২০১৮ সালে ভারতের আসাম রাজ্যে খসড়া নাগরিক তালিকা প্রকাশের পর খবরের শিরোনামে এসেছিলেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ সানাউল্লাহ। তিনি ভারতীয় সেনাবাহিনীর জুনিয়র কমিশন্ড অফিসার ছিলেন। দীর্ঘদিন ভারতের সেনাবাহিনীতে কাজ করার পরেও তিনি বাদ পড়েছিলেন আসামের নাগরিক তালিকার খসড়া থেকে। পরে তাকে বিদেশি বলে চিহ্নিত করে পাঠানো হয়েছিল ডিটেনশন ক্যাম্পে।
শনিবার আসামে চূড়ান্ত নাগরিক তালিকা প্রকাশ হয়েছে। কিন্তু বিস্ময়ের ব্যাপার যে, চূড়ান্ত নাগরিকপঞ্জিতেও সাবেক সেনা কর্মকর্তা মোহাম্ম সানাউল্লাহর নাম নেই। পাশাপাশি সেই তালিকায় নেই তার দুই মেয়ে ও এক ছেলের নামও। কিন্তু সানাউল্লাহর স্ত্রীর নাম চূড়ান্ত এনআরসিতে আছে।
শনিবার সকালে প্রকাশিত চূড়ান্ত নাগরিক তালিকায় ১৯ লাখ মানুষের নাম বাদ পড়েছে। তাদের এখন ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে (বিদেশী ট্রাইব্যুনালে) আবেদন করতে হবে। এনআরসি’র খসড়া তালিকা থেকে নাম বাদ পড়ার পর মোহাম্মদ সানাউল্লাহ গুয়াহাটি হাইকোর্টে আবেদন করেছিলেন। আবেদনের পর বিচারপতি তাকে ডিটেনশন ক্যাম্প থেকে ছেড়ে দিতে বলেন। কিন্তু তাকে ভারতীয় নাগরিক বলে ঘোষণা করা হয়নি।
সাবেক ভারতীয় সেনা কর্মকর্তা সানাউল্লাহ সে সময় আর্জি জানিয়েছিলেন, তাকে যেন বিদেশি বলে গণ্য না করা হয়। এ বিষয়ে এখনও শুনানি চলছে।
১৯৮৭ সালে মোহাম্মদ সানাউল্লাহ ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। এরপর দীর্ঘ সময় তিনি দেশটির সেনাবাহিনীতে চাকরি করেন। এখন তার বয়স ৫২ বছর। তিনি দু’বার ভারত শাসিত কাশ্মিরে এবং একবার মণিপুরে কর্মরত ছিলেন। আসাম সরকারের কর্মকর্তা চন্দ্রমল দাস তদন্ত করে সাবেক সেনা কর্মকর্তা সানাউল্লাহকে বিদেশি বলে ঘোষণা করে।
২০০৮ সালে মোহাম্মদ সানাউল্লাহকে নোটিশ দিয়ে নিজেকে ভারতীয় হিসেবে প্রমাণ করতে বলা হয়। এরপর ২০১৮ সালে তিনি ট্রাইব্যুনালের সামনে হাজির হন। পরে একই বছরের ২৩ মে তাকে বিদেশি বলে ঘোষণা করা হয়। তারপর তাকে আসামের গোয়ালপাড়ায় ডিটেনশন ক্যাম্পে (আটক কেন্দ্রে) পাঠানো হয়।
ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার অবশ্য বলেছে যে- শনিবার প্রকাশিত এনআরসির চূড়ান্ত নাগরিক তালিকায় যাদের নাম স্থান পাবে না, তাদেকে এখনই বিদেশি ঘোষণা করা যাবে না। পরবর্তী সকল আইনি বিকল্প শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদেরকে বিদেশি ঘোষণা করা হবে না। প্রকাশিত এনআরসি তালিকার বাইরে থাকা প্রতিটি ব্যক্তি দেশটির গঠিত বিদেশি ট্রাইব্যুনালে আবেদন করতে পারেন এবং আবেদন করার সময়সীমা ৬০ থেকে বাড়িয়ে ১২০ দিন করা হয়েছে।
এর আগে শনিবার সকালে আসামে চূড়ান্ত নাগরিক পঞ্জি- এনআরসি তালিকা প্রকাশ করা হয়। প্রকাশিত চূড়ান্ত এনআরসি তালিকা থেকে বাদ পড়েছে ১৯ লাখ মানুষের নাম। পাশাপাশি চূড়ান্ত তালিকায় স্থান পেয়েছেন ৩ কোটি ১১ লাখ মানুষ।
এদিকে আসামে নাগরিকদের চূড়ান্ত জাতীয় নিবন্ধীকরণ (এনআরসি) তালিকায় এই ১৯ লাখ মানুষকে অবৈধ অভিবাসী হিসেবে চিহ্নিত করে বাদ দেয়া হয়েছে। জম্মু ও কাশ্মিরের কয়েক দশকের পুরনো স্বায়ত্তশাসন বাতিল করার কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের মাত্র কয়েক সপ্তাহ পরেই এই এনআরসি তালিকা প্রকাশ করা হলো। এনআরসি তালিকা প্রকাশকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় ভারতের এই রাজ্য জুড়ে কয়েক হাজার আধাসামরিক বাহিনী এবং পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পাশাপাশি জারি করা হয়েছে ১৪৪ ধারা।
সৌজন্যে- জাগো নিউজ