দু’চোখ হারিয়ে দেশে ফিরেছেন ওমানপ্রবাসী বাংলাদেশি এক রেমিট্যান্সযোদ্ধা। দুর্ভাগা ওই প্রবাসীর নাম শহিদুল্লাহ (৫২)। তাকে দেশে পাঠানোর পুরো প্রক্রিয়া ও ব্যবস্থা করে মাস্কাট দূতাবাস। জানা গেছে, জীবিকার তাগিদে ৯ বছর আগে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে অবৈধপথে ওমানে আসেন মো. শহিদুল্লাহ। রাজধানী মাস্কাটের বিভিন্ন জায়গায় তিনি কখনো গাড়ি পরিষ্কার কিংবা রাজমিস্ত্রির সহযোগী হিসেবে কাজ করতেন। ২০১৮ সালের দিকে হঠাৎ তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন।
পরিচিত বাংলাদেশিরা একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করান। নিরাময়ের জন্য উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন হলেও তা সম্ভব হয়নি। কারণ ভিসাহীন অবৈধভাবে বসবাস করায় ওমানের ভালো কোনো হাসপাতালেও নেওয়া যায়নি। একটা পর্যায়ে শহিদুল্লাহ দুই চোখের দৃষ্টি শক্তি হারিয়ে ফেলেন।
এ বাংলাদেশি দুর্ভিসহ জীবন পার করছিলেন প্রবাসের মাটিতে। খেয়ে না খেয়ে মানবেতর জীবন পার করছিলেন শহিদুল্লাহ। দেশে পরিবারের কাছে যাওয়ার ব্যকুলতা থাকলেও ভিসাহীন হওয়ায় তা সম্ভব হচ্ছিল না। অবশেষে মাস্কাটে বাংলাদেশে দূতাবাসের দারস্থ হন শহিদুল্লাহ। দূতাবাসের শ্রম কাউন্সিলর হুমায়ন কবিরের সহযোগিতায় আইন সহায়তাকারী মাসুদ করিম শুরু করেন শহিদুল্লাহকে দেশে ফেরানোর প্রক্রিয়া ।
শহিদুল্লাহ লক্ষ্মীপুরের সদর থানার শেরপুর গ্রামের আমিনুল হকের ছেলে। ১৯ ফেব্রুয়ারি রাতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে একজন সহযোগীসহ রাজধানী মাসকাট থেকে দেশে ফিরে আসেন তিনি। ওমানে বাংলাদেশ দূতাবাসের মানবিক সহায়তায় দেশে ফিরতে পেরেছেন শহীদুল্লাহ।
অবৈধভাবে বসবাস করাতে তার যাবতীয় কাগজপত্র তৈরিসহ, দেশে পাঠানোর সব প্রক্রিয়া শেষ করে বিমানে উঠিয়ে দেয়া পর্যন্ত বন্দোবস্ত করেন মাসুদ করিম। শরীফ নামে তার পরিচিত এক প্রবাসীসহ দেশের উদ্দ্যেশে পাড়ি দেন তিনি। মাসকাট আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাকে বিদায় জানান মাসুদ করিম।
বিদায়বেলায় বিমানবন্দরে শহিদুল্লাহ বলেন, দু’চোখ হারিয়ে প্রায় এক বছর ধরে ওমানে মানবেতর জীবন পার করছিলাম। আল্লাহর অশেষ রহমতে দূতাবাস এগিয়ে এসেছে। তাদের প্রতি অশেষদু’চোখ হারিয়ে দেশে ফিরলেন রেমিট্যান্স কৃতজ্ঞতা।
তিনি বলেন, বাড়ি যেতে পারছি তার আনন্দ থাকলেও মনের ভেতর প্রচণ্ড কান্না পাচ্ছে এটা ভেবে যে আমার একমাত্র ছেলে আর দুই মেয়ে, আমার পরিবার, প্রিয়জন, প্রিয় মাতৃভূমিকে যে আমি আর এই জীবনেও দু’চোখ ভরে দেখতে পাব না, দৃষ্টিহীন দু’চোখে পানি গড়িয়ে আসা জীবনযুদ্ধে হেরে যাওয়া এই রেমিট্যান্সযোদ্ধার আর্তনাদ।