করোনাভাইরাস সঙ্কটে প্রবাসে অবৈধ ও কর্মহীন বাংলাদেশিরা বেশি কষ্টে আছেন বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন৷ অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস, আর্থিক দূরস্থার কারণে নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশীদের মৃত্যুহার বেশি বলে মনে করেন তিনি৷
প্রবাসে কতজন বাংলাদেশী করোনায় মারা গেছেন তার সঠিক সংখ্যা এখনো সরকারের কাছে নেই৷ এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এনিয়ে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় কাজ করছে৷ প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় ৫ এপ্রিল এক বৈঠকে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, বিপদগ্রস্ত প্রবাসীদের দেশে ফেরত আনা হবে৷ এজন্য দূতাবাসগুলোর চাহিদা অনুযায়ী চার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে৷ প্রাথমিকভাবে কুয়েত থেকে ৩১৬ জনকে ফেরত আনা হবে৷ অন্যদিকে দক্ষিণ কোরিয়ায় কর্মরত ১৫০ জন কর্মী ও ২৬ জন শিক্ষার্থীকেও বাংলাদেশ বিমানের একটি চার্টার্ড ফ্লাইটে দেশটিতে ফেরত পাঠানো হবে৷ তারা এখন বাংলাদেশে অবস্থান করছেন৷
প্রবাসে কতজন বাংলাদেশী করোনায় আক্রান্ত এবং কতজন মারা গেছেন তার সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য তাদের কাছে নেই৷ ডয়চে ভেলেকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, দূতাবাসগুলো তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করছে৷ প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, তাদের হাতে ৬০ জনের মতো মৃত্যুর তথ্ আছে৷ তবে বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম বিভিন্ন সূত্র থেকে পেয়ে এ পর্যন্ত এক শ’রও বেশি বাংলাদেশীর মৃত্যর খবর প্রকাশ করেছে৷ বাংলাদেশীরা যেসব দেশে মারা গেছেন, তার মধ্যে আছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব, ইটালি এবং কাতার৷ যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে বেশি বাংলাদেশি মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে৷ ৪০ জনের বেশি হবে৷
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘‘প্রবাসীদের মধ্যে যারা ইরেগুলার অথবা চাকরিহীন, তারা সবচেয়ে বেশি কষ্টে আছে৷যেমন, সিঙ্গাপুরে যারা আমাদের রেগুলার জবে আছে তারা ফুল স্যালারি পাচ্ছেন৷ তারা ভালো আছেন৷ সৌদি আরব তিনমাস ভিসা এবং আকামা বাড়িয়ে দিয়েছে৷ তবে অনেকেই সঙ্কটে আছেন৷ খাবার সংকট, থাকার সংকট৷ আমরা দূতাবাসের মাধ্যমে তাদের জন্য অর্থ বরাদ্দ দিয়েছি৷ আর বিভিন্ন দেশকে সাহায্যের অনুরোধ করেছি৷”
নিউইয়র্কে বাংলাদেশীদের বেশিহারে মৃত্যুর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘ওখানে যারা আছেন তাদের একটি অংশ থাকার জায়গার সঙ্কটে আছেন৷ গাদাগাদি করে থাকেন৷ তারা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে রবাস করেন৷ আর যা আয় করেন তা সব খরচ করে ফেলেন৷ হাতে কোনো টাকা পয়সা থাকে না৷ আবার তারা নিয়ম-কানুনও মানতে চান না৷ ডাক্তাররা বলেন, কিন্তু তারা সেটা কেয়ার করেন না৷”
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মনে করেন, ‘‘আগামীতে যে প্রবাসীরা রেগুলার জবে আছেন তারাও সঙ্কটে পড়তে পারেন৷ তারা যেখানে কাজ করেন সেইসব প্রতিষ্ঠান টিকে না থাকলে তারা টিকেবেন কিভবে? বিশেষ করে অনেক বাংলাদেশী বিদেশে হোটেল-রোস্তোরাঁয় কাজ করেন৷ আবার তারা পর্যটন খাতেও কাজ করেন৷ এখন এগুলো তো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে৷ সেখানে বাংলাদেশীদের রেগুলার জব থাকলেও তারা সঙ্কটে পড়বেন৷”
পরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, বিভিন্ন দূতাবাসের উদ্যোগে অর্থ সহায়তার বাইরেও প্রবাসীদের খাদ্য সহায়তা দেয়া হচ্ছে৷ বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরব ও জর্ডানে বিপদগ্রস্ত প্রবাসীদের খাদ্য সহায়তা দেয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি৷ তিনি বলেন, ‘‘তারা যাতে দুবেলা খেতে পারেন, আমরা সেই ব্যবস্থা করছি৷”
যে প্রবাসীরা করোনার কারণে চাকরিচ্যূত বা ছাঁটাই হবেন তাদেরও আর্থিক সহায়তার উদ্যোগও নেয়া হয়েছে বলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান৷ যাদের দেশে ফিরিয়ে আনা হবে, তাদের পুনর্বাসনের জন্য ব্যাংক লোনসহ আরো বিশেষ উদ্যোগের পরিকল্পনাও রয়েছে সরকারের৷
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মনে করেন, বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতি এখনো অত গুরুতর নয়৷ করোনা-সংকট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘এটা সারা বিশ্বের সঙ্কট৷ সবাই সবাইকে সহযোগিতা না করলে সঙ্কট মোকাবেলা কঠিন হবে৷”
সূত্র : ডয়চে ভেলে