মধ্যপ্রাচ্যের দেশ বাহরাইন। দেশটিতে প্রায় আড়াই শতাধিক ইমাম ও মুয়াজ্জিন বিভিন্ন মসজিদে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। সম্প্রতি দেশটি তার দেশে থাকা বাংলাদেশি অর্ধশতাধিক ইমাম মুয়াজ্জিনকে দেশে ফেরত পাঠিয়েছে। পর্যায়ক্রমে বাকিদেরও দেশে ফেরত পাঠানোর পরিকল্পনাও চলছে।
২০১৮ সালের ৪ আগস্ট কামাল উদ্দিন নামে বাংলাদেশি এক মুয়াজ্জিন একই মসজিদের বাহরাইনি ইমাম আব্দুল জলিলকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে নৃসংশভাবে খুন করে। খুনের লাশটি ৩ টুকরো করে ফেলে। এ খুনের জেরেই এমন কঠোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে দেশটি।
প্রবাসী বাংলাদেশি ও বাহরাইনে বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি তারা অর্ধশতাধিক ইমাম ও মুয়াজ্জিনকে দেশে ফেরত পাঠানো শুরু করেছে। এরপরই দ্বিতীয় ধাপে দেশটিতে পরিবার-পরিজন নিয়ে কর্মরত আরও দুই শতাধিক ইমাম ও মুয়াজ্জিনকেও দেশে ফেরত পাঠানো হতে পারে বলে ধারণা করছেন তারা।
বাহরাইন থেকে প্রকাশিত এক বাংলা পত্রিকার সূত্রে জানা যায়, ‘বাহরাইনের বিভিন্ন মসজিদে বাংলাদেশি ইমাম-মুয়াজ্জিনের সংখ্যা ২৫০ জনেরও বেশি। যাদের অনেকেই পরিবার নিয়ে থাকেন।
১৯৮০ সাল থেকেই বাংলাদেশি ইমাম-মুয়াজ্জিনরা দেশটিতে অত্যন্ত সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। যার কারণে এসব ইমাম-মুয়াজ্জিনদের বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিয়ে আসছে বাহরাইন সরকার। ২০১৮ সালের এ অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জেরেই সবকিছু এলোমেলো হয়ে যায়।
ঘটনার পর খুনি মুয়াজ্জিন কামল উদ্দিনকে গ্রেফতার করে বাহরাইন পুলিশ। আদালত তার বিচারও হয়। আদালতের রায়ে গত ২৭ জুলাই কামাল উদ্দিনকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করার মাধ্যমে আদালতের রায়ও কার্যকর করা হয়।
বাহরাইনি ইমাম হত্যার দীর্ঘ এক বছর পর দেশটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, তারা বাংলাদেশি ইমাম ও মুয়াজ্জিন রাখবে না। সে কারণেই প্রাথমিকভাবে অর্ধশতাধিক ইমাম ও মুয়াজ্জিনকে দেশে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে পরিবার নিয়ে থাকা বাকি ২০০ ইমাম-মুয়াজ্জিনকেও দেশে ফেরত পাঠানো হতে পারে।
বাহরাইনে বাংলাদেশি ইমাম ও মুয়াজ্জিনদের সংগঠন ‘ওয়াকাফ’ও মনে করছে, গত বছর মসজিদের ভেতরে বাহরাইনি ইমাম আবদুল জলিলকে খুনের ঘটনায় দেশটির সরকার এমন আচরণ করছে।
বাহরাইনের বাংলা গণমাধ্যমকে বাহরাইনে কর্মরত ইমাম-মুয়াজ্জিনরা জানিয়েছেন, আসলে কী কারণে তাদেরকে দেশে ফেরত পাঠানো শুরু করেছে সেটি তারা স্পষ্ট কিছু জানায়নি। তবে ৬০ জনেরও বেশি ইমাম-মুয়াজ্জিন ইতোমধ্যে দেশে ফেরত গেছে বলেও জানান তারা।
বাংলা সংবাদ মাধ্যমটিকে অনেক ব্যবসায়ী জানিয়েছে যে, ইমাম খুনের ঘটনার পর থেকেই বাহরাইন সরকার বাংলাদেশিদের নামে সব ধরনের ভিসা ইস্যু বন্ধ করে দিয়েছে।
বাহরাইনে বসবাসরত ইমাম-মুয়াজ্জিনসহ প্রবাসীদের দাবি, এ বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ সরকার কূটনৈতিকভাবে দ্রুত সমাধানের উদ্যোগ নেয়া জরুরি। সরকার থেকে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ না করলে বাকি ইমাম-মুয়াজ্জিনসহ অন্যান্য প্রবাসীরাও ফেরত আসতে পারে।