চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় মুসলিম বিশ্বকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন মুসলিম নেতারা। বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) কুয়ালালামপুরে চার দিনব্যাপী ইসলামি শীর্ষ সম্মেলনের (কেএল সামিট) উদ্বোধনী দিনে তারা এ আহ্বান জানান।
মালয়েশিয়ার রাজা আল-সুলতান আবদুল্লাহ বলেন, আমার কাছে মুসলিম উম্মাহর ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা এবং আমাদের সম্প্রদায়ের উন্নতি-এই দুটি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মুসলমানরা তাদের দৈনন্দিন জীবনে ঐক্য অর্জনের জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এখন সময় এসেছে আমাদের ব্যক্তিগত প্রচেষ্টা প্রসারিত করার।
৫৬টি মুসলিম দেশের ৪৫০ জন প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া কেএল সামিটে বক্তব্য রাখেন শীর্ষ সম্মেলনের চেয়ারম্যান এবং মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ডা. মাহাথির মোহাম্মদ, তুরস্কের রাষ্ট্রপতি রিসেপ তাইয়িপ এরদোগান, ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি এবং কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি।
ডা. মাহাথির মোহাম্মদ তার বক্তব্যে বলেন, ‘সম্মেলনের উদ্দেশ্য ধর্ম নিয়ে আলোচনা করা নয়, বরং মুসলিম বিশ্বের পরিস্থিতি সম্পর্কে আলোচনা। একদিকে আমরা দেখছি মুসলিম দেশ ধ্বংস হচ্ছে, নাগরিকরা তাদের দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে, অমুসলিম দেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে। অন্যদিকে, আমরা দেখছি, মুসলমানরা সহিংস কর্মকাণ্ড চালিয়ে নিরীহ পুরুষ, মহিলা, শিশু, অসুস্থ এবং অক্ষমদের হত্যা করছে। এসব থেকে উত্তরণে বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে। সম্মেলনে আলোচনার মাধ্যমে আমরা খুঁজে পেতে পারি যে, আমাদের কী কী ভুল হয়েছে।’
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমরা আলোচনা করে সমাধান পেতে পারি। যদি কমপক্ষে ইসলামি বিশ্বকে জাগ্রত করার জন্য এই বিপর্যয়গুলোর অবসান না-ও করা হয়, অন্তত উম্মাহর সমস্যা এবং তার কারণগুলো স্বীকৃতি দেয়ার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।’
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিজয়ীদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত জাতিসংঘের সুরক্ষা কাউন্সিল (ইউএনএসসি) পুরোনো এবং মুসলিম দেশগুলোর স্বার্থ রক্ষা করছে না বলে মন্তব্য করেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়িপ এরদোগান। তিনি বলেন, বর্তমান ব্যবস্থা কেবলমাত্র ভেটো শক্তিধারী পাঁচটি দেশ-চীন, ফ্রান্স, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রকে নিয়ে গঠিত স্থায়ী সদস্যদের পক্ষে রয়েছে।
এরদোগান বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী সমস্যার এমন একটি সমাধান খুঁজে পাওয়া উচিত, যা স্বার্থভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তে মানুষ এবং বিবেককে কেন্দ্র করে হবে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আমরা যে সকল প্ল্যাটফর্মে অংশ নিয়েছি বা দায়িত্ব গ্রহণ করেছি, সেখানে আমরা মানবতা ও মুসলমানদের দ্বারা উত্থাপিত সমস্যাগুলো উপস্থাপন করেছি। আমরা ঘোষণা করছি যে, ন্যায়বিচার ও ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে বিশ্ব ব্যবস্থার একটি নতুন কাঠামো প্রয়োজন।’
মাহাথিরের বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করেন কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, মুসলিম উম্মাহর শান্তি-সমৃদ্ধিতে সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে।
চার দিনব্যাপী কুয়ালালামপুর সামিটে মুসলিম দেশগুলোকে রাজনীতি, অর্থনীতি, সুশাসন, উদ্যোক্তা, চতুর্থ শিল্পবিপ্লব এবং শিক্ষার আওতায় আনতে সহায়তা করার জন্য বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানা গেছে।