Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

abbasকরোনাভাইরাসের কারণে কর্মহীন মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণের নামে লোকজন জড়ো করে ছবি তুলেই তাদের পিটিয়ে তাড়ানোর অভিযোগ উঠেছে চট্টগ্রামের হাটহাজারীর মির্জাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল আবছারের বিরুদ্ধে। সোমবার (৬ এপ্রিল) সকালে এ ঘটনা ঘটে। অভিযুক্ত নুরুল আবছার হাটহাজারী উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা। তার বিরুদ্ধে প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ এবং নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে হাটহাজারীর সব ইউনিয়ন পরিষদে চাল ও নগদ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ১৫ দিন ধরে বিভিন্ন ইউনিয়নে এসব চাল বিতরণ করা হলেও মির্জাপুর ইউনিয়নে তা হয়নি। গতকাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এলাকায় আসবেন জেনে তড়িঘড়ি করে মির্জাপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নুরুল আবছার মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণের নামে লোকজন জড়ো করেন। কিন্তু ইউএনও পরিদর্শন করে চলে যেতেই ত্রাণ দেয়া বন্ধ করেন দেন চেয়ারম্যানের লোকজন। এর প্রতিবাদ করলে চেয়ারম্যান ও তার অনুসারীরা চড়াও হন অসহায় লোকজনের ওপর। এমনকি তাদের পেটানোও হয়।

chardike-ad

এ ঘটনার বেশ কয়েকটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছয়িয়ে পড়েছে। সেখানে দেখা যায়, সোমবার সকালে বেশ অস্বাস্থ্যকরভাবে সামাজিক দূরত্ব না মেনেই চাল বিতরণ করা হচ্ছে। যিনি চাল বিতরণ করছেন তিনি বারবার বলছেন, ‘এগিন আবছার চেয়ারম্যানে দিয়িদে, চাইরশ জহনরে দিয়ুম। (এ ত্রাণ আবছার চেয়ারম্যান দিচ্ছেন, ৪০০ জনকে এই ত্রাণ দেয়া হবে।)

স্থানীয়রা জানান, ৪০০ জনকে ত্রাণ দেয়ার নামে শত শত মানুষকে জড়ো করা হলেও ইউএনও এলাকা পরিদর্শন করে চলে যেতেই ত্রাণ দেয়া বন্ধ করে দেন চেয়ারম্যানের লোকজন।

ভুক্তভোগী এক নারী বলেন, ‘গত ১৫ দিনেও আমাদের কোনো সহায়তা দেয়া হয়নি। চেয়ারম্যান আমাদের লাইনে দাঁড় করিয়েও চাল দেননি। পরে আমরা যখন চাল খুঁজছি, তখন আমাদের তাড়িয়ে দিয়েছে। তাই আমরা উপজেলা বোর্ডে আসছি, ইউএনও স্যারকে বলছি।’

এ বিষয়ে হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুহুল আমিন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন বলেন, বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করে বিকেলে বাসায় এসে দেখি ২০ -২৫ জন নারী-পুরুষ আমার বাড়ির সামনে অপেক্ষা করছেন। তারা আমাকে জানান, মির্জাপুর ইউনিয়নে ত্রাণ দেয়ার নামে তাদের ছবি তোলা হলেও শেষ পর্যন্ত তাদের ত্রাণ দেয়া হয়নি। পরে আমি তাদের নিজের বরাদ্দে থাকা ‘ভালোবাসার থলে’ (ত্রাণভর্তি ব্যাগ) দিয়ে বাড়ি পাঠিয়েছি। স্থানীয়রা জানান, মূলত আমি এলাকায় পরিদর্শনে যাব শুনেই ওই ত্রাণ বিতরণের কাজ শুরু করা হয়েছিল।

এর আগে গত ৩ এপ্রিল ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল আবছারের বিরুদ্ধে ত্রাণ বিতরণে অনিয়মের লিখিত অভিযোগ করেন ওই ইউনিয়নের সদস্যরা (মেম্বার)। তারা লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেন, ইউনিয়ন পরিষদের নিজস্ব আয়ের কোনো হিসাবপত্র মেম্বারেরা জানেন না। তাদের অজান্তেই বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে আসছেন চেয়ারম্যান। এরই ধরাবাহিকতায় বিদেশফেরত হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা এবং হতদরিদ্রের তালিকা মেম্বারদের না জানিয়ে ওই চেয়ারম্যান করেন। ইতোপূর্বে অনেক প্রকল্পের কাজে বাজেট হয়েছে, কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।

ইউএনও রুহুল আমিন বলেন, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে কর্মহীন দিনমজুর ও হতদরিদ্রের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণের জন্য মির্জাপুর ইউনিয়ন পরিষদে তিন দফায় ত্রাণ পাঠানো হয়। প্রথম দফায় ৫০০ কেজি চাউল ও নগদ ৩০০০ টাকা, দ্বিতীয় দফায় ৫৩৩ কেজি চাউল, তৃতীয় দফায় স্থানীয় এমপির পক্ষ থেকে ৫০ বস্তা ত্রাণ (চাউল, ডাল, আলু, পেঁয়াজ) পাঠানো হয়। কিন্তু চেয়ারম্যান নিজ ইউনিয়নে বিতরণ করছেন কি-না সেটার মাস্টার রোল কপি উপজেলায় জমা দেয়া হয়নি। ওই ইউনিয়নের মেম্বারদের লিখিত অভিযোগও আমরা পেয়েছি। কপিটি জেলা প্রশাসক বরাবর পাঠানো হচ্ছে।