Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

epsশ্রমচুক্তির অনুকূলে বাংলাদেশ থেকে যত শ্রমিক বিদেশে যান, দেশে ফেরার পর তারা বেকার জীবনযাপন করেন। এজন্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রবাসী শ্রমিকরা কয়েক দফা চুক্তির মেয়াদ বাড়িয়ে অনেকটা বৃদ্ধ বয়স পর্যন্তই বিদেশ থাকেন। কিন্তু দক্ষিণ কোরিয়ার ইপিএস কর্মীদের জন্য রয়েছে সুবর্ণ সুযোগ। ইপিএস কর্মীরা কোরিয়ায় নির্ধারিত সময় অবস্থান করে ফিরে এসে বাংলাদেশে অবস্থিত কোরিয়ান কোম্পানিতে চাকরির সুযোগ পাবেন।

দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্রে জানা গেছে, এরই মধ্যে ইপিএস কর্মীদের দেশে ফেরার পর বাংলাদেশে অবস্থিত কোরিয়ান কোম্পানিতে চাকরির করার বিষয়ে আগ্রহীদের আবেদন করার সুযোগ দেয়া হয়েছে। এজন্য একজন প্রবাসীকে পূরণ করতে হবে হ্যাপি রিটার্ন ফরম। ফরম পূরণ করে দূতাবাসে বা দক্ষিণ কোরিয়ার হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্টের (এইচআরডি) অফিসে জমা দিতে হবে। এরপর দূতাবাসের সমন্বয়ে কোরিয়ান এইচআরডি দেশে ফেরা কর্মীদের চাকরির ব্যবস্থা করে দেবেন। এক্ষেত্রে বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা চুক্তি অনুসারেই পাবেন একজন কর্মী।

chardike-ad

জানা গেছে, হ্যাপি রিটার্ন ফরম প্রাপ্তি সহজ করতে দূতাবাস তা অনলাইনে দিয়ে রাখছে। এর বাইরেও কেউ ফরম পেতে সমস্যা হলে দূতাবাস ও এইচআরডি অফিসে যোগাযোগ করা যাবে। তবে এসব ক্ষেত্রে কোনো রকম দালালের শরণাপন্ন হতে দূতাবাস থেকে নিষেধ করা হয়েছে।

সিউলে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রথম সচিব (শ্রম) মকিমা বেগম বলেন, ইপিএস বলতে বুঝায় এমপ্লয়মেন্ট পারমিট সিস্টেম। ইপিএস-এর আওতায় শিল্পোৎপাদন ও সেবা খাতে বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর সরকারি খরচে কয়েক হাজার দক্ষ কর্মী দক্ষিণ কোরিয়া যায়। বাংলাদেশ ওভারসিজ এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেড (বোয়েসেল) এবং দক্ষিণ কোরিয়ার এইচআরডির সহযোগিতায় এ নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। এসব কর্মী একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়। মেয়াদ শেষে অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই মেয়াদ বাড়িয়ে নতুন চুক্তির অনুকূলে ওয়ার্ক পারমিট নেয়া যায়।

ম্যানুফ্যাকচারিং বা উৎপাদন খাতে বোয়েসেলের মাধ্যমে পাল্পশিল্প, কাগজশিল্প, কাঠশিল্প, প্লাস্টিক শিল্প, মেশিনারিজ, মোল্ডশিল্প, কেমিক্যালশিল্প, ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিকস শিল্প, পনির ও খাদ্যপণ্য শিল্প, টেক্সটাইল ও গার্মেন্টশিল্প এবং মেটালশিল্পে সবচেয়ে বেশি লোকবল নিয়ে থাকে দক্ষিণ কোরিয়ার এইচআরডির অধীন কম্পানিগুলো। এছাড়া নির্মাণশিল্প খাত, কৃষি ও পশুপালন শিল্প, মৎস্যশিল্প ও সেবাশিল্প খাতেও দক্ষ কর্মী নিয়ে থাকে নিয়োগ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো।

happy-return-formএদিকে, কোরিয়া বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (কেবিসিসিআই) তথ্য মতে, বর্তমানে স্যামসাং ও এলজি ইলেকট্রনিক্সসহ ১১৫টি কোরিয়ান কোম্পানি বাংলাদেশে ব্যবসা করছে। এদের মোট বিনিয়োগের পরিমাণ ৪৭ কোটি ডলার। আরো কয়েকটি বড় কোম্পানি এখানে বিনিয়োগের সম্ভাব্যতা খতিয়ে দেখছে। তারা জ্বালানি-বিদ্যুৎ, প্রকৌশল, অবকাঠামো, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প, ইলেকট্রনিক্স শিল্পে বিনিয়োগে আগ্রহী।

এছাড়া চট্টগ্রামে তৈরি হচ্ছে কোরিয়ান রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (কেইপিজেড)। এই ইপিজেডে এরই মধ্যে সু ও টেক্সটাইল খাতের ২৫টি কারখানা উৎপাদনে রয়েছে। নতুন করে আরো ৪৫টি করে কারখানা নির্মাণের কাজ চলছে। এসব কারখানা হবে তৈরি পোশাক, জুতা ও বস্ত্র খাতের। এগুলো আগামী তিন বছরের মধ্যে উৎপাদনে যাবে বলে আশা করছে কর্তৃপক্ষ। নতুন কারখানার সবগুলো কোরিয়ান ইপিজেডের মূল মালিক প্রতিষ্ঠান ইয়ংওয়ান করপোরেশন স্থাপন করবে। কারখানাগুলো চালু হলে প্রায় তিন লাখ লোকের কর্মসংস্থান হবে বলে আশা করছে সংশ্লিষ্টরা।

এছাড়া জানা গেছে, বর্তমানে কেইপিজেডে ইয়ংওয়ান করপোরেশনের অর্ন্তভুক্ত কর্ণফুলী সু, কর্ণফুলী গার্মেন্টস, কর্ণফুলী পলিয়েস্টার প্রোডাক্ট, এভারটপ প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি, গায়া প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি ও দেইগু প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি বিনিয়োগ করেছে। ইপিএস কর্মীরা বাংলাদেশে অবস্থিত এসব কোরিয়ান কোম্পানিতে দক্ষতা সাপেক্ষে কাজ করার সুযোগ পেতে পারে।

বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর সরকারিভাবে কয়েক হাজার কর্মী কাজ করতে দক্ষিণ কোরিয়ায় যান বাংলাদেশ ও দক্ষিণ কোরিয়ার সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যস্থতায় এই নিয়োগ প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয়। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে ২২১৫ জন কর্মী, ২০১৮ অর্থবছরে ২২৮৭ জন কর্মী দক্ষিণ কোরিয়ায় যান। চলতি ২০১৯ সালে তিন হাজার কর্মীর চাহিদার কথা জানিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া। বাংলাদেশের কর্মকর্তারা আশা করছেন, শেষ পর্যন্ত কোম্পানির চাহিদা অনুযায়ী অন্তত দুই হাজার কর্মী পাঠানো যাবে।

জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে বৈধভাবে ৪১ হাজার ১৭৩ জন দক্ষিণ কোরিয়া গেছেন। চলতি বছরে এখন পর্যন্ত গেছেন ১ হাজার ২৬৮ জন। এর মধ্যে শুধুমাত্র গত মাস সেপ্টেম্বরে কোরিয়া গেছেন ১৮৩ জন। আগের মাসে যান ২২০ জন।