ঢাকাই সিনেমার প্রিয় মুখ শাবনূর। অনেক দিন থেকেই পর্দার আড়ালে তিনি। তাতে কী? তার জনপ্রিয়তায় একটুও ভাটা পড়েনি এখনো। হঠাৎ কোথাও কোনো অনুষ্ঠানে হাজির হলে তাকে দেখতে ঢল নামে মানুষের। খুশির খবর হলো অভিনয় জীবনের ২৬ বছর অতিক্রম করলেন এই নায়িকা। এ উপলক্ষে তার জীবনের ২৬ তথ্য দিয়ে সাজানো হলো এই প্রতিবেদন।
১. শাবনূর ১৯৭৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর যশোর জেলার শার্শা উপজেলার নাভারণে জন্মগ্রহণ করেন।
২. শাবনূরের পুরো নাম কাজী শারমিন নাহিদ নূপুর। পরিবারের মানুষরা তাকে নূপুর বলেও ডাকেন।
৩. চলচ্চিত্রে নাম লেখানোর সময় স্বনামধন্য নির্মাতা এহতেশাম এই নায়িকার নাম রাখেন শাবনূর। শাবনূর শব্দের অর্থ রাতের আলো।
৪. শাবনূরের পিতার নাম শাহজাহান চৌধুরী। তিন ভাই বোনের মধ্যে সবচেয়ে বড় তিনি। বোন ঝুমুর এবং ভাই তমাল নিজ নিজ পরিবারসহ অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী।
৫. শাবনূর আজ তার চলচ্চিত্রের পথচলায় ২৬ বছর পূর্ণ করলেন। শাবনূরের প্রথম চলচ্চিত্র চাঁদনী রাতে ১৯৯৩ সালের ১৫ অক্টোবর মুক্তি পায়। ছবিটি পরিচালনা করেন এহতেশাম এবং তার বিপরীতে নায়ক ছিল সাব্বির। এই ছবিটি ব্যর্থ হয়।
৬. শাবনূরের দ্বিতীয় সিনেমা ‘তুমি আমার’। এই সিনেমায় নায়ক হিসেবে পেয়েছিলেন সালমান শাহকে। এই সিনেমা দিয়ে আলোচনায় চলে আসেন এই নায়িকা।
৭. সালমান শাহের সঙ্গে জুটি হয়ে মোট ১৪টি সিনেমায় অভিনয় করেছেন শাবনূর। এ জুটির বেশির ভাগ সিনেমা ব্যবসায়িক সফলতা পাওয়ার পাশাপাশি দর্শকনন্দিতও হয়েছে।
৮. বিশেষ করে সালমান শাহ-শাবনূর জুটির উল্লেখযোগ্য সিনেমাগুলোর মধ্যে আছে ‘বিক্ষোভ’, ‘তোমাকে চাই’, ‘স্বপ্নের ঠিকানা’, ‘মহামিলন’, ‘বিচার হবে’, ‘জীবন সংসার’, ‘আনন্দ অশ্রু’সহ আরো বেশকিছু সিনেমা।
৯. চিত্রনায়ক ওমর সানির সঙ্গে জুটি বেঁধেও ওয়াকিল আহমেদ পরিচালিত ‘প্রেমের অহংকার’ ও ‘অধিকার চাই’ শিরোনামে দুটি সফল সিনেমা উপহার দিয়েছেন সেই সময়।
১০. সালমান শাহর সঙ্গে শাবনূরের শেষ সিনেমা ছিলো বুকের ভেতর আগুন। এ সিনেমার শুটিং শেষ হওয়ার আগেই মারা যান সালমান শাহ। এরপর সিনেমাটির বাকি অংশে শাবনূরের বিপরীতে অভিনয় করেন চিত্রনায়ক ফেরদৌস।
১১. সালমানের মৃত্যুর পর শাবনূর জুটি হিসেবে রিয়াজের বিপরীতে কাজ শুরু করেন। তার সঙ্গেও অনেক ব্যবসাসফল চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। রিয়াজের বিপরীতে ‘মন মানেনা’, ‘তুমি শুধু তুমি’, ‘ভালবাসি তোমাকে’, ‘বিয়ের ফুল’, ‘নারীর মন’, শ্বশুরবাড়ী জিন্দাবাদ ছবিগুলো ব্যবসাসফল হয়।
১২. রিয়াজের সঙ্গে অর্ধশতাধিক সিনেমায় জুঁটি হয়েছেন শাবনূর।
১৩. সালমানের যুগেও ওমর সানী, অমিত হাসান, আমিন খান, বাপ্পারাজদের সঙ্গেও অভিনয় করে সফলতা পান শাবনূর। সালমানের মৃত্যু-পরবর্তী সময়ে রিয়াজ, শাকিব খান ও ফেরদৌসসহ অনেক নায়কের সঙ্গেই অভিনয় করে সফল হন শাবনূর।
১৪. ১৯৯৩ সাল থেকে বলা যায় প্রায় টানা পনেরো বছর শাবনূর তার রাজত্ব করে গেছেন। পরে অনেক পরিচালকের অনুরোধে চরিত্রে ভিন্নতা এনে চলচ্চিত্রে নিজেকে উপস্থাপন করেছেন।
১৫. অনেক দর্শকপ্রিয় চলচ্চিত্র তিনি উপহার দিলেও মোস্তাফিজুর রহমান মানিক পরিচালিত ‘দুই নয়নের আলো’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য ২০০৫ সালে তিনি প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান। এটিই তার প্রথম এবং একমাত্র জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার।
১৬. শাবনূরের উচ্চতা ৫ ফুট ৩ ইঞ্চি।
১৭. ২০১১ সালের ৬ ডিসেম্বর ব্যবসায়ী অনিক মাহমুদের সঙ্গে শাবনূরের আংটি বদল হয় এবং ২০১২ সালের ২৮ ডিসেম্বর তাকে বিয়ে করেন। এরপর তিনি অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস শুরু করেন ও নাগরিকত্ব লাভ করেন।
১৮. ২০১৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর শাবনূর প্রথম ছেলেসন্তানের মা হন। তার ছেলের নাম আইজান নিহান।
১৯. একমাত্র ছেলে আইজান নিহানের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করেই অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে থাকেন শাবনূর। সেখানে ছেলেকে স্কুলে ভর্তিও করেছেন।
২০.রাজধানীর বারিধারা এলাকায় অবস্থিত সিডনি ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের কর্ণধার শাবনূর।
২১. হুমায়ূন আহমেদের গল্পেও কাজ করার সুযোগ হয়েছিলো শাবনূরের। ২০০৬ সালে কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ রচিত উপন্যাস জনম জনম অবলম্বনে নির্মিত নিরন্তর ছায়াছবিতে অভিনয় করেন। আবু সাইয়ীদ পরিচালিত এই ছবিতে তিথি চরিত্রে তার অভিনয় সমালোচকদের প্রশংসা লাভ করে।
২২. শাকিব খান তার ক্যারিয়ারে অনেক নায়িকার সাপোর্ট পেয়েছেন। তাদের মধ্যে অন্যতম শাবনূর। এফ আই মানিক পরিচালিত ‘ফুল নেবে না অশ্রু নেবে’ ও ইস্পাহানি আরিফ জাহান পরিচালিত ‘গোলাম’ চলচ্চিত্রে শাকিবের বিপরীতে অভিনয় করেছিলেন শাবনূর।
২৩.ঢাকাই সিনেমার একটি উল্লেখযোগ্য ব্যবসাসফল সিনেমার নাম ‘মোল্লাবাড়ির বউ’। এই সিনেমায়ও রিয়াজের নায়িকা ছিলেন শাবনূর।
২৪. ব্যক্তি জীবনে শাবনূর ভীষণ মিশুক প্রকৃতির মানুষ। এখনো নিয়মিত তার সময়ের কলাকুশলীদের খোঁজখবর রাখেন তিনি।
২৫. বছরের অধিকাংশ সময় অস্ট্রেলিয়ায়ই থাকেন। তবে দেশে ফিরলেই সিনেমার নানা অনুষ্ঠানে তার দেখা মেলে।
২৬.সব শেষ মোস্তাফিজুর রহমান মানিক পরিচালিত ‘এত প্রেম এত মায়া’ ছবির শুটিং করার কথা ছিলো শাবনূরের। এ ছবির একটি গানেও কণ্ঠ দিয়েছেন তিনি। টাইটেল গানে কণ্ঠ দেয়ার মাধ্যমে তিনি প্রথমবারের মতো চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক করেন। কবে এ সিনেমার শুটিং করবেন বিষয়টি এখনো অনিশ্চিত।