ইউক্রেন থেকে ফ্রান্স যাওয়ার পথে স্লোভাকিয়া জঙ্গলে নিখোঁজ রয়েছেন বিশ্বনাথের ফরিদ উদ্দিন আহমেদ (৩৫) নামের এক যুবক। তিনি উপজেলার কারিকোনা গ্রামের সমশাদ আলীর পুত্র ও ইস্টান ব্যাংক বিশ্বনাথ শাখার সাবেক কর্মকর্তা। দালাল ও ৫জন সঙ্গীর সাথে ফরিদ উদ্দিন ফ্রান্স যাওয়ার উদ্দেশ্যে গত ২৮ আগস্ট ইউক্রেন থেকে পায়ে হেটে যাত্রা করেন। দালাল ও ৫ সঙ্গী সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) ফ্রান্স পৌঁছলেও ফরিদ রয়েছেন নিখোঁজ। তবে তার সাথে সঙ্গীরা জানিছেন ফ্রান্স যাত্রাপথে স্লোভানিয়ার একটি জঙ্গলে নিখোঁজ হয়ে যান ফরিদ উদ্দিন।
ফরিদ উদ্দিনের ছোট ভাই আলা উদ্দিন জানান, ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত ফুটবল বিশ্বকাপ দেখতে রাশিয়া যান ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। খেলা শেষ হওয়ার মাস খানেক পর তিনি রাশিয়া থেকে ইউক্রেন যান এবং দেখানে দীর্ঘ কয়েক মাস অবস্থান করেন। সম্প্রতি ইউক্রেন থেকে ফ্রান্স যাওয়ার জন্য বাংলাদেশে থাকা দালালের সাথে চুক্তি করেন ফরিদের পরিবার। সেই চুক্তি অনুযায়ী মধ্যস্থতাকারী এক ব্যক্তির কাছে রাখা হয় ৭লাখ টাকা। কথা ছিল গাড়িতে করে ফরিদকে ফ্রান্স পৌছানোর পর জমাকৃত ৭ লাখ টাকা হস্তান্তর করা হবে দালালের কাছে। চুক্তি সম্পাদনের পর ইউক্রেনে দালালের শিবিরে যান ফরিদ। সেখানে প্রায় ১ মাস অবস্থান করেন তিনি।
সর্বশেষ গত ২৭ আগস্ট পরিবারের সাথে মোবাইল ফোনে কথা বলেন ফরিদ। এসময় তিনি জানান পরদিন ২৮ আগস্ট ফ্রান্সের উদ্দেশ্যে তিনি যাত্রা করবেন। এই কথা বলার পর থেকে পরিবারের সাথে আর কোন যোগাযোগ হয়নি ফরিদের। সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) ফরিদ উদ্দিন উদ্দিনের এক সঙ্গী (ফ্রান্স যাত্রাপথের) ফোন করে ফরিদ উদ্দিনের ভাই যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত কাওছার আলীকে বলেন- গত বুধবার একজন দালালের সঙ্গে ফরিদ উদ্দিন সহ তারা ৬জন ইউক্রেন থেকে ফ্রান্সের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন।
পায়ে হেটে ফ্রান্স পৌছতে তাদের ৫দিন সময় লাগে। কিন্ত তাদের সাথে খাবার ছিল মাত্র দু’দিনের। তাই সাথে থাকা খাবার শেষ হয়ে গেলে তাদেরকে শুকরের মাংস খেতে দেয় দালাল। কিন্ত এই খাবার খেতে অপারগতা জানান ফরিদ। তাই তিনি সাথে থাকা খেজুর খেয়ে আরো একদিন পার করেন। দুই দিন পায়ে হেটে তারা পৌছেন স্লোভাকিয়া’র একটি জঙ্গলে। সেখানে পৌছার পর সাথে থাকা খেজুরও শেষ হয়ে গেলে শুকরের মাংস খেতে বাধ্য হন ফরিদ। এই খাবার খাওয়ার সাথে সাথেই অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। নাকে ও মুখ দিয়ে রক্ত বের হতে থাকে এবং বমি আর ডায়রিয়া হতে থাকলে একেবারেই দূর্বল হয়ে যান তিনি। ওই জঙ্গলে সেদিন রাতে সবাই ঘুমিয়ে পড়লে একটি বিকট শব্দ পেয়ে সবার ঘুম ভেঙ্গে যায়। এসময় তারা ঘুম থেকে উঠে ফরিদকে পাশে দেখতে না পেয়ে জঙ্গলে খুঁজতে থাকেন তাকে। কিন্ত কোথাও ফরিদকে না পেয়ে একপর্যায়ে তাকে রেখেই ফ্রান্সের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন দালাল ও অন্য ৫জন। তখন থেকেই নিখোঁজ রয়েছেন ফরিদ উদ্দিন।
আলা উদ্দিন বলেন, আমরা ধারণা করছি আমার ভাই অসুস্থ হয়ে পড়লে স্লোভাকিয়ার ওই জঙ্গলে তাকে ফেলে রেখে অথবা তাকে হত্যা করে দালাল ও সঙ্গীরা ফ্রান্সে চলে যায়। মহান আল্লাহ যেন আমার ভাইকে আমাদের মাঝে ফিরিয়ে দেন সকলের কাছে এই দোয়াই কামনা করছি। পাশাপাশি স্লোভাকিয়ার ওই জঙ্গল থেকে ফরিদ উদ্দিনকে উদ্ধারে প্রদক্ষেপ গ্রহণের জন্য তিনি সরকারের কাছে আবেদন জানান।
এদিকে, ফরিদ উদ্দিনের নিখোঁজ সংবাদ পাওয়ার পর থেকে পরিবারে দুঃশ্চিন্তা বিরাজ করছে। কান্নাকাটি করছেন স্বজনরা। পরিবারের ৬ ভাই ও ১ বোনের মধ্যে সবার বড় ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। তার স্ত্রী সেলিনা সুলতানা বিশ্বনাথ উপজেলার রামধানা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা। ইরা তাসফিয়া নামে তার ৩ বছর বয়সী এক কন্যা সন্তান রয়েছে।