এ সময়ে সিঙ্গাপুরের আবহাওয়া রাতে কিছুটা ঠান্ডা। তবে দিনের বেলায় বেশ গরম। দিনে ও রাতে আবহাওয়ার এমন পার্থক্যের কারণে অনেকেরই সর্দি ও জ্বর হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু করোনাভাইরাস আতঙ্কের কারণে এখন সামান্য সর্দি কিংবা জ্বর হলেই অনেকেই ভয়ে অস্থির হয়ে উঠছেন।
শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) এক বন্ধুকে দেখলাম মুখে সার্জিক্যাল মাস্ক পরিধান করে বসে আছে। জিজ্ঞাসা করতেই উত্তর দিলো, ‘আমার নাক দিয়ে পানি ঝরছে। আর জ্বর অনুভব হচ্ছে। আমার মনে হয়, করোনাভাইরাস আক্রমণ করল। এই অল্প বয়সে মরে গেলে কী করে হবে? আমি মনে হয় আর বাঁচুম না।’
সর্দি আর সামান্য জ্বর হলেই যে করোনাভাইরাস না যুক্তি দিয়ে তাকে সেটা বোঝাতে পারলাম না। তাকে বললাম, ‘গত সপ্তাহে আমারও সর্দি হয়েছিল। সর্দির কারণে গত তিন দিন সমস্যায় ছিলাম। ভয়ঙ্কর সর্দির কারণে রুম থেকে বের হতে পারছিলাম না। কিন্তু এখন ঠিক হয়েছে।’ আমার কথায় সে কিছুটা স্বস্তি পেয়েছে বলে মনে হয়েছে।
এবার সে উঠে দাঁড়িয়ে বলল, ‘ঠিক আছে ডাক্তারের কাছে যাই। তারপর বাসায় গিয়ে সরষে ভর্তা বানিয়ে গরম ভাত খেয়ে দেখি কী অবস্থা।’
আজ তাকে দেখলাম, সুস্থভাবে অফিসে এসেছে। করোনাভাইরাস নিয়ে খবর শুনতে শুনতে সামান্য অসুখ হলেও আমাদের মস্তিষ্ক এখন এ ছাড়া অন্যকিছু ভাবতে পারে না।
তাছাড়া গতকাল এক বাংলাদেশি সিঙ্গাপুরে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর শোনার পর অনেকেই দেখলাম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিচ্ছে। স্ট্যাটাসে স্থানীয় মোস্তফা সেন্টারের দিকে বাংলাদেশি প্রবাসীদের না যাওয়ার জন্য বলা হচ্ছে। অবস্থা খুব খারাপ উল্লেখ করে সাবধানে থাকার জন্য আহ্বান করা হচ্ছে। কারণ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বাংলাদেশি মোস্তফা সেন্টারে যাওয়ার পরই আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
এক বাংলাদেশি প্রবাসী ভাইকে করোনাভাইরাস আতঙ্কে কেঁদে দিতে দেখলাম। তার বাবাকে মোবাইল ফোনে কল দিয়ে বললেন, ‘বাবা তুমি আমাকে চাও, নাকি টাকা?’
তার কথা শুনে আমিও অবাক। তবে তার বাবার উত্তর শুনতে পেলাম না।
সে আবারও বলল, ‘বাবা সিঙ্গাপুরের অবস্থা খুবই খারাপ। একজন বাংলাদেশি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। সকাল বিকাল শরীরের তাপমাত্রা মাপা হয়। চারপাশে শুধু করোনাভাইরাস। আমি সিঙ্গাপুর থাকলে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হইয়া মইরা যামু।’ তখন দেখলাম, তার চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ছে।
শুধু উল্লেখিত প্রবাসীরাই নয়, করোনাভাইরাস আতঙ্কে পুরো সিঙ্গাপুরবাসী। সিঙ্গাপুরের প্রতিটি এলাকায় করোনা সংক্রান্ত বিষয়ে নেয়া হয়েছে বাড়তি সতর্কতা। তবে যেহেতু মানবদেহ থেকে এ রোগ ছড়ায় তাই মানুষের মাঝে আতঙ্ক কমছেই না। প্রবাসী বাঙালিদের আতঙ্কটাও যেন একটু বেশি। কারণ তারা পরিবার-পরিজন ছাড়াই সেখানে অবস্থান করছেন। অসুস্থ হলে সেবা কে করবেন এই নিয়ে তাদের চিন্তার শেষ নেই।