বাবা থাকেন জাপানে, মা ফিলিপাইনে। ঢাকার সাভারে সত্ মায়ের কাছে এক প্রকার বন্দী জীবনযাপন করছে শিশু দুটি। এখন ফিলিপাইনে মায়ের কাছে ফিরতে চায় তারা। অন্যদিকে বাবা জাপান প্রবাসী গিয়াস উদ্দিন বাবু তাদের দেশেই রাখতে চান। বাবা-মায়ের এই দ্বন্দ্বে দারুণ বিপাকে পড়েছে ফিলিপাইনি নাগরিক বব ডেসকারগার (১০) ও রাব্বী ডেসকারগার (৮)।
জানা গেছে, তারা দুজনই ফিলিপাইনের নাগরিক। একটি ফ্ল্যাটে দীর্ঘদিন ধরে আটক থেকে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে তারা। ফিলিপাইনে থাকা তাদের মা সাভার থানাকে বিষয়টি অবহিত করলেও পুলিশ এখনো কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। তাদের বাবা বাংলাদেশি নাগরিক জাপান প্রবাসী গিয়াস উদ্দিন বাবু মুঠোফোনে সাংবাদিকদের জানান, লেখাপড়া করানোর জন্যই তার সন্তানদের তিনি বাংলাদেশে তার দ্বিতীয় স্ত্রীর কাছে রেখে গেছেন তিনি।
রবিবার দুপুরে পৌর এলাকার ব্যাংক কলোনী মহল্লার ঊষা গার্ডেন সিটির দ্বিতীয় তলার ওই ফ্ল্যাটে গিয়ে দেখা যায়, শিশুদুটি একটি কক্ষে রয়েছে। বাসায় এক মহিলা গৃহকর্মী ছাড়া আর কেউ নেই। গৃহকর্মী জানান, কয়েকদিন আগে গিয়াস উদ্দিন বাবুর দ্বিতীয় স্ত্রী তামান্নার বাবা মারা যাওয়ায় তিনি রাজবাড়ীতে চলে গেছেন। প্রতিদিন হোটেল থেকে শিশু দুটির জন্য খাবার আনা হয়। এভাবেই কয়েকদিন ধরে চলছে। বর্তমানে শিশু দুটি এখানে থেকে ফিলিপাইনে যাওয়ার করুন আকুতি জানিয়েছে।
ভবন মালিক জামাল উদ্দিন জানান, ২০১৪ সালে গিয়াস উদ্দিন বাবু ও তার ফিলিপাইনের নাগরিক স্ত্রী রিজা ডেসকারগার বাংলাদেশে আসেন। তারা ভবনের একটি ফ্ল্যাট ক্রয় করেন। এরপর তারা দুজনই জাপান চলে যান। এরপর দুজনের মধ্যে দাম্পত্য কলহ সৃষ্টি হয়। ২০১৭ সালে বাবু দেশে এসে তামান্না নামের এক মেয়েকে বিয়ে করেন। এ ঘরে তাদের একটি ছেলে সন্তান হয়। ছয় সাত মাস আগে বাবু তার প্রথম স্ত্রীর শিশু দুটিকে নিয়ে বাংলাদেশে আসেন। পরে দ্বিতীয় স্ত্রীর কাছে রেখে গত সেপ্টেম্বর মাসে জাপান চলে যায়। এরপর থেকে তারা সত্ মায়ের কাছেই রয়েছে।
শিশু দুটি জানায়, এখানে তাদের থাকতে কষ্ট হচ্ছে। খাবার দাবার ঠিকমত পেলেও তারা ঘরের বাইরে যেতে পারছে না। ফিলিপাইনের একটি স্কুলে তারা ক্লাস ফাইভে পড়াশুনা করত। তারা এখন স্কুলে যেতে পারছে না। তাই তারা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে। মায়ের কাছে ফিরতে চায় তারা।
শিশু দুটির বাবা জাপান থেকে টেলিফোনে জানান, ফিলিপাইনের নাগরিক রিজা ডেসকারগার জাপানে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। এর সূত্র ধরেই তার সম্পর্ক তৈরি হয় ও পরবর্তীতে বিয়ে হয়। তাদের ঘরে ওই দুই সন্তানের জন্ম হয়। কিন্তু বিয়ের পর থেকেই তার স্ত্রী তার কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে তার এক বন্ধুর সাথে অবৈধ সম্পর্ক গড়ে তোলে এবং সেই ঘরে আরো একটি সন্তান হয়। এরপর থেকেই তাদের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটে। এ কারণেই তিনি তার সন্তানদের বাংলাদেশে নিয়ে এসেছেন।
শিশু বিশেষজ্ঞ ডাঃ মোঃ রফিক বলেন, শিশুদের একটি ঘরে আটকে রাখলে তাকে শারীরিক ও মানসিক দুটোরই মারাত্মক সমস্যা হতে পারে।
সাভার মডেল থানায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এএফএম সায়েদ জানান, এ বিষয়ে এখনও কোন লিখিত অভিযোগ পাইনি। শিশুদুটির মা ফিলিপাইনের নাগরিক বাংলাদেশে আসবে বলে জানতে পেরেছি। তিনি এলেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।