Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

mimআলু ব্যবসায়ী ইসমাইল হোসেন। স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে সুখেই চলছিল সংসার। হঠাৎ ব্যবসায় লোকসান। পরে ফুটপাতে হালিম বিক্রি শুরু করেন। ভাগ্য সেখানেও সুপ্রসন্ন হয়নি। স্বামীর দুঃসময়ে সাহায্য করতে চান স্ত্রী মিম আক্তার। উপায় খুঁজতে থাকেন।

এদিকে একদিন এক প্রতিবেশী বিদেশে ভালো বেতনের চাকরির প্রলোভন দেখান। ভাবনা চিন্তার জাল বুনতে বুনতে এক সময় সেই জালে আটকে যান ওই দম্পত্তি। নানা ঝঞ্জা পেরিয়ে দুবাই গেলেন মিম। চোখে রঙিন স্বপ্ন, বুক ভরা আশা। স্বামী-সন্তান পরিবার নিয়ে সুখে থাকবেন।

chardike-ad

স্বপ্ন কেবলই স্বপ্ন, বাস্তবতা একেবারেই আলাদা। একেবারেই মলিন আর কদর্যতায় ভরা। দুবাই পৌঁছানোর পর থেকেই তার উপরে নির্যাতন চালানো শুরু হয়। জোরপূর্বক অসামাজিক কাজে লিপ্ত হতে বাধ‌্য করানো হয়। এখন কোনোমতে দেশে ফেরার আকুতি তার। খেয়ে না খেয়ে দেশে থাকলেও শান্তি।

এদিকে স্ত্রীর এ অবস্থায় নিজেকে স্থির রাখতে পারছেন না ইসমাইল। স্ত্রীকে ফেরাতে সর্বত্র ছোটাছুটি করছেন। এ ঘটনায় যারা জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনতে এবং স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টায় থানা পুলিশের দ্বারস্থ হন। কিন্তু পুলিশ মামলা নেয়নি। তাই সর্বশেষ আশ্রয়স্থল আদালতের শরণাপন্ন হন ইসমাইল।

গত ১১ ফেব্রুয়ারি মানবপাচারের অভিযোগ এনে ফকিরাপুলের ভূইয়া ট্রাভেলস এজেন্সির এজেন্ট মো. রুবেল মিয়াসহ পাঁচ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন তিনি। ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ও মানব পাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল-৬ এর বিচারক মামলাটি মো. আল-মামুনের আদালতে মামলাটি আমলে গ্রহণ করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে অভিযোগের বিষয়ে তদন্তের নির্দেশ দেন। মামলায় রুবেল ছাড়াও প্রতিবেশী শহিদ, তানিয়া, শাকিল ও নুরুজ্জামানকে আসামি করা হয়েছে। শহিদ, তানিয়া ও শাকিল পরস্পরের ভাই-বোন।

মামলায় বাদী অভিযোগ করেন, শহিদ ব্যবসায়ীক কাজে দুবাইয়ে যাতায়াত করেন। সেই সুবাদে শহিদ মিমকে দুবাই নিয়ে ভাল চাকরির প্রস্তাব দেয়। তানিয়া, শাকিল, নুরুজ্জামানও দুবাই চাকরিতে যাবে বলে ভুক্তভোগীদের আশ্বস্ত করে।

মিম আক্তারকে দুবাই মার্কেটে বিপনী বিতানে সেলসম্যানে ভাল বেতনে চাকরি দেয়ার কথা বলে এক লাখ ৩০ হাজার টাকা নেয়। গত ৪ আগস্ট তাকে দুবাই পাঠানোর উদ্দেশ্যে শহিদ, তানিয়া, শাকিল ও নুরুজ্জামান ভূইয়া ট্রাভেলস এজেন্সির এজেন্ট রুবেল মিয়ার কাছ থেকে পাচারের উদ্দেশ্যে দুই মাসের ট্যুরিস্ট ভিসায় দুবাই পাঠান।

ভিকটিমকে সেখানে নিয়ে চাকরিতে নিয়োগ না দিয়ে বিভিন্ন হোটেল এবং বারে নিয়ে জোরপূর্বক তাকে মারধর করে। হত‌্যার পর লাশ গুম করার ভয় দেখিয়ে অসামাজিক কাজে লিপ্ত হতে বাধ‌্য করায়। তাকে বার্ড দুবাই মিনা, বনটন বিল্ডিংয়ে আটকে রেখেছে। ভিকটিম কৌশলে ইসমাইলের সাথে যোগাযোগ করেন। আসামি শহিদ তা দেখে ফেলায় দেলোয়ার হোসেনকে ভয়ভীতি দেখায় এবং ভিকটিমকে হত‌্যার হুমকি দেয়।

বাদি আরো অভিযোগ করেন, গত ২৬ জানুয়ারি আসামি শহিদকে ফোন দেওয়া হয়। সেসময় শহিদ জানান, ভিকটিম মিম আক্তারকে কোনো দিন ফেরত দেয়া হবে না। এ ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করলে তাকেও হত‌্যা করা হবে বলে হুমকি দেয়। ইতোমধ্যে আসামিরা ঢাকা ছেড়ে চট্টগ্রাম চলে যান। ইসমাইল তাদের সাথে যোগাযোগ করলে তাকেও নানা প্রকার ভয়ভীতি দেখান।

এ ব‌্যাপারে ইসমাইল হোসেন গত ২৭ জানুয়ারি মতিঝিল থানায় মামলা দায়ের করতে গেলে থানা কর্তৃপক্ষ মামলা নেয়নি। এ কারণে বাদী আদালতে মামলা দায়ের করেন বলে এজাহারে উল্লেখ করেন। বাদী আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করেন।

ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘আসামিরা আমার স্ত্রীকে দুবাই নিয়ে অবর্ণনীয় নির্যাতন করছে। তাকে লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে আহত করেছে। আমার স্ত্রীকে তাদের কবল থেকে উদ্ধার করতে চাই। আসামিরা শুনেছে আমি মামলা করব। এরপর থেকে তারা আমাকে বিভিন্নভাবে হুমকি-ধামকি দিচ্ছে। আমি নিরাপত্তাধীনতায় আছি। কখন কী ঘটে যায় বলতে পারি না। সারাক্ষণ তটস্থ হয়ে আছি।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের একমাত্র ছেলে কেবলই তার মাকে খোঁজে। মায়ের কাছে যেতে চায়। তাকে নেত্রকোনায় নানা বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছি।’

বাদীপক্ষের আইনজীবী সোহরাব হোসেন বলেন, ‘ভালো চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে আসামিরা ট্যুরিস্ট ভিসা দিয়ে নারীদের দুবাই নেয়। সেখানে নিয়ে তাদের দিয়ে অবৈধ কাজকর্ম করায়। রাজি না হলে অমানবিক নির্যাতন চালায়। আমরা তাদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা চাই। যেন পরবর্তীতে তারা এধরনের অপরাধ না করে।’

সৌজন্যে- রাইজিংবিডি