সংখ্যালঘুদের নাগরিকত্ব দিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দেয়া প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে পাকিস্তানের সংখ্যালঘু হিন্দুরা। একই সঙ্গে ধর্মের ভিত্তিতে তৈরি ভারতের সংশোধিত নতুন নাগরিকত্ব আইনের নিন্দা জানিয়েছেন তারা। ভারতের নতুন এই আইন অনুযায়ী, ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে প্রতিবেশী বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান থেকে ভারতে যাওয়া হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, পার্সি এবং জৈন সম্প্রদায়ের সদস্যরা সেদেশের নাগরিকত্ব পাবেন।
সমালোচকরা বলেছেন, ক্ষমতাসীন হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সরকার ধর্মনিরপেক্ষ প্রজাতন্ত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত ভারতে বিভাজন তৈরি করতে এ নতুন নাগরিকত্ব আইন তৈরি করেছে। এ আইনে মুসলিম শরণার্থীদের ব্যাপারে একই ধরনের বিধান রাখা হয়নি; যা ভারতের ধর্মনিরপেক্ষতার ভিত্তিকে দুর্বল করে দিয়েছে বলে মন্তব্য করেন অনেকেই।
বিতর্কিত এই আইনে মুসলিম শরণার্থীদের নাগরিকত্বের ব্যাপারে কিছু না বলায় ভারতজুড়ে তীব্র প্রতিবাদ-বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। তবে বিক্ষোভের দাবানল বেশি ছড়িয়ে পড়েছে দেশটির সরকারি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে।
দেশটির বিভিন্ন প্রান্তের শত শষত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এই আইনের বিরুদ্ধে গত কয়েকদিন ধরে টানা বিক্ষোভ পালন করে আসছেন। তাদের এই বিক্ষোভে অক্সফোর্ড ও হার্ভার্ড-সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও সমর্থন দিয়েছেন।
পাকিস্তান হিন্দু পরিষদের নেতা রাজা আসান মঙ্গলানি বলেছেন, সাম্প্রদায়িকভাবে ভারতকে বিভক্ত করার এই বিল পাকিস্তানের হিন্দু সম্প্রদায় দ্ব্যর্থহীনভাবে প্রত্যাখ্যান করছে। তিনি বলেন, এটি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে পাকিস্তানের সমগ্র হিন্দু সম্প্রদায়ের সর্বসম্মত একটি বার্তা। একজন সত্যবাদী হিন্দু কখনও এই আইনকে সমর্থন করবে না।
বিতর্কিত এই নাগরিকত্ব আইনের ভারতের সংবিধান লঙ্ঘন করেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। পাকিস্তানের পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ সিনেটের খ্রিষ্টান ধর্মীয় সদস্য আনওয়ার লাল দীন বলেন, এই আইনের উদ্দেশ্য হলো, এক সম্প্রদায়ের সঙ্গে আরেক সম্প্রদায়ের ফাটল তৈরি করা।
পাকিস্তান পিপলস পার্টির এই নেতা আরও বলেন, এটা মৌলিক মানবাধিকারের পরিষ্কার লঙ্ঘন। আমরা মোটাদাগে এটা প্রত্যাখ্যান করছি। অনৈতিক এবং অপ্রয়োজনীয় এই পদক্ষেপের মাধ্যমে মোদির সরকার এক সম্প্রদায়ের সঙ্গে আরেক সম্প্রদায়ের সংঘাত তৈরি করছে। পাকিস্তানের সংখ্যালঘু শিখ সম্প্রদায়ের নেতারাও ভারতের সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন প্রত্যাখ্যান করেছে।
সূত্র : আনাদোলু।