রস্তুতিসহ পড়াশোনার কথা চিন্তা করলে সাপ্তাহিক ছুটির দিন ছাড়া ক্লাসের দিনগুলোতে কাজ করার চিন্তাই করা যায় না।
উপরের হিসাবটা বিভিন্ন সিটি ভেদে কিছুটা এদিক-সেদিক হতে পারে। এটি বেসিক একটা আইডিয়া দেওয়ার জন্য লেখা। উপরের হিসাব থেকে আপনি নিজেই সিদ্ধান্ত নিতে পারেন নিজের খরচে আপনি কোরিয়ায় আসবেন কিনা। আমি বলবো নিজের খরচে আসার কথা মাথায় না আনতে। কোরিয়ায় উচ্চশিক্ষার জন্য যারা আসতে চান তাদের স্বাগতম। তবে অবশ্যই স্কলারশীপ নিয়ে আসবেন। আপনাদের জন্য শুভ কামনা রইলো।
শেষ করার আগে আরেকটি ব্যাপার উল্লেখ না করলেই নয়। বর্তমানে বিদেশে যাবার প্রবনতা আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে এবং প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষ পাড়ি জমাচ্ছেন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে, কেউ কাজের খোঁজে কেউ উচ্চ শিক্ষার জন্য। দক্ষিণ কোরিয়াতেও আগের তুলনায় অনেক ছাত্রছাত্রী আসছে বা আসার জন্য চিন্তা করছে। কিন্তু অনেকেই সঠিক তথ্য না জানার জন্য প্রতারিত হচ্ছেন প্রতিনিয়ত। কোরিয়ায় কোন রিক্রুটিং এজেন্সীর মাধ্যমে ছাত্রছাত্রী ভর্তি করানো হয়না। নিজেরদেরকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে যোগাযোগ করে আবেদন করতে হয়। যদিও কিছু এজেন্সি লোভনীয় অফারের কথা বলে একেবারেই পিছনের সারির কিছু ইউনিভার্সিটিতে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে ভর্তি করাচ্ছে। তাদের ব্যাপারে সতর্ক থাকবেন।প্ রতিটা বিষয়ে আলাদাভাবে লেখার চিন্তা আছে। কিছুটা সময় পেলেই ইনশাআল্লাহ লিখবো।
কিছু গুরত্বপূর্ণ লিঙ্ক:
কোরিয়ায় পড়াশুনার জন্য বিভিন্ন তথ্য পেতে পারেন এই সাইটে
[http://www.niied.go.kr/eng/main.do](http://www.niied.go.kr/eng/main.do)
বাংলাদেশ স্টুডেন্ট এসোসিয়েশন ইন কোরিয়া ফেসবুক পেইজ
https://www.facebook.com/Hi.BSAK/
বাংলাদেশ স্টুডেন্ট এসোসিয়েশন ইন কোরিয়া ওয়েবসাইট
সিউল ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিঃ http://www.useoul.edu/
কোরিয়া ইউনিভার্সিটিঃ http://www.korea.edu/
কোরিয়া ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি (কাইস্ট) http://www.kaist.edu/html/en/index.html
ইয়নসে ইউনিভার্সিটিঃ http://www.yonsei.ac.kr/eng/
খিয়ংহি ইউনিভার্সিটি http://www.khu.ac.kr/eng/index.jsp
ইহোয়া উইমেন্স ইউনিভার্সিটি http://www.ewha.ac.kr/english/
ইনহা ইউনিভার্সিটিঃ http://eng.inha.ac.kr/
পুসান ইউনিভার্সিটি http://english.pusan.ac.kr/html/00_main/
হাংগুক ইউনিভার্সিটি অফ ফরেন স্টাডিজঃ http://international.hufs.ac.kr/
লেখক- আল জাবের ফয়সাল, হাংগুক ইউনিভার্সিটি অফ ফরেন স্টাডিজ, সিউল, দক্ষিণ কোরিয়া।
যোগাযোগ- faisalaljaber7@gmail.com