Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

stokesএতোটা কে ভেবেছিলেন? ইংল্যান্ডের পার ভক্ত-সমর্থকরাও কি একবারের জন্যও ভাবেনি ম্যাচটা চলে গেল অস্ট্রেলিয়ার হাতে। ৩৫৯ রানের লক্ষ্যে ২৮৬ রানে ৯ উইকেট হারিয়ে ফেললে, জয়ের আশা না করাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আপনার হাতে যদি থাকে একজন বেন স্টোকস, তাহলে আপনি জয়ের আশা ছাড়তে পারবেন না কোনো মূহুর্তেই।

মাস দেড়েক আগে ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচে অসাধারণ নৈপুণ্য দেখিয়ে শিরোপা জিতেছিলেন দেশের পক্ষে। এবার অ্যাশেজের তৃতীয় টেস্টেও যেন একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি করলেন এ পেস বোলিং অলরাউন্ডার। একা হাতে লড়ে ইংল্যান্ডকে অবিশ্বাস্য এক জয় এনে দিয়েছেন, সমতা ফিরিয়েছেন অ্যাশেজে।

chardike-ad

বেন স্টোকসের অপরাজিত ১৩৫ রানের ইনিংসে ভর করে হেডিংলি টেস্টে ১ উইকেটের শ্বাসরুদ্ধকর জয় পেয়েছে ইংল্যান্ড। নিজেদের টেস্ট ইতিহাসে এ প্রথমবারের মতো চতুর্থ ইনিংসে সাড়ে তিনশ রানের বেশি তাড়া করে জিতল তারা। অ্যাশেজ ইতিহাসে মাত্র দ্বিতীয়বার এবং টেস্ট ইতিহাসে এগারতমবারের মতো সাড়ে তিনশ রানের বেশি তাড়া করে জেতার নজির দেখল ক্রিকেট বিশ্ব।

অথচ ২৮৬ রানের মাথায় নবম উইকেট পতনের পর অস্ট্রেলিয়ার জয়টা মনে হচ্ছিলো সময়ের ব্যাপার মাত্র। কিন্তু অন্য চিন্তাই ছিলো স্টোকসের মাথায়। তাই তো শেষ ব্যাটসম্যান জ্যাক লিচকে নিয়ে মাত্র ৬২ বলে যোগ করলেন বাকি থাকা ৭৩ রানের চেয়েও ৩ রান বেশি।

দশম উইকেট জুটিতে আসা ৭৬ রানের মধ্যে ৭৪ রান একাই করেছেন স্টোকস। দলের জয়ের জন্য যখন প্রয়োজন মাত্র ২ রান, তখন সিঙ্গেল নিয়ে স্কোর সমান করার পাশাপাশি নিজের রানের খাতা খোলেন লিচ। সে ওভারেই এক্সট্রা কভার দিয়ে চার মেরে অবিশ্বাস্য জয়টি নিশ্চিত করেন স্টোকস।

বিধ্বংসী ফাস্ট বোলার জোফরা আর্চারকে সঙ্গে নিয়ে মারকুটে অলরাউন্ডার বেন স্টোকস যখন দলীয় সংগ্রহটাকে ২৭৫ পার করালেন, তখন যেনো স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়ে ইংল্যান্ডের ভক্ত-সমর্থকরা। কেননা লিডসের হেডিংলিতে চতুর্থ ইনিংসে ২৭৫ রানের বেশি করে হারের রেকর্ড নেই একটিও।

প্রায় ৭১ বছর আগে ১৯৪৮ সালে প্রথমবারের মতো ২৭৫ পেরিয়ে ৪০৪ রান তাড়া করে জিতেছিল অস্ট্রেলিয়া। এরপর এ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেই ইংল্যান্ড দুইবার এবং তাদের বিপক্ষে ওয়েস্ট ইন্ডিজ একবার চতুর্থ ইনিংসে ২৭৫ রানের বেশি করে ম্যাচ জিতেছিল হেডিংলিতে।

ফলে হাতে মাত্র ৩ উইকেট থাকলেও, ৩৫৯ রান তাড়া করার ব্যাপারে সাহস পাচ্ছিলো ইংল্যান্ড। কিন্তু অষ্টম ব্যাটসম্যান হিসেবে আর্চার ফিরে যান ব্যক্তিগত ১৫ রানে। এরপর স্টুয়ার্ট ব্রড আউট হন কোনো রান না করেই। সম্পূর্ণ একা বনে যান স্টোকস। সেখান থেকেই শ্বাসরুদ্ধকর জয়টি তুলে নেন স্টোকস।

চতুর্থ দিনে মধ্যাহ্ন বিরতির সময়েই ম্যাচের পাল্লা ঝুঁকে যায় স্বাগতিকদের পক্ষে। প্রথম সেশন শেষে ছয় উইকেট হাতে রেখে জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিলো মাত্র ১২১ রান। দুই ব্যাটসম্যান জনি বেয়ারস্টো এবং বেন স্টোকস উইকেটে সেট থাকায়, ইংল্যান্ডের পক্ষে বাজি ধরার লোকই ছিলো বেশি।

দ্বিতীয় সেশনে হুট করেই ভোজবাজির মতো বদলে যায় দৃশ্যপট। উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান বেয়ারস্টো ফিরে যাওয়ার পর, জস বাটলার কাটা পড়েন রানআউটে। আর এতেই যেনো একপ্রকার নিশ্চিত হয়ে যায় ম্যাচের ভাগ্য। একপ্রান্তে বেন স্টোকস একা একা লড়াই করলেও, বোলারদের কাছ থেকে সে অর্থে পাচ্ছিলেন না সহায়তা। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে এসে দাঁতে দাঁত চেপে ১৭টি বল খেলে স্টোকসকে সঙ্গ দেন লিচ।

অস্ট্রেলিয়ার ছুড়ে দেয়া ৩৫৯ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে তৃতীয় দিন শেষে ৩ উইকেটে ১৫৬ রান করে ফেলেছিল ইংল্যান্ড। শেষ দুই দিনে তাদের বাকি থাকে ২০৩ রান, হাতে ছিলো ৭ উইকেট। অধিনায়ক জো রুট ৭৫ রানে অপরাজিত থাকায় স্বস্তিতেই ছিলো স্বাগতিকরা।

কিন্তু চতুর্থ দিন সকালে, ষষ্ঠ ওভারেই ভূতুড়ে এক আউটে সব হিসেবে গোলমাল করে দেন রুট। অসি অফস্পিনার নাথান লিয়নের বলে এগিয়ে এসে লেগসাইডে খেলার চেষ্টা করেন তিনি। বল তার ব্যাটের পর প্যাডে লেগে চলে যায় উইকেটরক্ষকের পেছনে। প্রথম স্লিপে দাঁড়িয়ে থাকা ডেভিড ওয়ার্নার বাঁ দিকে ঝাপিয়ে অসাধারণ এক ক্যাচ নিয়ে ইতি ঘটান রুটের ৭৭ রানের ইনিংসের।

তবে এরপর ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে নিয়ে নেন বেয়ারস্টো এবং স্টোকস। মধ্যাহ্ন বিরতি পর্যন্ত দুজন মিলে অবিচ্ছিন্ন জুটিতে যোগ করেন ৭৯ রান। কিন্তু বিরতি থেকে ফিরে জুটিতে আর মাত্র ৭ রান যোগ করেই সাজঘরে ফিরে যান বেয়ারস্টো। উইকেটে আসেন জস বাটলার। যিনি আউট হন রানআউটে কাটা পড়ে।

মধ্যাহ্ন বিরতি পর্যন্ত ম্যাচের দখল রাখা ইংলিশরা হুট করেই ৪ উইকেটে ২৪৫ থেকে পরিণত হয়ে ৬ উইকেটে ২৫৩ রানে। স্বীকৃত ব্যাটসম্যানদের হারিয়ে একা বনে যান স্টোকস। মাসদেড়েক আগে ইংলিশদের বিশ্বকাপ জেতানো এ অলরাউন্ডার একাই লড়াই ঘোষণা করেন অস্ট্রেলিয়ান বোলারদের বিপক্ষে।

কিন্তু অপরপ্রান্ত থেকে একদমই সহায়তা পাননি তিনি। ক্রিস ওকস ১ এবং স্টুয়ার্ট ব্রড আউট হন শূন্য রান করে। দুজনের মাঝে নেমে জোফরা আর্চারের ব্যাট থেকে আসে ১৫ রান। তখন মনে হচ্ছিলো হয়তো আর্চারকে সঙ্গে নিয়েই বাজিমাত করে ফেলবেন স্টোকস। কিন্তু নাথান লিয়নকে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে দলীয় ২৮৬ রানের মাথায়। এক বল পরই ফিরে যান ব্রড।

তখনও লক্ষ্য থেকে ৭৩ রান দূরে ছিলো ইংল্যান্ড। কিন্তু হাতে ১টি মাত্র উইকেট। বাঁহাতি স্পিনার জ্যাক লিচকে সঙ্গে নিয়ে শেষ চেষ্টাটা করেন স্টোকস। লিয়নের এক ওভারে জোড়া ছক্কা হাঁকিয়ে জমিয়ে তোলেন পরিস্থিতি। এরপর ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার সেরা বোলার জস হ্যাজলউডকে পরপর তিন বলে ৪, ৬ ও ৬ মেরে জুটির পঞ্চাশ পূরণ করেন স্টোকস। একইসঙ্গে পৌঁছে যান জয়ের আরও কাছে।

তবু হেরে যেতে পারত ইংল্যান্ড। নাথান লিয়ন যখন ১২৫তম ওভারটি করতে আসেন তখন প্রয়োজন ছিল আরও ৮ রান। তৃতীয় বলে ছক্কা মেরে চাহিদা মাত্র ২ রানে নামিয়ে ফেলেন স্টোকস। কিন্তু পঞ্চম বলেই ভুল বোঝাবুঝির কারণে রানআউটের ফাঁদে ধরা পড়েও বেঁচে যান লিচ। নন স্ট্রাইক প্রান্তে বলটি হাতে জমিয়ে স্টাম্প ভাঙলেই এক রানের ব্যবধানে হেরে যেত ইংল্যান্ড।

পরে স্টোকস সহায়তা পান ভাগ্যেরও। লিয়নের সে ওভারের শেষ বলে স্টোকসের বিপক্ষে লেগ বিফোরের আবেদনে সাড়া দেননি আম্পায়ার জো উইলসন। অথচ পরে রিপ্লেতে দেখা গিয়েছে সেটি সোজা আঘাত হানতো লেগস্টাম্পে। কোনো রিভিউ না থাকায় কপাল পুড়ে অস্ট্রেলিয়ার।

প্যাট কামিন্সের করা পরের ওভারের তৃতীয় বলে সিঙ্গেল নিয়ে স্কোর সমান করেন লিচ। আর চতুর্থ বলে এক্সট্রা কভার দিয়ে বাউন্ডারি মেরে বীরত্বপূর্ণ ইনিংসের মধুর সমাপ্তি টানের বেঞ্জামিন অ্যান্ড্রু স্টোকস।