করোনায় সংগনিরোধ প্রবাসীরা। টানা কোয়ারেন্টাইনে থেকে অলস সময় কাটছে তাদের। দেশে থাকা পরিবারকে টাকা কড়ি কেউই পাঠাতে পারছেন না। সব বন্ধ, কাজও নেই। এমতাবস্থায় সরকারের পক্ষ থেকে প্রবাসীদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদানের দাবি তুলেছেন বাংলাদেশিরা।
বিশ্বকে স্তব্ধ করে দিয়েছে প্রাণঘাতি করোনাভাইরাস। ছাড়ছে না কাউকে। পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রতিটি দেশের সরকার রয়েছে হার্ডলাইনে। এমন বাস্তবতায় আক্রান্ত দেশের জনগণ সংগনিরোধ কোয়ারেন্টাইনে বাস করছেন।
আক্রান্ত দেশের সকার প্রধানরা তাদের দেশের সাধারণ জনগণের খাদ্য-নিরাপত্তা নিশ্চিতের লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রণোদনা দিয়ে আসছে। বাংলাদেশের সরকারও পিছিয়ে নেই। দেশে দেশে সুযোগ সন্ধানীরাও যেন বসে নেই। দলীয় পরিচয়ে তৎপর তারা। নিম্ন আয়ের মানুষ ছুটছে ত্রাণের খোঁজে।
এমন পরিস্থিতিতে প্রবাসীর অনেক পরিবারে চলছে চাঁপা কান্না। মালয়েশিয়ার মালাক্কায় থাকেন শহিদ মিয়া, গতকাল রাতে ফোন করে জানালেন ‘এটা কোনো জীবন হলো। সংসার চালাতে যুদ্ধ করতে হচ্ছে। চক্ষুলজ্জায় কষ্টগুলো প্রকাশ করা যায় না। ওই যে আমরা মধ্যবিত্ত ঘরের সন্তান প্রবাসী হয়েছি। আমাদের কোনো কষ্ট নেই। আছে শুধু সুখ। কিন্তু এর আড়ালে আমরা যে কত কষ্টে জীবনযাপন করি, তা বোঝানো যায় না। কেউ বোঝারও চেষ্টা করে না’।
সারাবিশ্বই স্থবির করোনার আঘাতে। এতে বেকার হয়ে পড়েছেন বিভিন্ন দেশে থাকা লাখ লাখ প্রবাসী। এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বিদেশের মাটিতে মারা গেছেন অনেকে। সবচেয়ে বেশি বিপদে আছেন যাদের বৈধ ভিসা নেই। এদের বড় অংশই কাজ ও আয়ের অভাবে না খেয়ে দিনাতিপাত করছেন। প্রবাসীরা হলো রেমিট্যান্স যোদ্ধা। দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখে আমাদের প্রবাসীরাই।
বাংলাদেশের অনেক জেলায় বহুসংখ্যক পরিবার রয়েছে যারা একমাত্র বৈদেশিক আয়ের উপর নির্ভরশীল। প্রতি মাসে প্রবাস হতে টাকা আসে আর সেই টাকায় ওসব পরিবারের জীবন যাপন চলে।
প্রবাসীনির্ভর পরিবারগুলো করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে সময় পার করছে। তাদের অনেকেই পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী। অনেক সংসারের চাকা ঘুরে প্রবাসের টাকায়। তাই পরিবারের উপার্জক্ষম ব্যক্তিকে নিয়ে চিন্তিত স্বজনরা।
পরিবাররা সাধারণত মধ্যবিত্ত বা উচ্চ মধ্যবিত্ত। ওই পরিবারগুলো প্রায় সময় সমাজের কিছু কিছু উন্নয়নেও ভূমিকা রাখে। অথচ আজ হয়তো যারা বাসা ভাড়া থাকে তাদের বাসা ভাড়া নিয়ে চিন্তিত, তাদের পারিবারিক খরচ করতে হয়ত খুব হিমশিম খাচ্ছে। ইউরোপ, আমেরিকা, মধ্যেপ্রাচ্যর বিভিন্ন দেশে শ্বাসরুদ্ধকর সময় পার করছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা।
টানা লগডাউনে থাকতে হচ্ছে তাদের। এতে করে অনেকেই উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছেন। কারণ করোনায় আক্রান্ত হলে তাদের মরদেহ পরিবারের কাছে পৌঁছাবে না। শুধুমাত্র একটা ডেথ সার্টিফিকেটে ভরসা করতে হবে।
একদিকে প্রবাসীরা বিভিন্ন দেশে শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থায় দিনাতিপাত করছেন, অন্যদিকে তাদের স্বজনরা দেশে থেকেও শান্তিতে নেই। প্রিয় মানুষগুলোর জন্য তাদের প্রতিটা মুহূর্ত কাটছে নানা চিন্তায়।
পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত ইচ্ছে করলেই প্রবাসীরা দেশের স্বজনদের কাছে আসতে পারবেন না। এমনকি আক্রান্ত হলে তাদের সেবা করার সুযোগ থাকছে না। মহামারি করোনাভাইরাস আমাদের প্রবাসীনির্ভর পরিবার গুলোর অবস্থা খারাপ করে ফেলেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই কঠিন পরিস্থিতিতে প্রবাসী নির্ভরশীল পরিবারগুলো খুবই কষ্টে দিনযাপন করছে। কর্মহীন প্রবাসীরা দেশে টাকা পাঠাতে পারছে না। দেশের রিজার্ভে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ নিতে হবে।
এছাড়া সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে কূটনৈতিক যোগাযোগ বাড়ানোসহ বিকল্প কর্মসূচি নিয়ে ভাবতে হবে। অন্যদিকে প্রবাসীদের এই দূরবস্থা রেমিট্যান্সেও প্রভাব পড়েছে। গত দুই মাসে ৩৬ কোটি ডলার রেমিট্যান্স কমেছে। যা স্থানীয় মুদ্রায় তিন হাজার কোটি টাকা। এ অবস্থায় প্রবাসীদের জন্য সংশ্লিষ্ট দেশের দূতাবাসের মাধ্যমে সহায়তার কথা বলছেন, অর্থনীতিবিদ ও এ খাতের সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে বিভিন্ন দেশে থাকা প্রবাসীদেরকে দেওয়া হচ্ছে খাদ্য সহায়তা। এ সহায়তা কেউ পাচ্ছেন আবার কেউ পাচ্ছেন না এমন অভিযোগ রয়েছে।
কিন্তু এই সহায়তা নির্দিষ্ট একটি আবেদনের মধ্যেমে দেয়া হচ্ছে। এমনটি জানালেন সংশ্লিষ্টরা। মালয়েশিয়া বাংলাদেশ হাইকমিশনের খাদ্য সহায়তা কার্যক্রম চলছে গত দু সপ্তাহ ধরে। সহায়তা পাওয়া অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে স্ট্যাটাসও দিয়েছেন।
রাজধানী কুয়ালালামপুর শহর ও সেলাঙ্গুরে মুভমেন্ট কন্ট্রোল কোয়ারেন্টাইনে থাকা প্রবাসীদের ফোন করে দূতাবাসের খাদ্য সহায়তা কাজে নিয়োজিত মালয়েশিয়ার এমটি ইউসির ভলেন্টিয়াররা ঘরে ঘরে পৌছে দিচ্ছে খাদ্য। কেউ কেউ আবেদন করে সহায়তা পাচ্ছেন না এমনটি বললেন অনেকে।
সরেজমিন দেখা গেছে, রাজধানী শহরে যারা বাস করছেন তারা কোনো না কোনোভাবে সহায়তা পাচ্ছেন। এ সহায়তা অস্বীকারের কোনো সুযোগ নেই। এমনটি ধারণা সহায়তা প্রদানকারী অনেকেরই।
দূতাবাস এ পর্যন্ত প্রায় ২ হাজারেরও অধিক বাংলাদেশি নাগরিকদের খাদ্য সহায়তা পৌছে দেয়া হয়েছে। একইভাবে অন্যদের নিকট পর্যায়ক্রমে খাদ্য সহায়তা পৌছেঁ দেওয়া হবে বলে জানালেন সংশ্লিষ্টরা।
রাজধানী শহর ছাড়া, মালাক্কা, জহুরবারু, পেনাং, তেরেঙ্গানু, কোয়ান্তান, ক্যামেরুন হাইল্যান্ডের পাহাড় জঙ্গলে অনেক প্রবাসী কাজ করছে তাদের খোঁজ কে রাখে? আবার অনেকে আছেন নাম দস্তখত জানেনা, ফোন করতে হলে অন্য জনের সহায়তা নিতে হয় দেশে টাকা পাঠাতেও সহযোগিতা নিতে হয় অন্য জনের। ওই সংখ্যাটা শুধু বুঝে কাজ আর মাস শেষে বাড়িতে টাকা পাঠানো। ওদের সংখ্যাও নেহাত কম নয়।
ওরা না খেয়ে কোথায় কোথায় পড়ে রয়েছে তাদের খোঁজে বের করে সহায়তার দাবি তুলেছেন অনেকে। পাশাপাশি দেশে থাকা তাদের পরিবারের সুরক্ষা নিশ্চিত ও খাদ্য সহায়তার দাবি তুলেছেন সচেতন প্রবাসীরা।