Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

nagorik-lawমুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গতকাল শুক্রবার গণআন্দোলনের ডাক দেয়ার পর থেকেই রাস্তায় নামে বিক্ষোভকারীরা। শনিবার সকালে নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে দফায় দফায় শুরু হয়েছে বিক্ষোভ ও রেল-সড়কপথ অবরোধ। বাস-গাড়িতে ভাঙচুরের ঘটনার সঙ্গে গোটা রাজ্যে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ছে।

কলকাতার দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, দেশের উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলোর পাশাপাশি শুক্রবারে এই আইনের প্রতিবাদে বিক্ষোভের আঁচ এ পশ্চিমবঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে। গতকাল দুপুর থেকেই অশান্ত হয়ে ওঠে উলুবেড়িয়া, মুর্শিদাবাদের বেলডাঙাসহ রাজ্যের বেশ কিছু অঞ্চল। বিক্ষোভের আঁচ পড়েছে কলকাতাতেও।

chardike-ad

মমতা সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে গতকাল বলেন, পশ্চিমবঙ্গে নাগরিক পঞ্জি কিংবা নাগরিকত্ব আইন কার্যকর করতে দেবেন না। বিক্ষোভকারীদের শান্তিপূর্ণ উপায়ে আন্দোলন করার আহ্বান জানান তিনি। কিন্তু মমতার আন্দোলনের ডাকে সাড়া দিলেও শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ হচ্ছে না। বিক্ষুব্ধ মানুষজন বিভিন্ন স্থানে আগুন দিচ্ছেন।

শনিবার সকাল থেকেই ডোমজুড়ের সলপ মোড়ে ছয় নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ চলছে। কোনা এক্সপ্রেসওয়েতে টায়ার জ্বালিয়ে প্রতিবাদ জানান বিক্ষোভকারীরা। বেশ কয়েকটি সরকারি বাসে ভাঙচুর চালানোর অভিযোগ উঠেছে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে।

ছত্রভঙ্গ করতে গেলে পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর ছোড়া শুরু করেন বিক্ষোভকারীরা। পাল্টা প্রতিরোধের অংশ হিসেবে লাঠিচার্জ করে পুলিশ। শিয়ালদহ ডিভিশনের বারাসত-হাসনাবাদ শাখায় বিক্ষোভের জেরে ট্রেন চলাচল বন্ধ সকাল ৭টা থেকে। হাসনাবাদ শাখার সোঁদালিয়া-লেবুতলা স্টেশনের মাঝেও অবরোধ করা হয়।

অপরদিকে লক্ষ্মীকান্তপুর-নামখানা শাখায় রেলের ওভারহেড তারে কলাপাতা ফেলে প্রতিরোধ করেন বিক্ষোভকারীরা। তারপর সকাল ৮টা থেকেই ওই শাখায় ট্রেন চলাচল বন্ধ। মালদহ ডিভিশনের আজিমগঞ্জ শাখাতেও বিক্ষোভের জেরে ট্রেন চলাচল বন্ধ। বিভিন্ন স্টেশনে অনেক ট্রেন আটকে পড়ায় বিপত্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা।

এছাড়া জঙ্গিপুর ও মহিপালসহ বিভিন্ন স্টেশনে ট্রেন দাঁড়িয়ে রয়েছে। বাসুদেবপুরে হল্ট স্টেশনে আগুন ধরিয়ে দেন বিক্ষোভকারীরা। সাঁকরাইলে অবরোধেরে জেরে হাওড়ার দক্ষিণ-পূর্ব শাখায় ট্রেন চলাচল ব্যাহত হয়। বিভিন্ন স্টেশন থেকে ছাড়াতে পারছে না স্থানীয় ও দূরপাল্লার ট্রেন।

এর আগে গত শুক্রবার উলুবেড়িয়া স্টেশনে ব্যাপক ভাঙচুর চালায় বিক্ষোভকারীরা। লন্ডভন্ড করে দেয়া হয়ে গোটা স্টেশন চত্বর। টিকিট কাউন্টার বন্ধ থাকায় চরম অসুবিধায় পড়েন সাধারণ যাত্রীরা। অস্থায়ী টিকিট কাউন্টার খুলে আপাতত টিকিট দেয়ার কাজ চলছে বলে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।

বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে বীরভূমেও। নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে মুরারইয়ে রেল অবরোধের জেরে ডাউন শতাব্দী এক্সপ্রেস বাঁশলই স্টেশনে দাঁড়িয়ে রয়েছে। সেখান থেকে ট্রেনটিকে যেতে দিচ্ছে না বিক্ষোভকারীরা। এদিকে সদ্য পাস হওয়া ওই আইনের প্রতিবাদে উত্তরপূর্ব ভারতের আসামসহ ৫টি রাজ্যে ব্যাপক বিক্ষোভ চলছে।

ভারতে সদ্যপ্রণীত অমুসলিমদের নাগরিকত্ব প্রদান সংক্রান্ত বিতর্কিত আইন না মানার ঘোষণা দিয়ে গতকাল গণআন্দোলনের ডাক দেন মমতা বন্দোপাধ্যায়। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর পর দিল্লি, পঞ্জাব, ছত্তিসগড়, কেরালা ও মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীরা আইনটি কোনোভাবে তাদের রাজ্যে প্রয়োগ করতে দেবেন না বলে হুমকি দিয়েছেন।

কিন্তু কেন্দ্রীয় আইনের প্রয়োগ কোন পথে ঠেকাবে রাজ্যগুলো সে প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে। দেশটির কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে জানিয়েছে, ভারতীয় সংবিধানের সপ্তম তফসিলে অন্তর্ভূক্ত নাগরিকত্বের বিষয়টি কেন্দ্রীয় সরকারের এখতিয়ারভূক্ত। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, সব রাজ্য ওই আইন মানতে বাধ্য।

প্রসঙ্গত, ভারতের ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইনে এই সংশোধনে গত সোমবার ভারতীয় পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ লোকসভায় একটি বিল (সিএবি) উত্থাপন করনে অমিত শাহ। ব্যাপক বিতর্কের পর সেদিন মধ্যরাতে বিলটি পাস হয়। এরপর গত বুধবার রাজ্যসভাতেও বিলটি পাসের পর রাষ্ট্রপতি গত বৃহস্পতিবার স্বাক্ষর করায় সেটি এখন আইন।

নতুন এই আইন অনুযায়ী, ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত অর্থাৎ ২০১৫ সালের আগে প্রতিবেশী পাকিস্তান, আফগানিস্তান এবং বাংলাদেশ থেকে ‘ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার’ হয়ে যেসব অমুসলিম (হিন্দু, শিখ, খ্রিষ্টান, জৈন, পারসি ও বৌদ্ধধর্মাবলম্বীরা) ভারতে গেছেন তাদেরকে ভারতীয় নাগরিকত্ব প্রদান করা হবে।

বিরোধী দলের এমপিরা পার্লামেন্টে মোদি সরকারের প্রস্তাবিত এই বিলটিতে আপত্তি জানালেও একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় বিলটি পাসে কোনো বেগ পেতে হয়নি সরকারকে। বিরোধীরা বলছেন, নতুন আইনের মাধ্যমে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষদের নাগরিক সুরক্ষাকে উপেক্ষা করা হবে, যা ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

বাংলাদেশ সীমান্ত সংলগ্ন রাজ্য আসামসহ উত্তরপূর্ব ভারতে বিক্ষোভকারীদের দাবি, আইনটির মাধ্যমে অন্য দেশ থেকে আসা অভিবাসীরা সহজেই এ দেশের (ভারতের) নাগরিকত্ব পাবেন। তাতে সংকটে পড়বেন আদি বাসিন্দারা। তবে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ বলেছেন, আইনটিতে উত্তরপূর্বের অনেকটা অংশই বাদ দেয়া হয়েছে।