বিশ্বব্যাপী চলছে ইসলাম বিদ্বেষ ও মুসলিম নির্যাতন। মুসলিম বিদ্বেষ ও নির্যাতনে প্রতিবাদী হয়ে উঠছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বিখ্যাত ব্যক্তিরা। চীনের উইঘুর মুসলিমদের পক্ষে সাহসী অবস্থান নিয়েছেন জার্মান ফুটবলার মেসুত ওজিল। ভারতের এনআরসি নিয়ে আন্দোলনরত মুসলিম ছাত্রদের গ্রেফতারের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ভারতীয় ক্রিকেটার ইরফান পাঠান। উইঘুর মুসলিম নির্যাতন ও ভারতে ছাত্র গ্রেফতার নিয়ে তাদের উদ্বেগ ও প্রতিবাদী মন্তব্যের সাহসী অবস্থানকে মুসলিম উম্মাহ স্বাগত জানিয়েছেন।
শুক্রবার এক টুইটে চীনের সমালোচনা করেছেন তুর্কি বংশোদ্ভূত সাবেক জার্মান জাতীয় দলের খেলোয়াড় মেসুত ওজিল। উইঘুর মুসলিমদের ওপর চীনের অমানবিক নির্যাতনে মুসলিম উম্মাহর নীরবতা পালনের বিষয়েও হতাশা ব্যক্ত করেছেন ওজিল।
চীনের মুসলিম নির্যাতনে যখন মুসলিম উম্মাহ নিশ্চুপ ও নীরবতা পালন করছেন ঠিক সেই সময় মুসলিমদের পক্ষে জনমত গড়তে মেসিত ওজিলের সাহসী অবস্থানের প্রশংসা করেছেন মিসরের সাবেক তারকা ফুটবলার আবু তারিকাহ।
মেসুত ওজিলের সাহসী ও শক্তিশালী মন্তব্যের সমর্থনও করেন আবু তারিকাহ। চীনকে মুসলিমদের বিপক্ষে কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর কারণে তার ওপর বিরূপ মনোভাব প্রকাশ করেছে চীন সরকার। ফলে সিসিটিভিতে ওজিলের দল আর্সেনালের সঙ্গে ম্যানচেস্টার সিটির একটি ম্যাচ সম্প্রচার না করার ঘোষণাও দিয়েছে চীন।
উল্লেখ্য, ১৩ ডিসেম্বর মেসুত ওজিল তার ব্যক্তিগত টুইটারে উইঘুরদের বাসস্থানকে মুসলিম উম্মাহর ‘রক্তের মিনার’ বলে আখ্যায়িত করেন। পশ্চিমা সব গণমাধ্যম যখন উইঘুর মুসলিমদের ওপর চীনের অমানবিক নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরছে তখনও মুসলিম বিশ্ব নীরবতা পালন করছে। বিষয়টি তাকে অবাক করছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
ওজিল বলেন, ‘পূর্ব তুর্কিস্তানে পবিত্র কুরআনে আগুন জ্বালানো হচ্ছে, মসজিদে তালা দেয়া হচ্ছে, মাদরাসা বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে, একে একে হত্যা করা হচ্ছে ওলামায়ে কেরামকে, যুবকদের বন্দি করে দাসত্বের জীবনের সম্মুখীন করা হচ্ছে।’ এত কিছুর পরও মুসলিম বিশ্বের নীরবতায় আমি অবাক।
চীন কর্তৃক উইঘুর মুসলিমদের নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে ওজিল বলেন, পুরুষদের সেনা ছাউনিতে বন্দি করে প্রতিটি পরিবারের অন্তত একটি মেয়েকে জোরজবরদস্তি করে বিয়ে দেয়া হচ্ছে একজন কমিউনিস্ট পুরুষের সঙ্গে। প্রতিটি পরিবারেই একজন কমিউনিস্ট এই মিশন বাস্তবায়ন করছে চীন সরকার।
ওজিল আরও উল্লেখ করেন, এ সংকটাপন্ন পরিস্থিতিতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উম্মত নীরব, তাদের তরফ থেকে কোনো আওয়াজ নেই, প্রতিবাদ নেই। উইঘুর মুসলিম ভাইদের প্রতিরক্ষার জন্য কার্যত কোনো ভূমিকাই তারা গ্রহণ করছে না। তারা কি জানে না যে, জুলুম-অত্যাচারে সম্মতি আরেকটি ভিন্ন জুলুম!
উইঘুর মুসলিমদের জন্য দোয়া করে ওজিল তার টুইটে লেখেন- ‘হে মহান প্রতিপালক! পূর্ব তুর্কিস্তানে আমাদের উইঘুর ভাইদের সঙ্গে থাকো। আল্লাহ চক্রান্তকারীদের জন্য উত্তম প্রতিশোধ গ্রহণকারী।
এদিকে ভারতীয় ক্রিকেটার ইরফান পাঠানও মুসলিম ছাত্রদের গ্রেফতারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। সম্প্রতি ভারতজুড়ে এনআরসি নিয়ে তুমুল উত্তেজনা বিরাজ করছে। এনআরসি বিল পাস নিয়ে আন্দোলনে উত্তাল পুরো ভারত। দিল্লির বিখ্যাত জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ও এ আন্দোলনে অংশ নিয়েছে। তারা শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ করছে।
ভারতের বর্ণবাদী ও ইসলামবিদ্বেষী নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদী শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে বর্বর নৃশংসতা চালিয়েছে ভারতীয় পুলিশ। গ্রেফতার করেছে অনেক মুসলিম ছাত্রকে। পুলিশের নৃশংসতা ও গ্রেফতারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ক্রিকেটার ইরফান পাঠান।
পুলিশের নৃশংসতা ও গ্রেফতারের পর এক টুইট বার্তায় ইরফান পাঠান বলেন, ‘রাজনৈতিক দোষারোপের খেলা চিরদিন চলবে। কিন্তু জামিয়া মিলিয়ার শিক্ষার্থীদের নিয়ে আমি ও আমার দেশ উদ্বিগ্ন।’ জামিয়ায় পুলিশের নৃশংসতা ও ধরপাকড়ের প্রতিবাদে আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ও চলছে বিক্ষোভ। সেখানে পুলিশের হামলায় আহত হয়েছেন ৩০ শিক্ষার্থী।
মুসলিম বিদ্বেষ, নির্যাতন ও সহিংসতায় বিখ্যাত দুই খেলোয়াড় মেসুত ওজিল ও ইরফান পাঠানের উদ্বেগ ও সাহসী প্রতিবাদ বিশ্বব্যাপী মুসলিম উম্মাহর কাছে হয়েছে প্রশংসিত। এখনই সময়- বিশ্বব্যাপী মুসলিমদের উপর চলা অত্যাচার নির্যাতন বন্ধে মুসলিম উম্মাহর ঐক্যবদ্ধ হওয়া।