ভারতের উত্তরপ্রদেশে অবস্থিত দুটি মসজিদকে আজানের সময়ে মাইক ব্যবহারের অনুমতি দিতে অস্বীকার করেছে ওই রাজ্যের আদালত। এলাহাবাদ হাইকোর্টের বিচারপতি পঙ্কজ মিথাল এবং ভিপিন চন্দ্র দীক্ষিতের ডিভিশন বেঞ্চ এ সংক্রান্ত একটি পিটিশনের রায়ে এমন কথা জানিয়েছে মঙ্গলবার। বিবিসির প্রতিবেদনে এ খবর জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী হাইকোর্টের ওই বেঞ্চ বলেন, ‘কোনো ধর্মই এটা শেখায় না যে প্রার্থনা করার সময়ে মাইক ব্যবহার করতে হবে বা বাজনা বাজাতে হবে। আর যদি সেরকম কোনও ধর্মীয় আচার থেকেই থাকে, তাহলে নিশ্চিত করতে হবে যাতে অন্যদের তাতে বিরক্তির উদ্রেক না হয়।’
উত্তরপ্রদেশের জৌনপুর জেলার বাদ্দোপুর গ্রামে অবস্থিত দুটি মসজিদে আজানের সময়ে মাইক ব্যবহারের অনুমতি নবায়নের জন্য এই আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসন মাইক ব্যবহারের অনুমতিকে নবায়ন করতে চায়নি। তার বিরুদ্ধেই এলাহাবাদ হাইকোর্টে একটি পিটিশন দাখিল করা হয়েছিল।
কিন্তু শব্দ দূষণরোধ আইন এবং সুপ্রিম কোর্টের নানা রায় তুলে ধরে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ বলেছেন, ‘ভারতীয় সংবিধানের ২৫ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রত্যেক ব্যক্তির নিজের ধর্ম পালন করার অধিকার আছে ঠিকই কিন্তু সেই ধর্মপালনের কারণে অন্য কারো অসুবিধা তৈরির অধিকার কারো নেই।’
হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ বলেন, ‘এই আদালত মনে করে অখন্ড রামায়ণ, কীর্তন প্রভৃতির সময়ে মাইক ব্যবহার করার ফলে একদিকে যেমন শব্দ দূষণ হয়, তেমনই অনেক মানুষের অসুবিধাও হয়।’ এলাহাবাদ হাইকোর্টেরই বিশ বছর আগের একটি রায়কে উদ্ধৃত করেছে ডিভিশন বেঞ্চ।
পুরোনো সেই রায়ে বলা হয়েছিল, ‘অখন্ড রামায়ণ, আজান, কীর্তন, কাওয়ালি বা অন্য যে কোনো অনুষ্ঠান, বিয়ে প্রভৃতির সময়ে মাইক ব্যবহার করার কারণে অনেক মানুষের অসুবিধাও হয়। সাধারণ মানুষের কাছে আবেদন জানানো হচ্ছে যাতে মাইক ব্যবহার না করা হয়।’
আদালতের সর্বশেষ এই রায়টি দেয়া হয়েছে দুটি মসজিদে মাইক ব্যবহারের অনুমতি নবায়নের আবেদনের প্রেক্ষিতে। কিন্তু অন্যান্য কোনো মসজিদে আজান বা মন্দিরে রামায়ণ পাঠ বা কীর্তন অথবা মঞ্চে কাওয়ালি অনুষ্ঠানে মাইক ব্যবহারের অনুমতি দেয়া হবে না, এটা বলা হয়নি।
ভারতের শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী, রাজনৈতিক সমাবেশ বা যে কোনো অনুষ্ঠানের জন্য স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হয় এবং মাইকের শব্দমাত্রাও বেঁধে দেওয়া থাকে।
এলাহাবাদ হাইকোর্ট এটাও বলেছে, ‘যে অঞ্চলে ওই মসজিদ দুটি অবস্থিত, সেটি একটি অনেক ধর্মের মানুষের বসতি রয়েছে। তাই শুধু শব্দ দূষণ আটকানোর জন্য নয়, ওই অঞ্চলে শান্তি বজায় রাখার কথাও প্রশাসনিক কর্মকর্তারা মাথায় রেখেছিলেন।’
মাইক ব্যবহারের অনুমতি চেয়ে দাখিল করা পিটিশন খারিজ করে দিয়ে স্থানীয় প্রশাসনের কাজে হস্তক্ষেপ করতে চায় না বলেও জানিয়েছেন আদালত।
সূত্র : বিবিসি বাংলা