বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনাভাইরাসকে বৈশ্বিক মহামারি ঘোষণা করার কিছুক্ষণের মধ্যে বিদেশিদের যাবতীয় ভিসা বাতিল করল ভারত সরকার। শুক্রবার মধ্যরাত থেকে বিশেষ কারণ ছাড়া ভারতে প্রবেশ করতে পারবেন না কোনো বিদেশি। আগামী ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত বলবৎ থাকবে এই বিধিনিষেধ। বুধবার দেশটির স্বাস্থ্য-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভার দ্বিতীয় বৈঠকে ভিসা বাতিলের এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষবর্ধন। তবে দেশটির কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, কূটনীতিক, জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক সংস্থা ও বিভিন্ন প্রকল্পের ভিসা এই বিধিনিষেধের আওতায় পড়বে না।
নির্দেশিকায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে-
১. শুক্রবার মধ্যরাত ১২টার পর সমস্ত ভারতীয় ভিসা বাতিল করা হয়েছে। শুধুমাত্র কূটনৈতিক, জাতিসংঘ বা অন্য কোনো আন্তর্জাতিক সংগঠনের কর্মীদের জন্য জারি ভিসা বলবৎ থাকবে।
২. প্রবাসী ভারতীয় কার্ডধারীদের ভিসা ছাড়া দেশে প্রবেশের অধিকার ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত প্রত্যাহার করা হচ্ছে।
৩. যদি কোনো বিদেশি নাগরিকের ভারতে প্রবেশ করা খুব প্রয়োজনীয় হয় তবে তাকে কাছাকাছি ভারতীয় দূতাবাস বা কনস্যুলেটে যোগাযোগ করতে হবে।
৪. যেকোনো ব্যক্তি চীন, ইতালি, ইরান, দক্ষিণ কোরিয়া, ফ্রান্স, স্পেন ও জার্মানি থেকে এলে বা ১৫ ফেব্রুয়ারির পর সেখানে গিয়ে থাকলে ভারতে প্রবেশের পর তাকে ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। ভারতীয় নাগরিকদের ক্ষেত্রেও এই নিয়ম কার্যকর হবে।
৫. অত্যন্ত প্রয়োজনীয় না হলে বিদেশ থেকে ফেরার পর কাউকে যাত্রা করতে নিষেধ করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
৬. খুব দরকার না হলে বিদেশে যাওয়া উচিত নয়।। সেক্ষেত্রে বিদেশ থেকে ফিরলে ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে।
৭. স্থলবন্দগুলোতে গাড়ি চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে। বাড়ানো হবে নজরদারি।
ভারতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এখন পর্যন্ত দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬২-তে। এদের মধ্যে শামিল রয়েছেন ইতালির ১৬ জন নাগরিকও। ভারতে দিল্লি এবং সংলগ্ন এলাকাতেই করোনা আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। সেখানে এখনও পর্যন্ত ২০ জনের শরীরে সংক্রমণ ধরা পড়েছে। পশ্চিমবঙ্গে এখনও কারও শরীরে করোনাভাইরাস ধরা পড়েনি। তবে করোনা আক্রান্ত সন্দেহে এ রাজ্যে এ পর্যন্ত তিনজনকে হাসপাতালে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
গত বছরের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে করোনাভাইরাস প্রথম শনাক্ত হয়। এখন পর্যন্ত ১ লাখ ১৯ হাজার ২১৭ জন প্রাণঘাতী এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। মারা গেছে ৪ হাজার ২৯৯ জন। অপরদিকে করোনায় আক্রান্ত ৬৬ হাজার ৫৬৩ জন চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে।
বিশ্বের ১১৯টি দেশ ও অঞ্চলে এই ভাইরাসের প্রকোপ ছড়িয়েছে। শুধুমাত্র চীনের মূল ভূখণ্ডেই করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৮০ হাজার ৭৭৮ এবং মৃত্যু হয়েছে ৩ হাজার ১৫৪ জনের। চীনের পর করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি ইতালিতে। দেশটিতে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ৬৩১ জনের।