মুসলিমদের পবিত্র ধর্মীয় গ্রন্থ কুরআন শরীফসহ সব ধর্মীয় গ্রন্থ নতুন করে লেখার পরিকল্পনা করছে চীন। দেশটির ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির সমাজতান্ত্রিক মতাদর্শের আদলে ধর্মগ্রন্থগুলো পুনর্লিখনের বিষয়ে গত নভেম্বরে দলটির জাতিতত্ত্ব বিষয়ক কমিটির এক সভায় এ পরিকল্পনা করা হয়।
গত বুধবার তুরস্কের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম ডেইলি সাবাহ’র এক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, কোরআন ও বাইবেলের উল্লেখ সরাসরি না করলেও চীনের ওই কমিটি সব ধর্মগ্রন্থের পুনর্লিখনের জন্য বিস্তৃত পর্যালোচনার পরিকল্পনা করছে।
বর্তমানের সঙ্গে ধর্মগ্রন্থের যেসব উপাদান সমাজতান্ত্রিক মতাদর্শের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়, সেসবে পরিবর্তন আনা হবে। এতে সমাজতন্ত্রের সঙ্গে কোনো সাংঘর্ষিক তথ্য থাকবে না। দেশটির প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের শাসনামলের সঙ্গে এসব ধর্মগ্রন্থকে সামঞ্জস্যপূর্ণ করা দরকার বলে জানিয়েছে ওই কমিটি। পুনর্লিখিত সংস্করণে সমাজতন্ত্রের ভাবাদর্শের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কোনো ধরনের উপাদান থাকলে সেসব সেন্সর বোর্ড সংশোধন করবে। নতুন সংস্করণে রাখা হবে না এমন কোনো বিষয়বস্তু, যা ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির বিশ্বাসের বিরুদ্ধে যায়।
চীনের সরকারি সংবাদসংস্থা সিনহুয়া’র প্রতিবেদনে বলা হয়, গত মাসে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির ১৬ জন বিশেষজ্ঞ ও বিভিন্ন ধর্মের প্রতিনিধিদের একটি দল এই সম্মেলনে অংশ নিয়েছিল। সম্মেলনটির তত্ত্বাবধানে চীন সরকারের পলিটিক্যাল কনস্যুলেটিভ কনফারেন্সের চেয়ারম্যান ওয়াং ইয়াং। ওই বৈঠকে বিশেষজ্ঞ এবং কমিটির প্রতিনিধিদের বলা হয়েছে, সমাজতন্ত্রের মৌলিক মূল্যবোধের সঙ্গে মিল রেখে তাদের বিশ্বাসকে ব্যাখ্যা করার জন্য ধর্মগ্রন্থের পুনর্লিখিত সংস্করণে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের আদেশ অনুসরণ করতে হবে।
এ বিষয়ে ওয়াং জোর দিয়ে বলেছেন যে, ধর্মীয় কর্তৃপক্ষকে বাধ্যতামূলকভাবে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের নির্দেশনা অনুসরণ করতে হবে এবং ‘সমাজতন্ত্রের মূল্যবোধ’ এবং ‘যুগের প্রয়োজনীয়তা’ অনুসারে ধর্মীয় আদর্শের ব্যাখ্যা করতে হবে। এছাড়াও তিনি ‘চীনা বৈশিষ্ট্যযুক্ত একটি ধর্মীয় ব্যবস্থা’ গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
চীনের বিরুদ্ধে সংখ্যালঘু উইঘুর মুসলিমদের বন্দি শিবিরে আটকে রেখে যখন মৌলিক মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং নিপীড়নের অভিযোগে বিশ্বের বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন ও দেশ সমালোচনা করছে, তখন ধর্মীয় সব গ্রন্থ পুনর্লিখনের এই পরিকল্পনার তথ্য এলো।
জাতিসংঘের দেয়া তথ্যমতে, জিনজিয়াং প্রদেশে চীন ১০ লাখের বেশি উইঘুর মুসলিমকে আটকে রেখেছে। তবে দেশটির ক্ষমতাসীন সরকার বলছে, প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় উইঘুর মুসলিমদের কারিগরি প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে।
সূত্র: ডেইলি মেইল।