অসুস্থ স্বামী জামিলুর রহমান বুলবুলকে (৪৫) বাঁচাতে নিজের লিভারের অংশ দান করে অনন্য নজির স্থাপন করলেন বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার গৃহবধূ মাকছুদা জাহান নূপুর। রোববার ভারতের চেন্নাই অ্যাপোলো হাসপাতালে নূপুরের স্বামীর লিভার স্থাপন করা হয়েছে। নূপুরের বড় বোন মহিষাবান বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক পাপিয়া আকতার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। পাপিয়া আকতার বলেন, বর্তমানে আমার বোন ও ভগ্নিপতি দুজনই সুস্থ আছেন। তাদের জন্য সবাই দোয়া করবেন।
জানা গেছে, বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার দিগদাইড় ইউনিয়নের মাদারীপাড়া গ্রামের মৃত ইয়াছিন আলী তরফদারের একমাত্র ছেলে জামিলুর রহমান বুলবুল পেশায় ব্যবসায়ী। একযুগ আগে প্রেমের সম্পর্কে পার্শ্ববর্তী কাতলাহার গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য আবদুল মজিদের মেয়ে মাকছুদা জাহান নূপুরকে বিয়ে করেন। তাদের সংসারে জাইমা রহমান ইলা (১১) ও নাবিল রহমান নূর (৯) দুটি সন্তান রয়েছে।
তাদের দাম্পত্য জীবন সুখেই কাটছিল। প্রায় দু’বছর আগে বুলবুল কঠিন ব্যাধিতে আক্রান্ত হন। তার লিভার নষ্ট হয়ে যায়। স্থানীয় চিকিৎসা শেষে ভারতের চেন্নাই অ্যাপোলো হাসপাতালে যান। চিকিৎসকরা তাকে দ্রুত লিভার প্রতিস্থাপনের পরামর্শ দেন। স্বামীকে লিভার দিয়ে সুন্দর এ পৃথিবীতে বাঁচিয়ে রাখার সিদ্ধান্ত নেন তার স্ত্রী নূপুর।
নূপুরের বড় বোন শিক্ষক পাপিয়া আকতার বলেন, রোববার ভারতের চেন্নাইয়ের অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসকরা ১৮ ঘণ্টার অপারেশনে নূপুরের শরীর থেকে লিভার নিয়ে বুলবুলের শরীরে প্রতিস্থাপন করেছেন। নির্দিষ্ট সময়ে তাদের জ্ঞান ফিরেছে।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, দু’জনই ভালো আছেন। সুস্থ হলে তারা দেশে ফিরে আসবেন। বুলবুলের সফল অপারেশনের খবর গ্রামে প্রচার হলে সবার মাঝে স্বস্তি ফিরে আসে। নূপুর তার বোন ও ভগ্নিপতির সুস্থতার জন্য সবার দোয়া চেয়েছেন।
বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালের অর্থোপেডিক সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. রেজাউল আলম জুয়েল জানান, রক্তের সম্পর্ক ছাড়া লিভার ম্যাচিং হওয়া খুব কঠিন। এরপরও ওই দম্পতির ম্যাচিং হওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পুরো লিভার নয়; একটা অংশ কেটে প্রতিস্থাপন করা হয়ে থাকে। পরবর্তীকালে লিভারদাতার কেটে নেয়া অংশ রিজেনারেশন হয়।