Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

shahjalalহযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রকল্পটির প্রথম পর্যায়ের কাজ সম্পন্ন করতে বাংলাদেশি মুদ্রায় মোট ব্যয় হবে ২০ হাজার ৫৯৮ কোটি ৬৪ লাখ ৮৪ হাজার টাকা। জাইকার অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে অ্যাভিয়েশন ঢাকা কনসোর্টিয়াম (এডিসি)।

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দিন দিন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের গুরুত্ব বেড়ে যাচ্ছে। বিদেশের বিপুলসংখ্যক উড়োজাহাজ এখন ঢাকায় আসছে। ঢাকা থেকে আবার বিশ্বের বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হচ্ছে। দিন দিন এ হার বাড়ছে। বিমানবন্দরের বিদ্যমান অবকাঠামো এবং আনুসঙ্গিক সুযোগ-সুবিধা দিয়ে এ চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে বিধায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় বিমানবন্দর সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

chardike-ad

প্রকল্পের আওতায় প্রধান কার্যক্রমগুলো হচ্ছে- টার্মিনাল ও সিকিউরিটি ইক্যুপমেন্টসহ দুই লাখ দশমিক ২৬ হাজার বর্গমিটারের নতুন প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল নির্মাণ, ট্যানেলসহ ৬২ হাজার বর্গমিটার মাল্টিলেভেল কার পার্কিং তৈরি, ৪১ হাজার ২০০ বর্গমিটার নতুন কার্গো কমপ্লেক্স, ৫ হাজার ৯০০ বর্গমিটার ভিভিআইপি কমপ্লেক্স তৈরি, ১ হাজার ৮৪০ বর্গমিটার রেসকিউ অ্যান্ড ফায়ার ফাইটিং স্টেশন ও ইকুইপমেন্ট ক্রয়, ৬৬ দশমিক ৮৭ লাখ ঘনমিটার ভূমি উন্নয়ন, ৪ দশমিক ৯৯ লাখ বর্গমিটার অ্যাপ্রোন তৈরি, এক লাখ বর্গমিটার ট্যাক্সিওয়ে নির্মাণ, ১ লাখ ৫৮ হাজার বর্গমিটার সোল্ডার তৈরি, ৮ লাখ ৩৮ হাজার বর্গমিটার জিএসই রোড এবং ৩৩ হাজার বর্গমিটার সার্ভিস রোড তৈরিসহ আনুষঙ্গিক বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে।

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এ প্রকল্পের অনুকূলে বাংলাদেশ সরকার ও জাইকার মধ্যে সম্পাদিত ঋণ চুক্তি অনুযায়ী গাইডলাইন ফর প্রকিউরমেন্ট আন্ডার জাপনিজ ওডিএ লোন এর আওতায় ক্রয় কার্য সম্পাদন করা হবে। প্রকল্পের অনুকূলে ঠিকাদার নিয়োগের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক দরপত্রে এক ধাপ দুই খাম পদ্ধতিতে সিপিটিইউ এর ওয়েবসাইটসহ দেশের কয়েকটি ইংরেজি ও বাংলা দৈনিক পত্রিকায় দরপত্র আহ্বান করা হয়। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মোট ২২টি দরপত্র বিক্রি হয়। দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি কর্তৃক কারিগরিভাবে উত্তীর্ণ দুইটি ফার্মের আর্থিক প্রস্তাব খোলা হয়। প্রকল্পের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান গত ৮ আগষ্ট প্রাপ্ত দরপত্রসমূহের আর্থিক প্রতিবেদন দাখিল করে।

এর আগে ১৬ জুলাই অনুষ্ঠিত বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দর দাতাদের কাছে তাদের দাখিলকৃত দরের ওপর ব্যাখ্যা চেয়ে চিঠি পাঠায়। দরদাতা প্রতিষ্ঠানসমূহের ২৩ এবং ২৫ জুলাই চিঠির মাধ্যমে তাদের উদ্বৃত দরের ওপর ব্যাখ্যা ও সংশোধনী পাঠায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২৫ জুলাই অনুষ্ঠিত মূল্যায়ন কমিটির বৈঠকে কারিগরিভাবে রেসপন্সিভ প্রতিষ্ঠান দুটির সংশোধিত উদ্বৃত দরের সিএ/ভ্যাট ছাড়া তুলনামূলক অবস্থান পর্যালোচনা করে মূল্যায়ন কমিটির বৈঠকে অ‌্যাভিয়েশন ঢাকা কনসোর্টিয়াম (এডিসি) প্রতিষ্ঠান সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে বিবেচনা নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে নেগোশিয়েসনের সিদ্ধান্ত দেয়া হয়।

সূত্র জানায়, এর মধ্যে প্রকল্পটি নিয়ে আইনি জটিলতার সৃষ্টি হয়। দরপত্র ক্রয়কারী একটি প্রতিষ্ঠান উচ্চ আদালতে একটি রিট পিটিশন দাখিল করে। পরবর্তীতে বেবিচক উক্ত রিট পিটিশনের ওপর রিভিউ আবেদন করলে আদালত গত ১৯ মার্চ স্থগিতাদেশ জারি করেন। গত ১৩ জুন তারিখে রিট পিটিশনকারী প্রতিষ্ঠান রিট পিটিশন প্রত্যাহার করায় অদালত পূর্ববর্তী রুল ডিসচার্জসহ অন্তবর্তীকালীন আদেশ প্রত্যাহার করলে আইনি জটিলতা দূর হয়।

প্রকল্পটি নিয়ে গত ১৩ অক্টোবর মূল্যায়ন কমিটির বৈঠকে আর্থিক প্রস্তাব মূল্যায়ন করা হয়। মূল্যায়ন কমিটি মতামত দেয় যে, আলোচ্য প্রকল্পের ডিপিপি মূল্য ১৩৬১৩ দশমিক ৪২ কোটি ( জিওবি ২৩৯৯ দশমিক ৬৪ + প্রকল্প সাহায্য ১১২১৪ দশমিক ৭৮ কোটি) টাকা। এদিকে দর দাতার দর জাপানিজ ইয়েন ১২৪,৮৭৫,৭৫৯,৩৪১ (উদ্বৃত জাপানিজ ইয়েন ১০৩,১৮৬,০৯২,৭৭৮ + প্রভিশনাল সাম জাপানিজ ইয়েন ২১,৬৮৯,৬৬৬,৫৬৩ অন্তর্ভুত) ও বাংলাদেশি টাকা ১১১,০১৮,৪৬৯,৭২২ (যার উদ্বৃত দর বাংলাদেশি টাকা ৪৯,৬৫৭,২৮৩,৩৯০+ প্রভিশনাল সাম বাংলাদেশি টাকা ১১,০০৭,৩৩৩,৪৫৬+আইটি/ভ্যাট বাংলাদেশি টাকা ২২,৫৫১,১৬৮,৩৫৩+যোজনকৃত সিডি/ভ্যাট বাংলাদেশি টাকা ২৭,৮০২,৬৮৪,৫২৪) সমন্বিত সর্বমোট বাংলাদেশি ২০ হাজার ৫৯৮ কোটি ৬৪ লাখ ৮৪ হাজার ৬৯৯ টাকা। যা অনুমোদিত ডিপিপি মূল্য থেকে ৩৯ দশমিক ৩ শতাংশ ও প্রাক্কলিত মূল্য থেকে ২৫ দশমিক ৭ শতাংশ বেশি (ভ্যাট, ট্যাক্স ও আইটি বাদে) মূল্যে অ‌্যাভিয়েশন ঢাকা কনসোর্টিয়াম প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। প্রস্তাবটি অনুমোদনের জন্য বুধবার সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে বলে জানা গেছে।

বর্তমানে বাংলাদেশে ৮টি বিমানবন্দর রয়েছে। এর মধ্যে তিনটি আন্তর্জাতিক ও পাঁচটি অভ্যন্তরীণ। এগুলোর মধ্যে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটি দেশের অন্যতম। বাংলাদেশে ১৭টি বিমান সংস্থার বিমান চলাচল করছে এবং এ বিষয়ে ৫২টি দেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি রয়েছে। এ বিমানবন্দরের বছরে প্রায় ৮০ লাখ যাত্রী পরিবহন হ্যান্ডলিং সক্ষমতা রয়েছে। তবে দেশের বিমান পরিবহন চাহিদা বিবেচনায় এটির অবকাঠামো পর্যাপ্ত নয়। বিদ্যমান বিমান প্যাসেঞ্জার টার্মিনালটির মাধ্যমে আধুনিক ও বড় বোয়িং ৭৪৭-৮ এফ, ৭৭৭-৩০০ ইআর বিমান অবতরণ ও উড্ডয়নের জন্য বিমানবন্দরটি যথেষ্ট নয়।

২০১৫ সালে কোরিয়া এবং সিঙ্গাপুরের দুটি পরামর্শক ফার্ম বিমানবন্দরটি সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়নের জন্য একটি সমীক্ষা পরিচালনা করে। এর মাধ্যমে ২০৩৫ সাল পর্যন্ত মাস্টার প্ল্যান আপডেট করা হয়েছে। এছাড়া নতুন তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণসহ অন্যান্য অবকাঠামো ডিজাইন করা হয়েছে। এয়ার ট্রাফিকের বর্ধিত চাহিদা বিবেচনায় বর্তমান টার্মিনালটির ধারণ ক্ষমতা ২০১৮ সালে অতিক্রম করেছে। ২০১৫ সালের ১৪ মিলিয়ন যাত্রী ২০৩৫ সালের মধ্যে ২৪ দশমিক ৮ মিলিয়ন যাত্রী বৃদ্ধি পাবে বলে সমীক্ষায় ওঠে এসেছে। এসব বিবেচনায় নিয়ে জাপান সরকারের আর্থিক সহায়তায় বিমানবন্দরটিতে একটি নতুন টার্মিনাল নির্মাণসহ অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণের জন্য বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় উদ্যোগ নিয়েছে।

সৌজন্যে- রাইজিংবিডি