মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে ইতালি। দেশটিতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১৯৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮২৭ জনে। একদিনে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন দুই হাজার ৩১৪। চিকিৎসাধীন আছেন ১০ হাজার ৫৯০ জন। দেশটিতে এখন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ১২ হাজার ৪৬২ জন- চীনের পর যা সর্বোচ্চ।
করোনাভাইরাসের কারণে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে ইতালির ছয় কোটি মানুষ। থমকে গেছে গোটা ইতালি। যানবাহন আগের মতো চলাচল না করায় বেড়ে গেছে যাত্রী দুর্ভোগ। অর্থনৈতিক চরম ক্ষতির দিকে যাচ্ছে। নতুন করে কোনো পর্যটক ইতালিতে প্রবেশ করতে না পারায় ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ হয়ে দিন দিন বেকারের সংখ্যা বাড়ছে। করোনাভাইরাসের প্রকোপ বৃদ্ধি ও মৃতের সংখ্যা বাড়তে থাকায় দেশটির প্রধানমন্ত্রী গিসেপে কন্তে লোকজনকে বাড়ির বাইরে বের না হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
পুরো দেশজুড়েই ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা ও জনসমাগমে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এর আগে দেশটির ১৪টি প্রদেশে ৮ মার্চ থেকে আগামী ৩ এপ্রিল পর্যন্ত জরুরি অবস্থা জারি করা হয়। কিন্তু এখন তা বাড়িয়ে দেশটির ২০টি প্রদেশের সবগুলোতেই জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী কন্তে লোকজনকে বাড়ির বাইরে বের না হওয়ার নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় সফরের ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের অনুমতি নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
টেলিভিশনে দেয়া এক ভাষণে প্রধানমন্ত্রী কন্তে বলেন, এখন আর সময় নেই। যারা সবচেয়ে ঝুঁকিতে আছেন তাদের সুরক্ষার জন্যই এই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।
ইতালির প্রধানমন্ত্রী দেশজুড়ে স্কুল, জিমনেশিয়াম, জাদুঘর, নাইটক্লাব এবং অন্যান্য ভেন্যু বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমরা আমাদের নাগরিকদের স্বাস্থ্যের নিশ্চয়তা দিতে চাই।’ তবে সেখানে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে।
সরকারের ডিক্রিতে রেড জোন দেয়া হয়েছে ইতালির কয়েকটি প্রদেশ। এরমধ্যে মোডেনা, পারমা, পিয়াসেনজা, রেজিও এমিলিয়া, রিমিনি, পেসারো এবং উরবিনো, ভেনিস,পাডুয়া, ট্র্যাভিসো, আস্তি, আলেসান্দ্রিয়া, নোভারা, ভারবানো, কুসিও অসসোলা এবং ভেরসেল্লি। এসব এলাকা থেকে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বের হতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
সরকার বলছে, এই রেড জোনের আইন কেউ অমান্য করলে ২০৬ ইউরো জরিমানা অন্যথায় ৩ মাসের জেল দেয়া হবে। এছাড়াও স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, সিনেমা, মসজিদ আগামী ১৫ মার্চ পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এদিকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ায় করোনাভাইরাসকে মহামারি ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। বুধবার (১১ মার্চ) বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ১০টার দিকে এ ঘোষণা দেয় সংস্থাটি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান ডা. টেড্রস অ্যাধানম ঘেব্রাইয়িসাস বলেন, গত দুই সপ্তাহে এ ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা উৎপত্তিস্থল চীনের বাইরে ১৩ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ভাইরাসের আশঙ্কাজনক মাত্রায় বৃদ্ধির বিষয়ে তিনি ‘গভীরভাবে শঙ্কিত’। তিনি বিভিন্ন দেশের সরকারকে ‘জরুরি ও আক্রমণাত্মক পদক্ষেপ’ গ্রহণের মাধ্যমে এই প্রাদুর্ভাব থেকে উত্তেরণের আহ্বান জানিয়েছেন।
এছাড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনাভাইরাসকে বিশ্বব্যাপী মহামারি ঘোষণা করার কিছুক্ষণের মধ্যে বিদেশিদের যাবতীয় ভিসা বাতিল করেছে ভারত। শুক্রবার মধ্যরাত থেকে বিশেষ কারণ ছাড়া ভারতে প্রবেশ করতে পারবেন না কোনো বিদেশি। আগামী ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত বলবৎ থাকবে এই বিধিনিষেধ।
বুধবার দেশটির স্বাস্থ্য-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভার দ্বিতীয় বৈঠকে ভিসা বাতিলের এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষবর্ধন। তবে দেশটির কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, কূটনীতিক, জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক সংস্থা ও বিভিন্ন প্রকল্পের ভিসা এই বিধিনিষেধের আওতায় পড়বে না।