দক্ষিণ-পশ্চিম ইউরোপের দেশ পর্তুগাল। আইবেরীয় উপদ্বীপের পশ্চিম অংশে আটলান্টিক মহাসাগরের উপকূলে অবস্থিত দেশটি। আটলান্টিক মহাসাগরের দুইটি স্বায়ত্তশাসিত দ্বীপপুঞ্জ আসোরেস এবং মাদেইরা দ্বীপপুঞ্জ নিয়ে গঠিত পর্তুগালের রাজধানী লিসবন। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে অবৈধভাবে বসবাসরত বাংলাদেশিরা চাইলে পর্তুগালে এসে বৈধতা নিতে পারেন।
১) যদি আপনি পর্তুগালে জন্মগ্রহণ করেন আর আপনার মা অথবা যে কোনো একজন পর্তুগিজ হয় তাহলে আপনি জন্মসূত্রে সাথে সাথে পর্তুগিজ জাতীয়তা পাবেন।
২) আপনি যদি পর্তুগালে জন্মগ্রহণ করেন আর আপনার বাবা-মা ৩য় কোনো দেশের নাগরিক হয় তাহলে আপনি ২ বছর থাকার পর জাতীয়তার জন্য আবেদন করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই পর্তুগালে প্রাইমারি স্কুল লেভেল শেষ করতে হবে। (১৮ বছরের নিচে যাদের জন্ম পর্তুগালে তাদের জন্য) তবে বর্তমানে আইনের কিছুটা পরিবর্তন এনেছেন দেশটির সরকার। যদি কোনো বাচ্চা পর্তুগালের টেরিটোরিতে জন্মগ্রহণ করে অথবা বাবার রেসিডেন্স পারমিটের বয়স ২ বছরের বেশি হয়ে থাকে তাহলে জন্মগ্রহণের পরপর নাগরিকত্বের জন্য বাচ্চার আবেদন জমা দিতে পারবেন।
৩) এ ছাড়া আপনি যদি পর্তুগালে বৈধভাবে ৫ বছরের বেশি এবং ৬ বছরের কম সময় অবস্থান করেন এবং পর্তুগিজ ল্যাঙ্গুয়েজ মিনিমাম A2 পর্যন্ত শেষ করেছেন এমন সার্টিফিকেট দেখাতে পারেন। তাহলে ৫ বছর পরই পর্তুগিজ সিটিজেনশিপের জন্য আবেদন করতে পারবেন। তবে এক্ষেত্রে আপনার নামে কোনো প্রকার মামলা বা মামলার সাজা ২ বছরের অধিক হতে পারবে না। অর্থাৎ কোনো প্রকার ক্রিমিনাল রেকর্ড থাকলে আপনি পাসপোর্ট পাবেন না।
৪) যদি আপনি পর্তুগিজ নাগরিক বিয়ে করেন বা লিভ টুগেদার করেন মিনিমাম ৩ বছর থাকেন (সিভিল রেজিস্ট্রি অফিসে রেজিস্ট্রার করে)। তাহলে ৩ বছর পর পর্তুগিজ পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে আপনাকে বিয়ে হলে অফিসিয়াল সার্টিফিকেট, আর লিভ টুগেদার হলে মিউনিসিপালিটিতে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে।
৫) যদি পর্তুগিজ নাগরিক কাউকে দত্তক নেয় তাহলে সে ৩ বছর থাকার পর দেশটির জাতীয়তা লাভ করবে।
৬) যদি আপনি পর্তুগালে জন্মগ্রহণ করেন এবং অবৈধভাবে ১০ বছর থাকেন তাহলে পর্তুগিজ সিটিজেনশিপের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
৭) যদি আপনি ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত কোনো দেশের নাগরিক বিয়ে করে পর্তুগালে ৫ বছর থাকেন তাহলেও আপনি পর্তুগিজ সিটিজেনশিপের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
উপরে উল্লিখিত নিয়ম অনুযায়ী আপনি পর্তুগিজ সিটিজেনশিপের জন্য আবেদন করতে পারবেন। এ ছাড়া বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন-
ustica.gov.pt, www.irn.mj.pt
নাগরিকত্বের আবেদন করতে কি কি ডকুমেন্টস লাগবে? কোথায় সত্যায়িত করতে হবে? জমা দেবেন কোথায়? কতদিন সময় লাগবে?
নাগরিকত্বের প্রধান শর্ত হলো অবশ্যই বৈধভাবে ৫ বছরের বেশি ৬ বছরের কম সময় পর্তুগাল অবস্থান করতে হবে। কোনো মামলায় পর্তুগাল কিংবা নিজ দেশে ২-৩ বছরের বেশি সাজায় সাজাপ্রাপ্ত নন অর্থাৎ আপনার নামে কোনো বড় ধরনের সাজা নেই।
যেসব ডকুমেন্টস লাগবে?
* বাংলাদেশ থেকে আপনার জন্ম সনদ (অরজিনাল)
* বাংলাদেশের পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট (অরজিনাল)
* পর্তুগিজ ভাষার দক্ষতার সনদ (A2 সার্টিফিকেট)
* পর্তুগালের পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট
প্রথমে বাংলাদেশ থেকে উপরের দুইটা জিনিস নোটারি পাবলিক, আইন মন্ত্রণালয় অথবা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সত্যায়িত করে নিতে হবে। এরপর বাংলাদেশ হাইকমিশন ইন নিউ দিল্লি থেকে সত্যায়িত করতে তবে। তারপর পর্তুগিজ কনস্যুলেট, অ্যাম্বাসি ইন নিউ দিল্লি থেকে সত্যায়িত করতে হবে। এরপর পর্তুগালে কিছু কাজ যেমন- পর্তুগিজ ভাষায় ট্রান্সলেশন করে সেখান থেকে নোটারি করতে হবে।
এসব ডকুমেন্টস একসাথে করে জমার দেয়ার জন্য যেকোনো Conservatórias ইংলিশে সিভিল রেজিস্ট্রি অফিস বলে। নিজেও জমা দিতে পারবেন কিংবা উকিল নিয়ে যেতে পারবেন। Conservatórias লিস্ট পাবেন এখানে। নাগরিকত্বের আবেদনের সাথে সাথে আপনাকে প্রসেস নম্বর দিয়ে দেবে কোনো কোনো সিভিল রেজিস্ট্রি অফিস আবার কারোটা মাসখানেক পরেও আসে।
লিসবনের ভেতরে একটু দেরি হয় পাসপোর্টের কাজ আর ইরের সিটিগুলোতে একটু দ্রুত হয়। মাথায় রাখতে হবে জমা যেখানেই দেন না কেন অনলাইন অ্যাকসেসের জন্য ১২ সংখ্যার নম্বর নেবেন- যা দিয়ে আপনি বাসায় বসে এ পূরণ করতে পারবেন। অনলাইনে ঘরে বসে করার ঠিকানা-
পাসপোর্টের আবেদন জমা দেয়ার পর কমপক্ষে ৫ থেকে ১০ মাস সময় লাগবে সম্পূর্ণ প্রসিডিউর শেষ হতে। অবশেষে একদিন আপনার নাগরিকত্বের আবেদন সম্পূর্ণ হবে আর আপনি পর্তুগিজ বনে যাবেন।