Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

malaysia-bangladeshiকরোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে কঠিন চ্যালেঞ্জে রয়েছে মালয়েশিয়া প্রবাসীরা। কোয়ারেন্টাইনে থাকা প্রবাসীরা কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। ঘরে বন্দি, দোকান-ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলছে না। কাজ নেই, আয়ের পথও বন্ধ। এমন পরিস্থিতিতে নিজেদের খরচ মেটানোই দায় হয়ে পড়েছে। খুব কষ্টে দিনাতিপাত করছেন ব্র্যান্ডিং বাংলাদেশের সারথিরা।

এ কষ্টের কথা বলতেও পারছেন না কাউকে। এছাড়া তাদের উপার্জনের ওপর নির্ভর করে চলে দেশে থাকা পরিবার। পরিজনদের চাওয়া-পাওয়ার অনেকটাই নির্ভর করে প্রবাসীদের ওপর। প্রাণঘাতী করোনায় লন্ডভন্ড করে দিয়েছে প্রবাসীদের আশা আকাঙ্খা। এ প্রাণঘাতী থেকে উওরণ কবে হবে কেউ জানে না। তবে সচেতনতাই এ মরণব্যাধি থেকে পরিত্রাণ পেতে পারে বলে বলছেন বিশিষ্টজনরা।

chardike-ad

নরসিংদীর সোহাগ, চার বছর ধরে মালয়েশিয়ায় থাকেন। একটি পার্সেল কোম্পানিতে কাজ করেন। মার্চ থেকেই কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। বেকার সময় পার করছে। ঘর থেকে বের হতে পারেন না। আগের কিছু পাওনা অর্থ কারখানার মালিক দিয়েছিল, তা দিয়েই ২০ দিন চলছে।

তিনি বলেন, মা-বাবা দেশে আছে। তাদের খরচ পাঠানো দরকার। কিন্তু কাজ বন্ধ নিজেরই থাকা খাওয়ার খরচ নাই, দেশে টাকা পাঠাব কিভাবে। এছাড়া সব বন্ধ, বের হলে পুলিশ ঝামেলা করে। তাই বাইরে যাই না, ঘরেই থাকছি। খুব সমস্যায় আছি।

malaysia-bangladeshiসালমান কাজ করেন কন্সট্রাকশনে। তিনি জানান, করোনাভাইরাসের কারণে গত ১৮ মার্চ থেকে দেশটিতে লকডাউন চলছে। অনির্দিষ্টকালের জন্য দোকানপাট অফিস-আদালত ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। ঘরে বসে আছে সবাই। সবধরনের প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় এখানকার প্রবাসীদের অনেকের কাজ নেই। খুব কষ্টে দিন পার করছি। এ অবস্থা আর কিছু দিন চললে এ দেশে থাকাই দায় হয়ে যাবে বলছেন সালমান।

বাংলাদেশ সরকার সংকটময় সময়ে যে প্রণোদনা ঘোষণা করেছেন তার সাথে যুক্ত করে এমন পরিস্থিতিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মরত প্রবাসীদের পরিবারে বিশেষ বরাদ্দের দাবি উঠেছে।

মালয়েশিয়া প্রবাসীরা বলছেন, রেমিট্যান্সে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল ছিল। বর্তমানে টাকা পাঠানো প্রায় বন্ধ রয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় দেশে থাকা প্রবাসী পরিবারে বিশেষ বরাদ্দ ঘোষণা দিতে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি দাবি জানিয়েছেন তারা।

বাংলাদেশ সরকারও দেশের নাগরিক ও করোনায় আক্রান্ত বিভিন্ন দেশে থাকা প্রবাসীদের অর্থ ও সার্বিক সহায়তায় কাজ করছে। এক্ষেত্রে অভিযোগও করেছেন অনেকে। সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতার কথা জানাতে গেলে পাওয়া যাচ্ছে না তাদের। কোয়ারেন্টাইনে থাকা অনেক বাংলাদেশি বিভিন্ন জায়গা থেকে টেলিফোনে জানান দিচ্ছেন তাদের বর্তমান সমস্যার কথা।

অনেকে বলছেন, দূতাবাস তাদের সাথে যোগাযোগ করার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত কেউ মিশন থেকে খোঁজ নেয়নি। আবার কেউ কেউ বলছেন, দূতাবাসের দেয়া খাদ্য সামগ্রী পেয়েছেন তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। দূতাবাসের ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে অনেকে বলছেন, এটা দেয়ার চেয়ে না দেয়াই ভালো ছিল। মালয়েশিয়া প্রবাসীদের চাইতে দেশে ফকির মিসকিনরাই ভালো। দূতাবাসের এমন সহযোগিতা প্রবাসীরা আশা করেননি।

malaysia-bangladeshiসাধারণ প্রবাসীরা বলছেন, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন বা ব্যক্তি বিশেষে যারা সাধারণ প্রবাসীদের সেবায় এগিয়ে এসেছেন তারাই ভালো। এ বিষয়ে দূতাবাসে যোগযোগ করা হলে মিশনের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোয়ারেন্টাইনে থাকা বাংলাদেশিদের সঙ্গে ইচ্ছে করলেই যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। কারণ মালয়েশিয়া সরকারের বেঁধে দেয়া ক্রাইটেরিয়ার মাধ্যমেই যোগযোগ অব্যাহত রয়েছে এবং দূতাবাস থেকে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ চলমান রয়েছে।

এছাড়া প্রবাসীদের সাহায্যে এগিয়ে এসেছেন দেশটিতে বসবাসরত ব্যবসায়ী, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও ব্যক্তিগতভাবেও খাদ্য সামগ্রী বিতরণ অব্যাহত রেখেছেন অনেকে।

মালয়েশিয়ায় গত ১৮ মার্চ থেকে চলছে মুভমেন্ট কন্ট্রোল। আর এ কন্ট্রোল ফের বাড়ানো হয়েছে আগামী ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত। চলমান পরিস্থিতিতে সংকট উওরণে দেশটির সরকার তার দেশের নাগরিক, শিল্প প্রতিষ্টান ও ব্যবসায়ীদের শ্রেণি বিভিন্ন প্যাকেজ প্রণোদনা ঘোষণা করেছে। ঘোষণার পাশাপাশি দেশটির নাগরিক ও ব্যবসায়ীরা সুফল পেতে শুরু করেছে।

পাশাপাশি বর্ধিত মুভমেন্ট কন্ট্রোল অর্ডার (ইএমসিও) এর আওতাধীন কোয়ারেন্টাইনে থাকা প্রবাসীদের খাবারসহ প্রয়েজনীয় জিনিসপত্র সরবরাহে প্রতিটি দূতাবাসের দায়িত্ব। এরপরেও, যদি তাদের কোনো সহায়তার প্রয়োজন হয় তবে তারা এমসিও অপারেশন সেন্টারে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।

এদিকে দেশটিতে নতুন করে আরও ১৮৪ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। অপরদিকে, নতুন করে আরও তিনজন করোনায় প্রাণ হারিয়েছে। এ পর্যন্ত ৪ হাজার ৫৩০ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছে।

গত ২৪ ঘণ্টায় তিনজনের মৃত্যুতে দেশটিতে এখন পর্যন্ত মোট মৃত্যুর সংখ্যা ৭৩। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে, দেশটিতে করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে ৪৪ শতাংশই ইতোমধ্যে সুস্থ হয়ে উঠেছেন। এখন পর্যন্ত চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১ হাজার ৯৯৫ জন। অপরদিকে ৭২ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তারা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।