সরকারি-বেসরকারি যে খাতেই হোক বাংলাদেশের মানুষ কাজ করে বাঁচতে চায়। কিন্তু সে আকাঙ্খা দেশীয়ভাবে পূরণ না হওয়ায় পরিবার ও দেশের মায়া ত্যাগ করে প্রতিনিয়ত বিদেশে পাড়ি দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে যুব সমাজ।
বিদেশে বাংলাদেশি প্রতি চারজনের তিনজন কাজ করছেন মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান, কাতার ও মালয়েশিয়ায়। মালয়েশিয়ায়ও প্রচুর পরিমাণ বাংলাদেশি কর্মী রয়েছেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশের সমৃদ্ধির জন্য প্রবাসী আয় একটি সম্ভাবনাময় খাত। প্রতি বছরই বিপুল পরিমাণ অর্থ প্রবাস থেকে দেশে আসে। বর্তমানে প্রবাসে রয়েছে এক কোটির বেশি বাংলাদেশি। প্রতি বছরই দেশে নতুন করে প্রায় ২০ লাখ কর্মক্ষম শ্রমশক্তি যুক্ত হচ্ছে। যে হারে শ্রমশক্তি যুক্ত হচ্ছে, সে হারে দেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে না। ফলে বেকারের হার প্রতিনিয়তই বাড়ছে।
মানবসম্পদকে দেশে বিদেশে কাজে লাগাতে পারলে দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করা সম্ভব। এজন্য সরকার মালয়েশিয়া সরকারের সাথে কূটনৈতিক তৎপরতা বৃদ্ধি করে কর্মী প্রেরণে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন- এটাই কর্মমুখী মানুষের একমাত্র প্রত্যাশা এবং মালয়েশিয়ায় শ্রমিক রপ্তানি বাড়ানো গেলে এ আয় আরও বাড়বে।
বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য বন্ধ থাকা মালয়েশিয়া শ্রমবাজাটি পুনরায় উন্মুক্ত করতে দেশটির সাথে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে সরকার।
এদিকে জীবিকার তাগিদে বিদেশ যেতে ইচ্ছুক শ্রমিকরা জানান, মালয়েশিয়ার শ্রম বাজার চালু না থাকলেও দালালদের কাছে দ্বিগুণ টাকা দিয়ে রেখেছেন তারা।
প্রকৃত অর্থে মালয়েশিয়ার স্বপ্ন দ্রষ্টা, উন্নয়নের স্থপতি জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে ক্ষমতায় না আসলে হয়তো মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে সরকারি মদদপুষ্ট আদম ব্যবসায়ীদের রাহুগ্রাস বন্ধ হত না। ক্ষমতাচ্যুত সাবেক সরকারের সময় বাংলাদেশ সরকারের তরফে সকল এজেন্সিকে লোক প্রেরণের ক্ষেত্রে সুযোগ দেয়ার জন্য অনুরোধ করা হলেও কোনো প্রকার ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
উল্টো ১০ কোম্পানির সুযোগ সুবিধাকে বেশি করে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। ফলে ৪০ হাজার টাকার স্থলে ৩-৪ লাখ টাকা পর্যন্ত আদায় করে ভাগবাটোয়ারা করা হয়েছে। বর্তমান মাহাথির মোহাম্মদের সরকার মালয়েশিয়ার উন্নয়নে কাজ করবেন, এতে কোনো সন্দেহ নেই। মালয়েশিয়ার অর্থনৈতিক উন্নয়নে বাংলাদেশিদের ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য। এখনও মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি কর্মীদের প্রচুর কদর রয়েছে।
কারণ, আমাদের দেশের কর্মীরা কর্মঠ এবং আন্তরিক। যাদের প্রেরিত অর্থে আমাদের অর্থনীতি সমৃদ্ধ হচ্ছে। যারা কাজের আশায় অবৈধপথে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাগর পাড়ি দিয়েছেন। অনেককেই সাগরে ডুবে মরতে হয়েছে। ভাগ্যক্রমে কেউ কেউ কিনারের দেখা পেলেও বনে জঙ্গলে মাসের পর মাস পালিয়ে থেকে কাজ খুঁজতে হয়েছে।
প্রবাসীরা আশা করছেন, মানব সম্পদকে কাজে লাগাতে মালয়েশিয়ার বর্তমান সরকার আন্তরিক হবেন। শত অনিয়ম, নির্যাতন বন্ধে কার্যকরী ব্যবস্থা নেবেন। ইতোমধ্যেই আমাদের দেশের দুর্নীতি দমন কমিশন মানবপাচারে জড়িতদের অনিয়ম খতিয়ে দেখতে তদন্ত শুরু করলেও তা আলোর মুখ দেখেনি। কারণ বাংলাদেশের দুর্নীতিবাজদের শিকড় অনেক গভীরে। তারা পরম ক্ষমতাশালী। যারা পর্দার আড়ালে থেকে কলকাঠি নাড়েন।
সবসময় থেকে যান ধরাছোঁয়ার বাইরে। আবার কোনো কোনো সময় চুনোপুটিরা ধরা পড়ে যায়। আর বড় কোনো নতুন ঘটনার নিচে চাপা পড়ায় তদন্ত কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়ে যায়। এসব ঘটনা হর হামেশাই ঘটছে। অধিক জনসংখ্যাই আমাদের মানবসম্পদ।
এ বিষয়ে প্রবাসীদের নিয়ে সোচ্চার সংগঠনগুলো সরকারকে বারবার দাবি জানিয়ে আসলেও অজ্ঞাত কারণে সরকার চুপ রয়েছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি সর্বাগ্রে অভিবাসনের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হলে বাংলাদেশ বেশি উপকৃত হবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
আহমাদুল কবির, মালয়েশিয়া