উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ার পর দেশটিতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে গঠিত একটি দল পাঠিয়েছে চীন। ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট চীনের তিন কর্মকর্তা বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
কিম জং উনের অসুস্থতা নিয়ে বিশ্ব গণমাধ্যমে খবর আসার পরপরই দেশটিতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও কর্মকর্তা দল পাঠাল চীন। কিমের শারীরিক অবস্থা নিয়ে চীনা এই দলের সফর কি ধরনের ইঙ্গিত দিচ্ছে তা তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত হতে পারেনি রয়টার্স।
চীনের দুই ব্যক্তি বলেছেন, চীনা কমিউনিস্ট পার্টির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের জ্যেষ্ঠ এক সদস্যের নেতৃত্বে বিশেষজ্ঞটি দলটি বৃহস্পতিবার দেশ ছেড়েছে। পার্টির এই শাখাই প্রতিবেশি উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সব ধরনের দেন-দরবার সম্পন্ন করে থাকে।
তবে বিষয়টি স্পর্শকাতর হওয়ায় ওই দুই ব্যক্তি পরিচয় প্রকাশে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। শুক্রবার চীনা কমিউনিস্ট পার্টির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তা সফল হয়নি। এমনকি চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও তাৎক্ষণিকভাবে এ ব্যাপারে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
দক্ষিণ কোরিয়াভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ডেইলি এনকে গত সপ্তাহে এক প্রতিবেদনে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন গত ১২ এপ্রিল কার্ডিওভাসকুলারের অস্ত্রোপচার করেছেন বলে খবর দেয়। উত্তর কোরিয়ার অজ্ঞাত সূত্রের বরাত দিয়ে কিমের অসুস্থতার এই খবর দেয় ডেইলি এনকে।
অস্ত্রোপচারের পর কিম মারাত্মক অসুস্থ বলে এই প্রতিবেদন প্রকাশের পর দক্ষিণ কোরিয়ার সরকারি কর্মকর্তা ও চীনের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের কর্মকর্তারা নড়েচড়ে বসেন। তারা ডেইলি এনকের এই খবর সত্য নয় বলে চ্যালেঞ্জও করেন। দক্ষিণ কোরিয়ার কর্মকর্তারা বলেছেন, তারা উত্তর কোরিয়ায় অস্বাভাবিক কোনো কার্যক্রমের ইঙ্গিত পাননি।
এদিকে, কিমের অসুস্থতার খবর নিয়ে বৃহস্পতিবার প্রথমবারের মতো কথা বলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেন, আমি মনে করি, এই খবরটি মিথ্যা। তবে উত্তর কোরিয়ার নেতার সঙ্গে তার যোগাযোগ হয়েছে কিনা সেব্যাপারে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান ট্রাম্প।
শুক্রবার দক্ষিণ কোরিয়ার একটি সূত্র রয়টার্সকে বলেছে, তাদের গোয়েন্দারা জানিয়েছেন- কিম এখনও বেঁচে আছেন এবং শিগগিরই তিনি জনসম্মুখে আসবেন। তবে উত্তর কোরিয়ার এই নেতার বর্তমান শারীরিক অবস্থা এবং চীনের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হয়নি ওই সূত্র।
মার্কিন গোয়েন্দাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র রয়টার্সকে বলেছেন, কিমের শারীরিক সমস্যা হয়েছে। তবে তিনি গুরুতর অসুস্থ অথবা জনসম্মুখে আসার মতো অবস্থা আছেন কিনা সেব্যাপারে এখনই জানা যাচ্ছে না।
এদিকে, এ ব্যাপারে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র মন্তব্য করেননি। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওকে কিম জং উনের স্বাস্থ্যের ব্যাপারে প্রশ্ন করেছিল ফক্স নিউজ। তিনি বলেন, আমার কাছে এখন পর্যন্ত কোনো তথ্য নেই; যা আমি আপনাদের জানাতে পারি। কিন্তু মার্কিন জনগণের জানা উচিত যে, আমরা এ বিষয়টি খুবই নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি।
বিশ্বে উত্তর কোরিয়ায় একমাত্র রাষ্ট্র; যারা অত্যন্ত গোপনীয় এবং বিশ্ব থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন। এমনকি নেতাদের সুস্থতা, অসুস্থতার মতো বিষয়কেও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা হিসাবে দেখা হয়। কিম জং উন কোথায় আছেন অথবা তার শারীরিক অবস্থা বর্তমানে কেমন সেব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারেনি রয়টার্স।
তবে উত্তর কোরিয়ার গণমাধ্যমে কিম জং উনকে সর্বশেষ দেখা যায় গত ১১ এপ্রিল। ওইদিন রাষ্ট্রীয় একটি বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন তিনি। এমনকি গত ১৫ এপ্রিল তার দাদা কিম ইল সাংয়ের জন্মদিনের অনুষ্ঠানেও তিনি অংশ নিয়েছেন কিনা সেব্যাপারেও জানায়নি উত্তর কোরিয়ার গণমাধ্যম। কিম জং উনের দাদার এই জন্মদিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উৎসব হিসাবে দেশটিতে উদযাপন করা হয়।
৩৬ বছর বয়সী উত্তর কোরিয়ার এই নেতাকে গণমাধ্যমে অতীতেও আসতে দেখা যায়নি। ২০১৪ সালেও একবার এক মাসের বেশি সময় তিনি গণমাধ্যম থেকে দূরে ছিলেন। পরে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে একদিন তাকে দেখা যায়। অতিরিক্ত ধূমপান, পারিবারিকভাবে কার্ডিওভাসকুলারের ইতিহাস এবং মুটিয়ে যাওয়ার কারণে তার অসুস্থতা নিয়ে বেশি গুঞ্জন ছড়িয়েছে।
২০০৮ সালে কিম জং উনের বাবা কিম জং ইল স্ট্রোক করেন। সেই সময়ও দক্ষিণ কোরিয়ার গণমাধ্যম খবর দেয় যে, দেশটিতে চীনা এবং ফরাসী চিকিৎসকরা কিম জং ইলের চিকিৎসা করেন।