কাঙ্ক্ষিত জমির সন্ধানে জাপানি বিশেষজ্ঞদের দৌড় এখনও বন্ধ হয়নি। সরকারের পছন্দের শীর্ষে ছিল শরীয়তপুর জেলার চরজানাজাত, আড়িয়াল বিল। পরে জানানো হলো পদ্মার পাড়েই হবে স্বপ্নের বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর।
চলতি বছরের শুরুতে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ও সচিব ওই ঘোষণা দেন। কিন্তু গত সাত-আট মাস এ নিয়ে কোনো কথা নেই। পরামর্শক প্রতিষ্ঠান জাপানি ‘নিপ্পন কই’র সামান্য কার্যক্রম ছাড়া উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি দৃশ্যমান নয়।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) এ ধীরগতির কথা মানতে নারাজ। গত শনিবার সকালে বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান বলেন, বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্মাণকাজের প্রক্রিয়া বন্ধ নেই। পরামর্শক প্রতিষ্ঠান তাদের কাজ শেষ করেছে। এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন বেবিচকের পক্ষ থেকে মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয় তাদের সুবিধা মতো সময়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণের পরবর্তী কার্যক্রম শুরু করবে।
তিনি আরও বলেন, এ মুহূর্তে দেশের বিভিন্ন বিমানবন্দরের সংস্কারকাজের প্রতি মন্ত্রণালয় মনোযোগী। দেশের সবগুলো বিমানবন্দর আধুনিক সুবিধা-সম্বলিত না হলে বড় বিমানবন্দরের কার্যক্রমে স্থবিরতা আসতে পারে।
মফিদুর রহমান বলেন, দেশের অভ্যন্তরীণ রুটে বিপুলসংখ্যক যাত্রী চলাচল করেন। এসব রুটের জন্য বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হাব হিসেবে পরিচিতি পাবে। যে কারণে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণের আগেই দেশের সব বিমানবন্দরের আধুনিকায়ন জরুরি।
জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রতি মিনিটে একটি করে ফ্লাইট ওঠা-নামার সক্ষমতা থাকবে। বছরে কমপক্ষে এক কোটি ২০ লাখ যাত্রী আশা-যাওয়া করতে পারবেন এ বিমানবন্দর দিয়ে। বিমানবন্দর থেকে বের হয়েই মাত্র আধাঘণ্টায় এয়ার এক্সপ্রেসে জিরো পয়েন্টে পৌঁছান যাবে।
রাজধানী ঢাকার সঙ্গে থাকবে সুবিস্তৃত সংযোগ সড়ক। প্রস্তাবিত বিমানবন্দরে ২৪ ঘণ্টায় ৪০০ যাত্রীবাহী ফ্লাইট ও ২০০ কার্গোবাহী ফ্লাইট অপারেশনের ব্যবস্থা থাকবে। এটি হবে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় একটি বিমানবন্দর। এমন অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা বিবেচনায় রেখে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সমীক্ষার কাজ চলছে। জাপানের শীর্ষস্থানীয় নির্মাণ প্রতিষ্ঠান ‘নিপ্পন কই’র দুই ডজন বিশেষজ্ঞ এ কাজের তত্ত্বাবধানে আছেন।
গত এক বছরে নিপ্পনের কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে মূল্যায়ন করতে গিয়ে বেবিচক চেয়ারম্যান বলেন, পরামর্শক প্রতিষ্ঠান উপযোগী জমি অনুসন্ধানের কাজ মোটামুটি শেষ করেছে। চূড়ান্ত বাছাইয়ের পর চলবে ডিজাইনের কাজ।
বেবিচক চেয়ারম্যান আরও জানান, ১২০ কোটি টাকার সমীক্ষার কাজ শেষ হয়েছে। সিঙ্গাপুর চাঙ্গি এয়ারপোর্ট, দুবাই ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট, হিথ্রো এয়ারপোর্টের মতোই অত্যাধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা রেখেই ড্রয়িং-ডিজাইন তৈরি করা হবে। যাতে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার শীর্ষ হাব হিসেবে গড়ে তোলা যায় বঙ্গবন্ধু বিমানবন্দরকে।
এছাড়া আগামী ১০০ বছরে দেশের সম্ভাব্য জনসংখ্যা, যাত্রী পরিসংখ্যান, যাতায়াত ব্যবস্থা বিশেষ করে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর দক্ষিণাঞ্চলে গড়ে ওঠা অন্যান্য যাতায়াত অবকাঠামো সুবিধার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বঙ্গবন্ধু বিমানবন্দরের মডেল তৈরির বিষয়টি বিবেচনায় রাখা হচ্ছে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, প্রস্তাবিত বিমানবন্দরের জন্য যে পরিমাণ জমি দরকার সেটা বাংলাদেশের কোন অঞ্চলে সহজে পাওয়া যাবে- এর ওপরই নির্ভর করছে সবকিছু।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হবে পদ্মা সেতু কেন্দ্রিক। যাতে ঢাকার সঙ্গে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগ অবকাঠামো গড়ে ওঠে। আগামী ১০০ কিংবা ৫০ বছরে দেশের উন্নয়ন হবে মূলত দক্ষিণাঞ্চলকেন্দ্রিক। এটা মাথাই রেখে সমীক্ষা করছেন নিপ্পনের হাইড্রোলিক বিশেষজ্ঞরা।
সৌজন্যে- রফিক মজুমদার/জাগো নিউজ