Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

chan-miaবয়স ৬০ হবে। দেশে রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। মিস্ত্রি হিসেবে নামডাক ভালোই ছিল তার। বেশ সুখেই চলছিল তাদের সংসার। কোনো একদিন কাজে গিয়ে পরিচয় হয় এক আদম দালালের সঙ্গে। সেই দালাল প্রলোভন দেখিয়ে বলে তোমার কাজ অনেক ভালো। যদি বিদেশ গিয়ে এই কাজ করো তাহলে কমপক্ষে ১৫০০ রিয়াল কামাতে পারবা। কথাগুলো বলছিলেন বছর তিনেক আগে কাতার যাওয়া আলেক চান নামের এক বাংলাদেশি। তিনি বর্তমানে দেশটিতে ‘শ্রমিক সাপ্লাই চেইন’ নামে একটি কোম্পানিতে কাজ করছেন।

কীভাবে বিদেশ যাত্রা জানতে চাইলে আলেক চান বলেন, ‘দেশে থাকা অবস্থায় আমি এক আদম দালালের প্রলোভনের শিকার হই। দালাল আমাকে অল্প টাকায় কাতারের ভিসা করিয়ে দেয়ার আশ্বাস দেয়। সে জানায় খুব বেশি টাকা পয়সা লাগবে না। মাত্র সাড়ে তিন লাখ দিলেই হবে। এই অফার শুধু তোমার জন্য। তবে এটা কাউকে বলা যাবে না। অন্য কারও জন্য ৫ লাখ নেব। এমন ভিসা বেশিদিন থাকবে না। যা করার তাড়াতাড়ি করে আমাকে জানিও’।

chardike-ad

‘এরপর আমি স্বপ্ন দেখতে শুরু করি। গরু বিক্রি করি সঙ্গে কিছু গাছও। বহু কষ্টে প্রায় দুই লাখ টাকা জোগাড় করি। বাকি টাকা সুদের ওপর নিয়ে দালালকে ৩ লাখ ২০ হাজার তুলে দিলাম’। চুক্তিপত্রে আলেক চানের বেসিক বেতন ১৫০০ রিয়াল, থাকা খাওয়া ফ্রি। দালাল বলে বেতন কিছুই না সব টাকা ওভার টাইমে। শুধু রিয়াল আর রিয়াল।

বৃদ্ধ বলেন, ‘অবশেষে অনেক কষ্টে ৩ লাখ ২০ হাজার টাকায় স্বপ্নের কাতার চলে আসলাম। আসার পর জানতে পারি এটি একটি শ্রমিক সাপ্লাই কোম্পানি। খুবই খারাপ অবস্থা। এখানে এসে নতুনভাবে চুক্তি হয়। তাতে বেতন লেখা ৬০০ রিয়াল। সঙ্গে খাওয়ার জন্য ২০০ রিয়াল। আমি তাতে সাইন করতে চায়নি কিন্তু দেশে পাঠানোর ভয় দেখিয়ে ইচ্ছার বিরুদ্ধে সই করিয়ে নেয় কোম্পানি’।

তিনি জানান, আমি তখন মহাবিপদে। কী করবে ভেবে পায় না। একটা সময় সিদ্ধান্ত নিলাম দেশে ফিরে যাব। কিন্তু স্ত্রীর পরামর্শে থেকে যায়। ৪ বছরে বহু কষ্টে কিছুটা ঋণ শোধ করেছি। দুই মেয়ে, একজনকে বিয়ে দিয়েছি, আরেকজন বিয়ের উপযুক্ত। বড় মেয়ের বিয়ে দিই কিস্তি নিয়ে যৌতুক দিয়ে। এদিকে ঋণে চিন্তায় আমার ঘুম আসে না। তার ওপর ছোট মেয়েরও বিয়ের বয়স হয়েছে।

বয়সের ভারে আমার আর শরীর চলে না। মাঝে মাঝেই ভাবি দেশে চলে যাব। প্রতিদিন রাত ৪টায় ঘুম থেকে উঠতে হয়। কারণ ডিউটি আছে। শরীর চলে না তবুও কিছুই করার থাকে না। কাজে যেতেই হবে। একদিন কাজে না গেলে ২ দিনের হাজিরা কেটে নেয় কোম্পানি। আবার ঋণের বোঝাতো আছেই।

কাতারে উত্তপ্ত মরু প্রান্তরে অবিরাম কাজ করে চলেছেন আলেক চান। ‘পরিশ্রান্ত মনে যখন পরিবারের সুখসৃতি নিয়ে ভাবতে থাকি তখন সুপারভাইজার চিল্লিয়ে উঠে ‘ইয়া আল্লাহ হাবিবি জলদি জলদি’। আবার কাজ শুরু করি, কারণ ঋণের বোঝা মাথায়’।

এদিকে কোম্পানিটির অবস্থাও ভালো না। কাজের পরিধি কমে যাওয়ায় ঠিকমতো বেতন দেয় না। ‘তিন মাস পার হয়ে যায় তবুও বেতন পায় না। বাড়ি থেকে ফোন দেয় টাকার জন্য কিন্তু কিছুই করা থাকে না’।

কোম্পানির কাজ না থাকায় অনেক বাংলাদেশি শ্রমিককে দেশে পাঠানো হবে। তার মধ্যে আলেক চানও রয়েছে। তার ছেলেটা সবে এসএসসি পাশ করেছে। এমতাবস্থায় আলেক চান কী করবে ভেবে পায় না।

মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোয় নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানে সুনির্দিষ্ট কাজের চুক্তির মাধ্যমে ভিসা ইস্যু হয়। অনেক ক্ষেত্রে ভিসার সব খরচ নিয়োগদানকারী সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বহন করে। ফ্রি ভিসা বলে কিছু না থাকলেও মূলত কিছু অসাধু বাংলাদেশি স্থানীয়দের যোগসাজশে ফ্রি ভিসার নামে প্রতারণা পদ্ধতি চালু করেছে। ফলে সাধারণ শ্রমিক তার সর্বস্ব বিক্রি করে বিদেশে গিয়ে কাজ না পেয়ে অসহায়ত্বের মধ্যে পড়েন। এমনকি জেল জরিমানার ফাঁদে পড়েন।

দোহা থেকে মাহবুব রহমান