মালয়েশিয়ায় অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান চলছে প্রায় আড়াই বছর ধরেই। এ বছরেও আটক হয়েছে অন্তত ৭ হাজার বাংলাদেশি। বছর দুয়েক আগে অবৈধ শ্রমিকদের রেজিস্ট্রেশন করে বৈধ হবার একটি সুযোগ দিলে তাতেও তালিকাবদ্ধ হয়েছে বহু মানুষ।
কিন্তু দুর্নীতি আর অনিয়মের কারণে দেশটিতে প্রতারিত হয়েছে বহু বাংলাদেশি। শুধু মালয়েশিয়ার নয় কিছু বাংলাদেশির কারণেও বহু প্রবাসী আজ দেশটির বনে জঙ্গলে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। আর এসব পলাতকদের ধরতে মালয়েশিয়া সরকার প্রতিদিনই বিভিন্ন প্রদেশে অভিযান চালাচ্ছে। কখনও কনস্ট্রাকশন সাইটে, কখনও রেস্টুরেন্টে কখনওবা আবাসিক এলাকাতেও ঝঁটিকা ধরপাড়াও চালাচ্ছে দেশটির ইমিগ্রেশন বিভাগ।
মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তান সেরি মহিউদ্দিন ইয়াছিন বলেছেন, পাঁচটি রূপরেখার ভিত্তিতে দেশজুড়ে অবৈধ অভিবাসীবিরোধী অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। আর সেই অভিযানে যারা গ্রেফতার হবেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেবে সরকার।
নতুন পাঁচ কৌশল:
এক, প্রয়োগকৃত অভিযান পদ্ধতি, যা দেশব্যাপী অবৈধদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার ক্ষেত্রে বিভিন্ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন।
দুই, আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগ নীতি, যা নতুন আইনের খসড়া প্রণয়ন এবং অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে প্রয়োগের নীতিগুলোর সমন্বয় সম্পর্কিত বাস্তবায়ন।
তিন, প্রবেশপথ ও বর্ডার নিয়ন্ত্রণ কৌশল, যা দেশের সীমানা এবং প্রবেশপথগুলোর নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ ও পর্যবেক্ষণ।
চার, বিদেশি নাগরিকদের সঙ্গে সম্পর্কিত নীতিগুলোর সমন্বয়।
পাঁচ, মিডিয়া এবং প্রচার কৌশল, যা অবৈধদের বিষয়ে মিডিয়া কাভারেজ, প্রচার ও সচেতনতা বৃদ্ধি।
আড়াই বছরধরে চলতে থাকা সে দেশের সরকারের লিগ্যালাইজেশনের সুযোগের পরও বাংলাদেশ, মিয়ানমার, ভারত, ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনসহ যেসব দেশের বিদেশিকর্মী বৈধতার নামে প্রতারিত হয়েছেন সেসব কর্মীদের বৈধতা দিতে সবকটি দেশের দূতাবাস থেকে মালয়েশিয়া সরকারকে অনুরোধ জানানো হয়েছে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।
মালয়েশিয়া ইমিগ্রেশন বিভাগ জানিয়েছে, অবৈধ প্রবাসীদের সাধারণ ক্ষমার সুযোগ শেষ হওয়ার পর থেকেই নানা কৌশলে অভিযান শুরু করে দেশটির ইমিগ্রেশন পুলিশ। যেসব অবৈধ কর্মী সাধারণ ক্ষমার সুযোগ নেননি, তাদের আটক করা হচ্ছে। গত ১ আগস্ট থেকে সরকারের দেয়া সাধারণ ক্ষমা কর্মসূচির সুযোগ নিয়ে বিভিন্ন দেশের ১ লাখ ৯০ হাজার ৪৭১ জন দেশে ফিরে গেছেন।
অবৈধ অভিবাসীদের বিভিন্ন সুযোগ দেয়ার কারণেই অবৈধ অভিবাসীদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। সরকার আর কোনো সুযোগ দিতে চায় না। এদিকে পাঁচ বছরের মধ্যে পাঁচটি রূপরেখার মাধ্যমে বছরে ৭০ হাজার অবৈধ শ্রমিক বা অভিবাসীকে বিতাড়িত করার ঘোষণা দিয়েছেন দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
প্রসঙ্গত, গত ১ আগস্ট থেকে ‘ব্যাক ফর গুড’ কর্মসূচি চালু করে মালয়েশিয়ার সরকার। এ কর্মসূচির আওতায় সুযোগ নিয়ে এরই মধ্যে বাংলাদেশিসহ বিভিন্ন দেশের ১ লাখ ৯০ হাজার ৪৭১ কর্মী দেশে ফিরে গেছেন। এরপরও বিভিন্ন দেশের অবৈধ অভিবাসীও রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে টানা অভিযান পরিচালনা করছে অভিবাসন বিভাগ। এর আগে, ২০১৬ সালে অবৈধকর্মীদের বৈধ হওয়ার সুযোগ দিয়েছিল মালয়েশিয়ার সরকার। ওই সময় বৈধ হতে আবেদন করেছিলেন প্রায় ছয় লাখ বাংলাদেশি শ্রমিক। তবে শেষ পর্যন্ত বৈধ হওয়ার সুযোগ পান ২ লাখ ৮০ হাজার ১১০ জন।