ছ’মাস আগে পাড়ি জমিয়েছিলেন প্রবাসে। ভাগ্য বদলের আশায় সেখানে গিয়েছিলেন এক বিন্দু সুখের খোঁজে। কিন্তু সুখ যে শোকে পরিণত হবে কে জানতো? বলছিলাম সৌদি প্রবাসী মো. সুমনের কথা। সুখ যেন তার কপালে সইলো না। বিদেশের মাটিতে গত ১৪ আগস্ট স্ট্রোক করে মারা যান তিনি। তার মৃতদেহ এখন পর্যন্ত দেশে আনা সম্ভব হয়নি।
প্রকৃতি মাঝে মাঝে নিষ্ঠুর হয় আমাদের প্রতি। প্রবাসে যারা বাস করেন; তাদের মনের অবস্থা কী- তা শুধু যিনি প্রবাসী তিনিই বোঝেন। পরিবারের সুখের আশায় নিজের সমস্ত আবেগ, অনুভূতিগুলো জলাঞ্জলি দিয়ে মাটি আঁকড়ে পরে থাকেন বিদেশে। মরে যে বেঁচে যাবেন এমনও নয়। তাই নিয়তির কাছে হার মানতে হয় কখনো কখনো।
চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ পৌরসভার মিরপুর গ্রামের বরকন্দাজ বাড়ির মোকলেসুর রহমান ও রেজিয়া বেগমের ৭ সন্তানের মধ্যে চতুর্থ মো. সুমন। দেশে ছোটখাটো ব্যবসা করতেন। যখন দেখলেন সংসারের ঘানি টানতে কষ্ট হচ্ছে। ঠিক তখন তার মনে হলো প্রবাসে গিয়ে ভাগ্য বদল করা যাবে। এদিকে দেশে থাকতে প্রায় ১০ লাখ টাকার মতো ঋণ করে গেছেন। সেই ঋণের বোঝা এখন পরিবারের উপর এসে পড়েছে।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে সৌদি আরবের রিয়াদে কাজের সন্ধানে যান সুমন। সব কিছু ঠিকঠাকই চলছিল। কিন্তু নিয়তির নিষ্ঠুর আচরণে অকালেই প্রাণ হারাতে হলো তাকে। তার পরিবারে চলছে এখন শোকের মাতম। পরিবার-পরিজন এখন উৎকণ্ঠা নিয়ে দিন অতিবাহিত করছে। মা, ভাই, স্ত্রী, সন্তান ও পাড়া-প্রতিবেশীর কান্নায় ভারি হয়ে উঠেছে সুমনের বাড়ি।
সুমনের মা রেজিয়া বেগম বলেন, ‘আমার সন্তান বিদেশ গিয়া মইরা গেছে। আমার পোলার লাশটা আমি দেখতাম চাই। সরকারের কাছে অনুরোধ, আমার পোলার লাশটা দ্রুত আননের ব্যবস্থা কইরা দেন।’
স্ত্রী সুরাইয়া আক্তার বলেন, ‘আমার স্বামীর লাশ দেশে পাডাইয়া দিতে কন। আমার এহন কী অইবো? ছোড দুইটা পোলা-মাইয়ারে ছাইড়া তিনি চইলা গেলেন। এর উপর আবার ঋণের বোঝা তো আছেই। কিভাবে এত দেনা শোধ করমু ভাইবা পাই না।’
ভাই আনিছুর রহমান সুজন বলেন, ‘আমার ভাই গত ১১ আগস্ট সৌদি আরবে স্ট্রোক করেন। ১৪ আগস্ট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। এখনো আমরা ভাইয়ের লাশ বাংলাদেশে আনতে পারিনি। সৌদি সরকার এবং বাংলাদেশ সরকার দ্রুত পদক্ষেপ নিলে লাশটি দেশে আনা যেত। আমাদের আর্থিক অবস্থা খারাপ। ভাই আমার ধার-দেনা করে সৌদিতে গিয়েছিল। সে টাকা এখনো শোধ করতে পারিনি।’
মেয়ে সুমাইয়া আক্তার হিমু বলেন, ‘আমার বাবারে দেখতে চাই। আমার বাবার লাশটা দ্রুত দেশে আইনা দেন। বাবা কেন বিদেশে গেল? বাবারে কতদিন দেখি না। আমার বাবারে ফিরাইয়া দেন।’
চাচা ইলিয়াছ ও চাচি আমেনা বেগম বলেন, ‘ভাতিজা খুব ভালা আছিল। বেশ কিছু টাকা ঋণ আছে তার। দেওনের মতো তেমন সামর্থ নাই পরিবারের। খুবই দুশ্চিন্তায় আছি। কই থিকা এই ঋণের টাকা শোধ করবো। এমন মৃত্যু কোন মতেই মানতে পারছি না।’
লেখক- রিফাত কান্তি সেন