প্রাণঘাতি করোনাভাইরাসে ক্রমশই বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। মালয়েশিয়ায় এ ভাইরাসে এখন পর্যন্ত ৪৩ জন মৃত্যুবরণ করেছেন। আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ৭৬৬ জন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৫৩৭ জন। আক্রান্তের সংখ্যা ঠেকাতে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার পর্যটন নগরী মালয়েশিয়ায় চলছে লকডাউন। ঘোষিত লকডাউনের আজ ১৪তম দিন অতিবাহিত হচ্ছে।
১৮ মার্চ থেকে ৩১ মার্চ বেঁধে দেয়া এ আদেশ বাড়িয়ে তা চলবে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত। মরণঘাতি করোনার প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় সর্বসাধারণের চলাফেরা নিয়ন্ত্রণে আনতে নেয়া হয়েছে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা। বিনাকারণে ঘর থেকে বের হলেই করা হচ্ছে জেল জরিমানা। সরকারের দেয়া নিয়ন্ত্রণ অমান্য করায় আটক করা হয়েছে প্রায় ৮২৮ জনকে। এ অবস্থায় বাংলাদেশিসহ সকল প্রবাসী চরম দুশ্চিন্তা ও অনিশ্চয়তায় দিনাতিপাত করছেন। খাদ্য সংকটে ভুগছেন অনেক প্রবাসী।
বেশিরভাগ শ্রমিকদের কাছে নগদ অর্থ নেই। কোম্পানিগুলোর কাজ বন্ধ। সরকার ঘোষিত লকডাউনের সময় বেতন পরিশোধের ঘোষণা দিলেও এখন পর্যন্ত কেউ পায়নি বলছেন অনেকেই। অনেক কোম্পানিই চাচ্ছে না লকডাউন সময়কালের বেতন শ্রমিকদের বুঝিয়ে দিতে। এ নিয়ে শ্রমিকদের মধ্য উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার জন্ম নিয়েছে। অবৈধ অভিবাসী যারা রয়েছেন তারা সমস্যার সম্মুখীন বেশি। এই লকডাউনে ক্ষতিগ্রস্ত বৈধ অবৈধ অভিবাসীদের বিষয়ে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন প্রবাসীরা।
এমন পরিস্থিতিতে হাইকমিশন বলছে ধৈর্য ধরে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে। মিশনের ফোন, ই-মেইলে বা মেসেঞ্জারের মাধ্যমে হাইকমিশনে যোগাযোগ করার জন্য প্রবাসীদের আহ্বান জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। হাইকমিশনার মহ. শহিদুল ইসলাম বলছেন, সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই মহামারি থেকে আমরা উত্তরণ করব।
হাইকমিশনার জানান, মালয়েশিয়া সরকারের আদেশে করোনা নিয়ন্ত্রণে লকডাউন চলছে। দেশটির অন্য কোনো স্থানে বাংলাদেশি কেউ করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের খবর নেই। ইতোমধ্যে ঢাকায় জানানো হয়েছে এখানকার পরিস্থিতি। দূতাবাস থকে ২৪ ঘণ্টা হটলাইন সেবা দেয়া হচ্ছে। কর্মকর্তারা পালাক্রমে ডিউটি করছেন। আমরা রাজধানীসহ অন্যান্য শহরে অবস্থানরত সবার সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছি। যেই সমস্যা নিয়ে ফোন করছেন তাদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
এ ছাড়া করোনাভাইরাস জনিত অসুস্থতায় স্বাস্থ্যবিষয়ক জরুরি পরামর্শ প্রদানের জন্য একটি সাময়িক পরামর্শ কেন্দ্র খোলা হয়েছে। পহেলা এপ্রিল ২০২০ থেকে ৩০শে এপ্রিল পর্যন্ত এই সেবা অব্যাহত থাকবে। পরামর্শ প্রদান করবেন বাংলাদেশি চিকিৎসকরা। আগ্রহী বাংলাদেশি নাগরিকদের সময়সূচি অনুযায়ী দূরালাপনীর মাধ্যমে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ক্লিনিক এন কেয়ার ডিজিটাল স্বাস্থ্য সেবা সকল ইমিগ্রান্ট নাগরিকদের চিকিৎসা বিষয়ক ফ্রি পরামর্শ দেয়া হবে বলে জানালেন আয়োজকরা।
এদিকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত দেশগুলোতে অবস্থানরত প্রবাসীদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বিদেশে প্রবাসী কর্মীদের খাদ্য, আবাস, ঔষধ ও অন্যান্য প্রয়োজনে বাংলাদেশ সরকার এ অর্থ সহায়তা প্রদান করবে। ২৮ মার্চ প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
মন্ত্রণালয় সূ জানিয়েছে, বিভিন্ন দেশে করোনাভাইরাস ঠেকাতে লকডাউন অব্যাহত রয়েছে। প্রবাসীদের কাজ বন্ধ। তাদেরকে বসে থাকতে হচ্ছে। অনেকের নিয়োগকর্তা বেতন, খাদ্য বাসস্থান, মেডিসিন ইত্যাদি প্রদান করছে। কিন্তু যাদের নির্দিষ্ট নিয়োগকর্তা নেই, এখানে সেখানে কাজ করছে তাদের আয় নেই, করোনা সংক্রমিত হওয়ার ভয়ে বাইরে যেতে পারছে না।
যতই দিন যাচ্ছে তাদের দুশ্চিন্তা বাড়ছে। তারা না পারছে দেশে যেতে, না পারছে আয় করতে। সরকারের এ ঘোষণা তাদের জন্য কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরে এসেছে। তবে সরকারের পাশাপাশি কমিউনিটির হিতৈষী ব্যক্তিদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে প্রবাসীরা।
মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত প্রবাসীদের কত টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তা জানা যায়নি। তবে মন্ত্রণালয় বলছে, দূতাবাস চাহিদা দেয়ার পর নির্ধারণ হবে বলে জানা গেছে।
এদিকে, বিশ্বের দুই শতাধিক দেশে ছড়িয়ে পড়া করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৮ লাখ ছুঁই ছুঁই। মঙ্গলবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে করোনায় আক্রান্ত ৭ লাখ ৯৯ হাজার ৭৪১, মারা গেছেন ৩৮ হাজার ৭২১ এবং সুস্থ হয়েছেন ১ লাখ ৬৯ হাজার ৯৯৫ জন।