রাফিয়া আরশাদ। হিজাব পরা প্রথম মুসলিম নারী বিচারক। ব্রিটেনের মিডল্যান্ডস সার্কিটে ডেপুটি ডিস্ট্রিক্ট জজ হিসেবে গত সপ্তাহে নিয়োগ পেয়েছেন। ৪০ বছর বয়সী এ নারী ১৭ বছর ধরে ব্যারিস্টার হিসেবে আইন পেশায় নিয়োজিত আছেন। বিশ্বব্যাপী অনেক গণমাধ্যম এ খবর প্রকাশ করেছে।
এ নারী বিচারক আইন পেশায় যুক্ত হওয়ার আগে এক স্কলারশিপের সাক্ষাৎকারে হিজাব পরেই অংশগ্রহণ করেন। তার পরিবারের সদস্যরা তাকে হিজাব পরতে নিষেধ করেছিলেন। কিন্তু তিনি তাদের কথায় সায় দেননি। হিজাব পরেই দিয়েছেন স্কলারশিপের সাক্ষাতকার। আর তাতে তিনি সফল হয়েছিলেন। সর্বশেষ গত সপ্তাহে এ হিজাবি নারী ডেপুটি ডিস্ট্রিক্ট জজ হিসেবে নিয়োগ পান।
রাফিয়া আরশাদ মাত্র ১১ বছর বয়স থেকেই তিনি আইন পেশায় ক্যারিয়ার গড়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলেন। তিনি মুসলিম যুবতীদের বলতে চান, তাদের জানা উচিত, তারা মনে মনে নিজেকে যেভাবে গড়ে তুলতে চান সেটা তিনি অর্জন করতে পারবেন। কেননা তার এ ইচ্ছা শক্তি লালন করেই তিনি ১৭ বছর ব্যারিস্টার হিসেবে আইন পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। অতপর তিনি স্বপ্ন দেখার দীর্ঘ ৩০ বছর পর একজন ডেপুটি ডিস্ট্রিক জজ হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। ব্রিটিনের ইতিহাসে তিনিই হিজাব পরা মুসলিম বিচারক।
পাকিস্তানি বংশোদ্ভুত ব্রিটিশ মুসলিম নারী রাফিয়া আরশাদ। সম্প্রতি তিনি ব্রিটেনের মিডল্যান্ড সার্কিটের ডেপুটি ডিসট্রিক্ট জাজ হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, নিঃসন্দেহে এটা আমার জন্য অনেক বিষয়। আমি খুশি এবং অন্যান্য মানুষের সঙ্গে আমার সফলতা শেয়ার করতে পেরে আরও বেশি ভালো লাগছে।’
আমি জানি এ অর্জন শুধু আমার একার নয় বরং এটি সব নারীর বিজয়। এটি শুধু মুসলিম নারীদের জন্যও নয়, বরং যেসব মুসলিম নারী বাস্তবে নিজেদের মধ্যে ইসলামকে লালন করেন তাদের জন্যও এটি অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলেও জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, অনেক নারী ও পুরুষ আমাকে অভিনন্দন জানিয়ে ই-মেইল করছে। অনেক নারী ই-মেইলে জানাচ্ছেন, তাদের ধারণা ছিলো হিজাব পরে ব্যারিস্টার হওয়া যাবে না, বিচারক হওয়ার তো প্রশ্নই উঠে না।
রাফিয়া আরশাদ জানান, ব্রিটেনের মতো উন্নত দেশের বিচারক হতে পারবো জীবনে আমি কল্পনাও করিনি। আমার ইচ্ছা ছিলো ভালো আইনজীবী হওয়ার। তা হতে বেশ কয়েক বছর কাজও করে যাচ্ছিলাম। বিচারক হতে পেরে পরম আনন্দ উপভোগ করছি বলে মনে করতে পারেন।
তিনি আরো জানান, আমার আজকের অর্জন আমার যোগ্যতার চেয়ে বেশি পাওয়া। আমি মনে করি প্রত্যেক নারীরই তাদের যোগ্যতাকে কাজে লাগানো দরকার। বিশেষ করে মুসলিম নারীদের জন্য এটি খুবই জরুরি।
হিজাব পরিধান সম্পর্কে রাফিয়া আরশাদ জানান, ‘২০০১ সালে তিনি যখন ইনস অব কোর্ট স্কুল অব ’ল -এর স্কলারশিপের ইন্টারভিউ দিতে যান তখন তার পরিবারের এক সদস্য তাকে হিজাব না পরে ইন্টারভিউ দিতে পরামর্শ দেন। ওই সদস্য তাকে আরও বলেন, শুধু এই ইন্টারভিউই নয় বরং যদি তুমি হিজাব পরো জীবনে তোমার সফলতা ধীরে ধীরে কমে যাবে। কিন্তু রাফিয়া আরশাদ তার পরিবারের ওই ব্যক্তির পরামর্শ গ্রহণ করেননি।
তিনি বলেন, আমি হিজাব পরেই ইন্টারভিউতে যাই। আমার বিশ্বাস ছিলো, আমি যেখানে ইন্টারভিউ দিতে যাচ্ছি, তারা যদি আমাকে যোগ্য মনে করে তবে ফিরিয়ে দেবে না। সেখানে ইন্টারভিউ দিয়ে আমি সফল হই। তারা আমাকে স্কলারশিপের জন্য মনোনীত করে। হিজাব পরে সেটাই ছিলো আমার জীবনের প্রথম একটি অসামান্য সাফল্য।
উল্লেখ্য তিনি ২০০১ সালে ওয়েস্ট ইয়র্কশায়ার এলাকায় বাস করতেন। পরে ২০০২ সালে ব্যারিস্টার ডিগ্রি অর্জন করেন। ২০০৪ সালে যোগ দেন সেন্ট মেরিস ফেমিলি ল’ চেম্বারে। গত ১৫ বছর ধরে তিনি প্রাইভেট ল চিলড্রেন, ফোর্সড মেরিজ, ফিমেল-জেনিটাল মিউটিলেশনের উপর পেশাগত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেন।
এছাড়াও তিনি ইসলামিক আইনের যে কোনো বিষয়ে আইনগত সমস্যায় সমাধান দিয়ে থাকেন। রাফিয়া আরশাদ ইসলামিক পারিবারিক আইনের উপর বেশ কয়েকটি পাঠ্যবইও লিখেছেন। কি
ব্রিটেনের বহু সাংস্কৃতিক সমাজে বেড়ে উঠেন রাফিয়া আরশাদ। তিনি তার সমাজের জন্যও কাজ করতেন চান। রাফিয়া আরশাদের প্রত্যাশা- ব্রিটেনের মুসলিম তরুণ-তরুণীরা যদি ভালো কিছু করার ইচ্ছা নিয়ে এগিয়ে যায় তবে তারা তা অর্জন করতে সক্ষম হবে। তাদের ইচ্ছা শক্তিই তাদেরকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। ইসলামি আদর্শ লালন-পালনে মুসলিম তরুণ-তরুণীদের জন্য রাফিয়া আশরাদ এক আদর্শ অনুপ্রেরণা। যা তাদের প্রত্যেককে নিজ নিজ সংস্কৃতির পালনে সফল হতে উৎসাহ যোগাবে।