করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ প্রতিরোধে আসন্ন ঈদুল ফিতরের দিন ঈদগাহ বা খোলা জায়গার পরিবর্তে ঈদের নামাজের জামাত কাছের মসজিদে আদায়ের জন্য অনুরোধ জানিয়েছে সরকার। একই সঙ্গে ঈদের নামাজ শেষে কোলাকুলি না করারও অনুরোধ জানানো হয়েছে। ঈদুল ফিতরের জামাত নিয়ে বৃহস্পতিবার (১৪ মে) ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা এক নির্দেশনায় এ অনুরোধ জানানো হয়েছে। ঈদুল ফিতরের জামাতকে সামনে রেখে মোট ১৩টি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
চাঁদ দেখা-সাপেক্ষে আগামী ২৪ বা ২৫ মে দেশে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর উদযাপিত হবে। ঈদের দিন মুসলমানরা মসজিদ কিংবা ঈদগাহে দুই রাকাত ঈদের ওয়াজিব নামাজ আদায় করে থাকেন।
নির্দেশনায় বলা হয়, করোনাভাইরাস প্রার্দুভাবজনিত কারণে সারাদেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা ও জনসমাগমের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। সম্প্রতি সরকার সার্বিক বিবেচনায় কিছু কিছু ক্ষেত্রে বন্ধ ঘোষণার নিষেধাজ্ঞা শিথিল করেছে। এ সময় দেশের শীর্ষ স্থানীয় আলেম ওলেমাগণও পবিত্র রমজানুল মোবারক মাসের গুরুত্ব বিবেচনা করে মসজিদে নামাজ আদায়ের শর্ত শিথিলের জন্য প্রধানমন্ত্রী বরাবর দাবি পেশ করেন। তার পরিপ্রেক্ষিতে গত ৭ মে জোহরের ওয়াক্ত থেকে কিছু নির্দেশনা পালনের শর্তে মসজিদসমূহ সুস্থ মুসল্লিদের উপস্থিতিতে জামায়াতে নামাজের জন্য অনুমতি প্রদান করা হয়।
এতে আরও বলা হয়, ইতোমধ্যে মন্ত্রপরিষদ বিভাগ থেকে উন্মুক্ত স্থানে বড় পরিসরে ঈদের জামায়াত পরিহারের নির্দেশনা প্রদান করে বর্তমানে বিদ্যমান বিধি-বিধান অনুযায়ী ঈদের জামাত আয়োজন সংক্রান্ত নির্দেশনা প্রদান করেছে।
এর ধারাবাহিকতায় জনস্বাস্থ্য বিবেচনায় স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ কর্তৃক জারিকৃত নির্দেশাবলি অনুসরণ করে বিশেষ সতর্কতামূলক বিষয়াদি অনুসরণ করে শর্তসাপেক্ষে ঈদুল ফিতরের নামাজের জামায়াত আদায়ের জন্য অনুরোধ জানিয়েছে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
যেসব শর্তে হবে ঈদের জামাত
• ইসলামী শরিয়তে ঈদগাহ বা খোলা জায়গায় পবিত্র ঈদুল-ফিতরের নামাজের জামায়াত আদায়ের ব্যাপারে উৎসাহিত করা হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে সারাবিশ্বসহ আমাদের দেশে করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে মুসল্লিদের জীবনের ঝুঁকি বিবেচনা করে এ বছর ঈদগাহ বা খোলা জায়গার পরিবর্তে ঈদের নামাজের জামাত নিকটস্থ মসজিদে আদায়ের জন্য অনুরোধ করা হলো। প্রয়োজনে একই মসজিদে একাধিক জামাত অনুষ্ঠিত হবে।
• ঈদের নামাজের জামাতের সময় মসজিদে কার্পেট বিছানো যাবে না। নামাজের আগে সম্পূর্ণ মসজিদ জীবানুনাশক দ্বারা পরিষ্কার করতে হবে। মুসল্লিগণ প্রত্যেকে নিজ নিজ দায়িত্বে জায়নামাজ নিয়ে আসবেন।
• করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধ নিশ্চিতকল্পে মসজিদে ওজুর স্থানে সাবান/হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখতে হবে।
• মসজিদের প্রবেশদ্বারে হ্যান্ড স্যানিটাইজার/হাত ধোয়ার ব্যবস্থাসহ সাবান-পানি রাখতে হবে।
• প্রত্যেককে নিজ নিজ বাসা থেকে ওজু করে মসজিদে আসতে হবে এবং ওজু করার সময় কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে।
• ঈদের নামাজের জামাতে আগত মুসল্লিকে অবশ্যই মাস্ক পরে মসজিদে আসতে হবে। মসজিদে সংরক্ষিত জায়নামাজ ও টুপি ব্যবহার করা যাবে না।
• ঈদের নামাজ আদায়ের সময় কাতারে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে দাঁড়াতে হবে।
• এক কাতার অন্তর অন্তর কাতার করতে হবে।
• শিশু, বয়োবৃদ্ধ, যেকোনো অসুস্থ ব্যক্তি এবং অসুস্থদের সেবায় নিয়োজিত ব্যক্তি ঈদের নামাজের জামায়াতে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না।
• সর্বসাধারণের সুরক্ষা নিশ্চিতকল্পে, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ, স্থানীয় প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণকারী বাহিনীর নির্দেশনা অবশ্যই অনুসরণ করতে হবে।
• করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধ নিশ্চিতে মসজিদে জামাত শেষে কোলাকুলি এবং পরস্পর হাত মেলানো পরিহারের জন্য অনুরোধ করা যাচ্ছে।
• করোনাভাইরাস মহামারি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজ শেষে মহান রাব্বুল আলামিনের দরবারে দোয়া করার জন্য খতিব ও ইমামদেরকে অনুরোধ করা যাচ্ছে।
• খতিব, ইমাম ও মসজিদ পরিচালনা কমিটি বিষয়গুলো বাস্তবায়ন নিশ্চিত করবে।
নির্দেশনায় আরও বলা হয়, এসব নির্দেশনা লঙ্ঘিত হলে স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণকারী বাহিনী সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে স্থানীয় প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণকারী বাহিনী, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং সংশ্লিষ্ট মসজিদের পরিচালনা কমিটিকে উল্লিখিত নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য অনুরোধ জানানো হলো।
এদিন করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতিতে সাধারণ ছুটি ১৭ থেকে ৩০ মে পর্যন্ত বাড়ানোর ঘোষণা দেয়া হয়। ছুটি বাড়ানোর নির্দেশনায় বলা হয়, আসন্ন ঈদুল ফিতরের জামাতের ক্ষেত্রে বিদ্যমান বিধি-বিধান প্রযোজ্য হবে, অর্থাৎ ঈদের জামাতের ক্ষেত্রে কড়াকড়ি থাকবে।
বৃহস্পতিবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে বিভিন্ন নির্দেশনা-সাপেক্ষে ছুটি বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। সেখানে বলা হয়, ঈদুল ফিতরের নামাজের ক্ষেত্রেও বর্তমানে বিদ্যমান বিধি-বিধান প্রযোজ্য হবে। উন্মুক্ত স্থানে বড় জমায়েত পরিহার করতে হবে। ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করবে।
চাঁদ দেখা-সাপেক্ষ আগামী ২৪ বা ২৫ মে দেশে মুসলমানদের সবচেয় বড় ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপিত হবে। ঈদের দিন মসজিদ কিংবা ঈদগাহে দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ আদায় করেন মুসলমানরা।
করোনার কারণে সরকার প্রথমে ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করে। পরে আরও সাত দফায় ছুটি বাড়িয়ে ৩০ মে পর্যন্ত করা হয়েছে। কিন্তু দেশে এখনও করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির উন্নতি নেই, বরং দিন দিন অবনতির দিকে যাচ্ছে।
তবে অর্থনৈতিক চাপ মোকাবিলায় ইতোমধ্যে জরুরি সেবা সংশ্লিষ্ট সরকারি অফিস সীমিত পরিসরে খুলে দেয়া হয়েছে। এছাড়া স্বাস্থ্যবিধি মানা সাপেক্ষে দোকান, শপিংমল, কারখানা, গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিসহ অন্যান্য শিল্প ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সীমিত আকারে খুলে দেয়া হয়েছে। তবে বন্ধ রয়েছে গণপরিবহন।