যুক্তরাষ্ট্রবাসীদের বেশিরভাগই ইউরোপ সম্পর্কে ধারণা কম। তারা বছরে ১০ দিনও ছুটি কাটাতে চায় না। সব সময়ই টাকার পেছনে ছুটে বেড়ায়। তাদের দৌড় নায়াগ্রা ফলস, লাস ভেগাস, মায়ামি পর্যন্ত। খুব বেশি হলে বৃহত্তর কানাডা। কানাডিয়ান ও আমেরিকানদের তেমন কোনো তফাত নেই। তবে আমেরিকান থেকে কিছুটা শান্ত কানাডিয়ানরা।
কোনো একদিন যুক্তরাষ্ট্রের এক উবারচালকের সঙ্গে খোশগল্পে মেতেছিলাম। তার কাছে আমার ইউরোপের কাহিনি শেয়ার করেছিলাম। ইউরোপ থেকে ক’দিন আগেই এসেছি যে কারণে কাউকে কিছু শোনানোর জন্য মনটা অস্থির হয়ে উঠেছিল। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে যথেষ্ট সময় কেটেছে আমার। ইউরোপের সব জায়গায় কিংবা শেনজেনভুক্ত দেশগুলিতে আমার পদচারণা ছিল।
উবারচালক জানতে চায়লো, হোয়াই ইউরোপ ইজ বেস্ট ফর ইউ? তার কাছে তুলে ধরলাম আমার ঘোরাঘুরির লম্বা কাহিনি। পুঁজিবাদ, শিক্ষা ব্যবস্থা, চিকিৎসা, অপরাধ, আইন-কানুন, ড্রাগস অ্যান্ড অ্যালকোহল, পেনশন ইত্যাদি বিষয়ে ফ্রিতেই ধারণা দিলাম। উবার চালকের সঙ্গে হুবহু কথোপকথন তুলে ধরা হলো-
পুঁজিবাদী : আমেরিকানদের বাইরে থেকে খুব গর্জিয়াস মনে হতে পারে কিন্তু ভেতরটা একদমই আলাদা। তারা টাকা ছাড়া কিছুই বোঝে না। প্রেম ভালোবাসার বড়ই অভাব তাদের ভেতর। তারা পুঁজিবাদ চর্চায় ব্যস্ত। সত্যি বলতে তারা মেকি। ‘পৃথিবীতে সবচাইতে শান্তিপূর্ণ যে সাতটি দেশ তার মধ্যে নরওয়ে শীর্ষে। দেশটিতে অপরাধীর সংখ্যা খুবই কম। আমি নরওয়েতে বেশ কয়েক বছর থেকেছি। কোনোদিন মনে হয়নি আমার সমস্যা হতে পারে। এ ছাড়া ইউরোপের বেশিরভাগ দেশই ঘুরে বেড়িয়েছি’।
শিক্ষা ব্যবস্থা : ইউরোপে পড়াশোনা করতে খুব বেশি টাকা লাগে না। একদম ফ্রিতে ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া সম্পন্ন করানো সম্ভব। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে ব্যয়বহুল। ৬০০০-১৫০০০ ডলার সেমিস্টারপ্রতি। এ ছাড়া ইউরোপের বেশকিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে টিউশন ফিও লাগে না। সে তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রে এমন কোনো বিশ্ববিদ্যালয় নেই যেখানে ফ্রিতে লেখাপড়া করা যায়।
চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য : চিকিৎসা সুবিধা সবথেকে বেশি ইউরোপে। বেশিরভাগ দেশেই বিনামূল্যে সেবা নেয়া যায়। দেশটিতে সামাজিক নিরাপত্তার জন্য ১১ শতাংশ টাকা কেটে নেয়। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের হিসাবটা পুরাই আলাদা। আবার যদি কেউ প্রাইভেট হেলথ ইন্সুরেন্স ছাড়া আমেরিকায় অ্যাম্বুলেন্স কল করে বা ইমারজেন্সি যায় তার বিপদের শেষ থাকবে না। আকাশ ছোঁয়া বিল আসবে। ১০০০০ ডলারের নিচে তো কথায় নেই।
অপরাধ প্রবণতা : যুক্তরাষ্ট্রে যত অপরাধ হয় সারা বিশ্বের কোথায় হয় না। তাদের ক্রাইম ইচ্ছে করেই মিডিয়ায় দেখায় না। কারণ, দেশের ভাবমূর্তির একটা ব্যাপার আছে। তাছাড়া দেশটিতে মিডিয়াকে কড়াভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের পুলিশগুলোও বেসামাল অবস্থায় থাকে সবসময়। রাস্তাঘাট, শপিংমল যেখানে সেখানেই নুন হতে চুন খসলেই পুলিশ বলে হাত উঁচু করে দেয়ালে দাঁড়া, না হলে হাত অ্যারোপ্লেনের মতো করে মাটিতে শুইয়ে পড়। এটা আবার কেমন নিয়ম? একটু নড়াচড়া করলে জায়গায় গুলি করে দেবে।
কিন্তু ইউরোপে কখনো এসব আজগুবি নিয়ম-কানুন শুনিনি। এ ছাড়া নরওয়েতে গত ১২ বছরে ২টা বুলেট ছুঁড়েছে পুলিশ। তাতে আবার কেউ আহতও হয়নি। আমার কথা শুনে উবার ড্রাইভার অবাক হয়ে গেছে। পুলিশ কখনো স্ক্যানডেনেভিয়ায় পিস্তল, পেপারস স্প্রে সাথে রাখে না, ইমারজেন্সি কিছু ছাড়া কোনোদিন স্ক্যানডেনেভিয়ায় পুলিশ অস্ত্র নিয়ে বের হয় না।
ড্রাগস অ্যান্ড অ্যালকোহল : আমেরিকানদের আরেকটা বড় সমস্যা আছে নেশা। ড্রাগস অ্যান্ড অ্যালকোহলে প্রতি ৫০ মিনিটে একজন মারা যায়। আর ইউরোপের যারা বেশি ড্রিঙ্কস করে তাদের ক্ষেত্রে এমনটা হয় না। ড্রাগস নেয়ার উপকরণ প্রত্যেকটা গ্রসারি শপে থাকে কিন্তু আমেরিকায় সেটা নেই বললেই চলে।
পেনশন ব্যবস্থা ইউরোপে বয়স বেশি হলে সরকার সমস্ত দায়িত্ব নেয়। দেখার কেউ না থাকলে সরকারের পক্ষে থেকে সবকিছু মেলে। একজন বৃদ্ধ তরুণ থাকা অবস্থায় যে বেতনে চাকরি করে তার ৫৫ শতাং টাকা অবসরে দেয়া হয়।
আর আমেরিকানরা পেনশনের টাকা থেকেও ৭ শতাংশ ট্যাক্স কেটে নেয়। আর্মি, নেভি ক্র, পুলিশ, সার্ভিসম্যান, ছাড়াও বেশকিছু পেশার মানুষ আমেরিকায় মানবেতর জীবন পার করে। এমনকি শেষ বয়সে গৃহহীন থাকে। এসব কারণেই বলব ইউরোপ সবসময়ই সেরা।
সৌজন্যে- জাগো নিউজ