ধনকুবের মার্ক সাফার। পেশায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একজন আইনজীবি। বিখ্যাত পপ সঙ্গীত তারকা প্রয়াত মাইকেল জ্যাকসনের আইনজীবী হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। সৌদি আরব ভ্রমণে গিয়ে ইসলামের প্রতি অনুরক্ত হয়ে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন।
আমেরিকার লস অ্যাঞ্জেলেসের অধিবাসী মার্ক সাফার। তিনি ২০০৯ সালে সৌদি আরবে এক সংক্ষিপ্ত সফরে আসেন। ১০ দিনের এ সংক্ষিপ্ত সফরে তার গাইড ছিলেন দাবি বিন নাসির। যিনি সৌদি গণমাধ্যম ‘সৌদি গেজেট’-এর কাছে মার্ক সাফারের ইসলাম গ্রহণের এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
গাইড দাবি বিন নাসির জানান, মার্ক সাফার সৌদি আরবের রিয়াদে এসেই ইসলাম ধর্ম ও এ ধর্মের ইবাদত পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে চান। তিনি দুই দিন রিয়াদে অবস্থান করেন। এ সময় তিনি ইসলাম সম্পর্কে জানতে প্রচণ্ড আগ্রহী হয়ে যান।
রিয়াদে দুই দিন অবস্থান করে মার্ক সাফার নাজরানে চলে যান। সেখানে তিনি আবা ও আল-উলা পরিদর্শন করেন। এ সময় ইসলামের প্রতি তিনি প্রচণ্ড আকৃষ্ট হয়ে যান।
নাজরান সফরে তার সঙ্গে আমরা তিন আরব যুবক ছিলাম। মরুভূমিতে আমরা তিন জন নামাজ পড়তাম, তিনি তখন নামাজের সে দৃশ্য অতি আগ্রহে দেখতেন এবং আবেগে আপ্লুত হয়ে যেতেন।
মার্ক সাফার আবা ও উলা সফর শেষে আল-জাউফ যান। ইসলামের প্রতি অতি আগ্রহের কারণে আমি তাকে ইসলাম সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা লাভের জন্য কিছু বই দিই। জাউফে থাকা অবস্থায় মার্ক বইগুলো পড়েন।
পরদিন সকালে মার্ক সাফার জানান, তিনি নামাজ আদায়ের নিয়ম-কানুনগুলো শিখতে চান। জাউফে আমি তাকে নামাজের ওজুর নিয়ম ও পরে নামাজের নিয়মগুলো শেখাই।
অতঃপর মার্ক সাফার আমার পাশে দাঁড়িয়েই নামাজ আদায় করে দেখালেন। মার্ক সাফার নামাজ আদায় শেষ করেই বললেন, তিনি অন্তরে আত্ম-প্রশান্তি অনুভব করছেন।
বৃহস্পতিবার দিন মার্ক সাফারকে সঙ্গে নিয়ে আমরা ৩ আরব যুবক জেদ্দার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হই। যাত্রা পথে মার্ক সাফার ইসলাম সম্পর্কে পড়া বইগুলোর ব্যাপারে তার গভীর অনুভূতির কথা জানান।
শুক্রবার সকালে পুরনো জেদ্দা শহর পরিদর্শন করে মার্ক সাফার। পরিদর্শন শেষে জুমআর নামাজের প্রস্তুতি নিতে আমরা হোটেলে ফিরে যাই। মার্ক সাফার জানান, তিনি আমাদের সঙ্গে জুমআর নামাজে অংশগ্রহণ করবেন এবং মানুষ কীভাবে জুমআর নামাজ পড়ে তা দেখতে চান। আমরা তাকে জুমআর নামাজে অংশগ্রহণের জন্য মসজিদে স্বাগত জানাই।
মসজিদটি হোটেল কাছে হওয়া সত্বেও মসজিদে পৌছতে আমাদের দেরি হলো। মসজিদের ভেতরে বসার সুযোগ না পেয়ে আমরা বাইরে দাঁড়িয়েই জুমআর নামাজ আদায় করি। মার্ক সাফার মুসলিমদের জুমআর নামাজ আদায়ের দৃশ্য ও পারস্পরিক অভিনন্দের দৃশ্য দেখে ইসলামের প্রতি আরও বেশি মুগ্ধ হয়ে যায়।
মার্ক সাফার নামাজের পর মুসলিমদের পারস্পরিক মুসাহাফা (হাত মেলানো) ও মুয়ানাকায় (বুকের সঙ্গে বুক মিলিয়ে কোলাকুলি) অভিভূত হয়ে যান। মুসলমানদের আন্তরিকতাপূর্ণ সুসম্পর্ক দেখেই মার্ক সাফার ইসলাম গ্রহণের সিদ্ধান নিয়ে নেন। হোটেলে ফিরেই মার্ক সাফার জানান যে, তিনি ইসলাম গ্রহণ করবেন।
গাইডার দাবি বিন নাসির জানান, আমি মার্ক সাফারকে গোসল করার পরামর্শ দেই। তিনি গোসল করে আসলে আমি তাকে কালেমা শাহাদাত পাঠ করালাম। কালেমা শাহাদাত পাঠ করে ইসলাম গ্রহণ করার পর মার্ক সাফার দুই রাকাআত নামাজ আদায় করেন।
ইসলাম গ্রহণের পর মার্ক সাফার বাইতুল্লাহ জিয়ারতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। আমি তাকে ইসলাম গ্রহণের সার্টিফিকেট গ্রহণের পরামর্শ দেই এবং তাকে নিয়ে জেদ্দা দাওয়াহ (ইসলাম প্রচার) সেন্টারে যাই। সেখানে আনুষ্ঠানিকতা সেরে পবিত্র নগরী মক্কা ও বাইতুল্লাহ জিয়ারতের অনুমতি গ্রহণ করি।
মার্ক সাফার পবিত্র নগরী মক্কা ও বাইতুল্লাহ জিয়ারত করেন। কাবা শরিফ জিয়ারতের পর ‘আল-রিয়াদ’ পত্রিকাকে তিনি তার ইসলাম গ্রহণের অনুভূতি, মুসলিমদের ভ্রাতৃত্ব ও পারস্পরিক সুসম্পর্র্কের বর্ণনা দেন।
তিনি অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, ‘আমি খুবই আনন্দিত। যা ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। বিশেষ করে পবিত্র নগরী মক্কা ও কাবা শরিফ জিয়ারতের অনুভূতি অপার্থিব। অতঃপর তিনি হজ সম্পাদনে আবারও এ পবিত্র নগরীতে ফিরে আসবেন বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
মার্ক সাফার বলেন, ‘ইসলাম সম্পর্কে আমার ধারণা ছিল তবে তা একেবারেই সামান্য। সৌদি আরব ভ্রমণে মুসলিস সংস্কৃতিই তাকে ইসলামের প্রতি প্রচণ্ড আগ্রহী করে তোলে। যার ফলে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। ইসলামই একমাত্র সত্য ধর্ম বলে তিনি ঘোষণা করেন।
সৌদি আরব থেকে আমেরিকায় ফিরে যাওয়ার সময় জেদ্দার বাদশাহ আব্দুল আজিজ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন ফরম পূরণ কালে নিজেকে ইসলাম ধর্মাবলম্বী বলে উল্লেখ করেন। ইসলাম গ্রহণের পর তিনি ২০০৯ সালে ১৮ অক্টোবর তিনি সৌদি আরব ত্যাগ করেন।
সৌজন্যে- জাগো নিউজ