মরণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন আরও ৪ জন। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ৩৪ জনে। এছাড়া করোনায় নতুন করে সংক্রমিত হয়েছেন ১৩৯ জন। এ নিয়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬২১ জনে।
রোববার (১২ এপ্রিল) দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস সংক্রান্ত নিয়মিত হেলথ বুলেটিনে এ তথ্য জানানো হয়। অনলাইনে বুলেটিন উপস্থাপনকালে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. সানিয়া তাহমিনা। নিজের বাসা থেকে যুক্ত হন রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা।
ডা. ফ্লোরা জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় মোট ১ হাজার ২৫১টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এতে ১৩৯ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। ফলে মোট আক্রান্তের সংখ্যা হয়েছে ৬২১। আক্রান্তদের মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও চার জন মারা গেছেন। ফলে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ৩৪ জনে। নতুন করে যারা মারা গেছেন তাদের মধ্যে তিনজন পুরুষ এবং একজন নারী। তাদের মধ্যে ৩০ থেকে ৪০ বছর বয়সী দুজন, ৬০ বছর বয়সী একজন এবং সত্তরোর্ধ্ব একজন রয়েছেন। চারজনের মধ্যে দুজন ঢাকায় এবং দুজন ঢাকার বাইরে মারা যান।
এছাড়া যারা আগে থেকে আক্রান্ত, তাদের মধ্যে আরও তিনজন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। ফলে মোট সুস্থ হয়েছেন ৩৯ জন। নতুন যারা সুস্থ হয়েছেন তাদের মধ্যে দুজন নারী ও একজন পুরুষ। সুস্থ হয়ে ওঠা তিনজনের একজন চিকিৎসক। তিনি রোগীকে চিকিৎসা দেয়ার সময় আক্রান্ত হয়েছিলেন।
আইইডিসিআর পরিচালক জানান, দেশে মোট যে ৬২১ জন আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের মধ্যে রাজধানী ঢাকার ৫০ শতাংশ এবং ঢাকা বিভাগের অন্যান্য জেলায় ৩৫ শতাংশ। তৃতীয় সর্বোচ্চ ৬ শতাংশ চট্টগ্রাম বিভাগের।
বুলেটিনে বলা হয়, বর্তমানে সারাদেশে মোট ২০ হাজার ৫২৫ জন কোয়ারেন্টাইনে আছেন। তাদের মধ্যে হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন ১৯ হাজার ১১১ জন এবং প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে এক হাজার ৪১৪ জন আছেন।
ডা. ফ্লোরা বলেন, দেশে নতুন করে চার জেলায় করোনাভাইরাস সংক্রমিত হয়েছে। জেলা চারটি হলো লক্ষ্মীপুর, লালমনিরহাট, ঠাকুরগাঁও ও ঝালকাঠি। তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এ চারটি জেলায় যারা নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন তারা গত এক সপ্তাহের মধ্যে রাজধানী ঢাকা কিংবা নারায়ণগঞ্জ থেকে সেখানে গিয়েছেন। এ কারণেই আমরা বারবার সতর্ক করছি যে এ সময় আপনারা কেউ ভ্রমণ করবেন না।
করোনার বিস্তাররোধে তিনি সবাইকে বাড়িতে থাকার এবং স্বাস্থ্য বিভাগের পরামর্শ মেনে চলার আহ্বান জানান।
গত ডিসেম্বরের শেষ দিকে চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে বৈশ্বিক মহামারিতে পরিণত করোনাভাইরাসে বিশ্বজুড়ে আক্রান্তের সংখ্যা এখন পর্যন্ত প্রায় ১৮ লাখ। মারা গেছেন এক লাখ ৮ হাজারেরও বেশি মানুষ। তবে চার লাখের মতো রোগী ইতোমধ্যে সুস্থ হয়েছেন।
গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সন্ধান পাওয়া যায়। এরপর প্রথম দিকে কয়েকজন করে নতুন আক্রান্ত রোগীর খবর মিললেও গত ক’দিনে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে এ সংখ্যা। সবশেষ হিসাবে দেশে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ৬২১। মারা গেছেন ৩৪ জন।
প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে সাধারণ ছুটি ঘোষণার পাশাপাশি নানা পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে; যার মূলে রয়েছে মানুষে মানুষে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা। মানুষকে ঘরে রাখতে রাজপথের পাশাপাশি পাড়া-মহল্লায় টহল দিচ্ছে সশস্ত্র বাহিনী, র্যাব ও পুলিশ।