করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বাংলাদেশি চিকিৎসক রেজা চৌধুরী মারা গেছেন। বুধবার রাত ১১টা ৩০ মিনিটের দিকে সবাইকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে চলে যান তিনি। জানা গেছে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এ বাংলাদেশি যুক্তরাষ্ট্রের লং আইল্যান্ডের নর্থ শোর ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। নিউইয়র্কের পার্কচেস্টার সাবওয়ে সংলগ্ন ১৯৫৭ ওয়েস্টচেস্টার এভিনিউতে তার চেম্বার ছিল।
তিনি এই দুর্যোগের সময়ও চেম্বারে নিয়মিত রোগীদের সেবা দিতেন। ড. রেজা সংক্রমণ রোগ বিশেষজ্ঞ। গত ২০ বছরেরও বেশি সময় নিউইয়র্কের ব্রঙ্ক শহরে নিয়মিত প্র্যাকটিস করতেন।
একইদিন যুক্তরাষ্ট্রে কৃষিবিদ শাহানা তালুকদার আখি নামে এক প্রবাসী বাংলাদেশি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। নিউউয়র্কের লং আইল্যান্ড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন তিনি। কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনের দপ্তর সম্পাদক কৃষিবিদ এম এম মিজানুর রহমান এ তথ্য জানিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাসে বুধবার আরও চারজন প্রবাসী বাংলাদেশি মারা গেছে। তারা হলেন- আমেনা বেগম, আবদুস সামাদ, হারুনর রশিদ, কাজী আবু রাশেদ। এ নিয়ে দেশটিতে ৯৫ বাংলাদেশির করোনায় মৃত্যু হলো।
এ ছাড়া আরও ১৬ জনের শরীরে করোনার উপস্থিতি ধরা পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ১১ ভারতীয়র মধ্যে ১০ জনই পুরুষ। বাকি একজন নারী। এ ছাড়া যারা মারা গেছে, তাদের মধ্যে ১০ জন নিউইয়র্ক এবং নিউ জার্সির। তাদের মধ্যে চারজন নিউইয়র্ক শহরের ট্যাক্সিচালক। একজন ফ্লোরিডার নাগরিক।
লকডাউন জারির আগে নিউইয়র্কে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার খবরে সবাই যখন আতঙ্কিত, তখনো প্রবাসীরা কোনো ধরনের সচেতনতা, প্রচার বা প্রস্তুতিতে যোগ দেননি। নিউইয়র্কে বাংলাদেশি সংগঠন আছে কয়েক’শ। সংগঠনগুলোর অনেকে করোনার প্রাদুর্ভাবের সময়ও একসঙ্গে নির্বাচনী প্রচার থেকে শুরু করে চায়ের আড্ডায়, রেস্তোরাঁয় বসে সভা-সমাবেশ করেছেন। ফলে এখন অনেকেই ভুলের মাশুল দিচ্ছেন বলে মনে করা হচ্ছে।
লকডাউন শুরুর পর নিউইয়র্কে প্রধান প্রধান বাংলাদেশি মসজিদগুলো কার্যত বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপরও বেশ কিছু এলাকায় জামাতে নামাজ হয়েছে। তাবলিগসহ অন্যান্য ধর্মীয় সমাবেশ হয়েছে। এসব থেকে বাংলাদেশিদের মধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। আক্রান্ত লোকজনের মাধ্যমে নানাভাবে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় স্বদেশিদের মধ্যে মৃত্যুর সংখ্যাও বেড়েছে।
বুধবার রাত পর্যন্ত নিউইয়র্ক নগরীতে মোট মৃত্যু ৪ হাজার ২৬০ রেকর্ড করা হয়েছে। মৃতের এ সংখ্যাটি প্রকৃত সংখ্যা নয় বলে মেয়র ডি ব্লাজিও নিজেই বলেছেন। নগরীর ফায়ার সার্ভিস বলেছে, তারা যেখানে দিনে ২০ থেকে ২৫টি মৃত্যুর রেকর্ড করেছে স্বাভাবিক সময়ে, সেখানে করোনা–তাণ্ডবের সময়ে তাদের কাছে প্রতিদিন গড়ে ২০০ লোকের মৃত্যুর তথ্য রয়েছে।
গত ডিসেম্বরের শেষ দিকে চীনের উহানে প্রথম শনাক্ত হওয়া করোনাভাইরাস এখন বৈশ্বিক মহামারি। এতে বিশ্বজুড়ে আক্রান্তের সংখ্যা এখন পর্যন্ত প্রায় সোয়া ১৫ লাখ। মারা গেছেন সাড়ে ৮৮ হাজারের বেশি মানুষ। তবে তিন লাখ ৩০ হাজারের বেশি রোগী ইতোমধ্যে সুস্থ হয়েছেন।