মেক্সিকো থেকে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার পথে দেশটির উপকূলীয় রাজ্য ভারাক্রুজে একটি ট্রাকের পরিত্যক্ত ট্রেইলার থেকে ৬৫ জন অভিবাসী প্রত্যাশীকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। হারিয়ে যাওয়া ও ক্ষুধার্ত অবস্থায় উদ্ধার হওয়া এই ৬৫ জন বাংলাদেশ, ভারত ও শ্রীলঙ্কার নাগরিক। এদের মধ্যে বাংলাদেশের ১৭ জন, ভারতের ৩৬ জন এবং শ্রীলঙ্কার ১২ জন অভিবাসী রয়েছেন।মেক্সিকোর জননিরাপত্তা দফতর এক বিবৃতিতে এসব জানিয়েছে।
জানা গেছে, দক্ষিণ এশিয়ার তিনটি দেশ থেকে যাওয়া ৬৫ জন অভিবাসনপ্রত্যাশী গত ২৪ এপ্রিল কাতার থেকে তুরস্কে যান। তারপর তুরস্ক থেকে কলম্বিয়া, কলম্বিয়া থেকে ইকুয়েডর, ইকুয়েডর থেকে পানামা, পানামা থেকে গুয়াতেমালা এবং অবশেষে গুয়াতেমালা থেকে মেক্সিকো পৌঁছান।
মেক্সিকোয় পৌঁছানোর পর কেয়াটসাকোরকোস নদী হয়ে নৌকায় মেক্সিকোর উত্তর দিকের সীমান্তে চলে যান তারা। কেন সেদিকে গেলেন তা মেক্সিকো কর্তৃপক্ষও বুঝতে পারছে না। কেননা দেশটির উত্তর সীমান্ত থেকে অনেক দূরে যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্ত।
নৌপথে উত্তর সীমান্তে যেতে অনেক দিন ব্যয় হওয়ায় সঙ্গে থাকা খাবার শেষ হয়ে যায় অভিবাসনপ্রত্যাশীদের। পুলিশ উদ্ধার না করলে হয়ত জীবন বিপন্ন হতো তাদের।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে এক কর্মকর্তা বলেন, এসব দেশের অভিবাসীদের উদ্ধারের ঘটনা খুব বিরল। সাধারণত মধ্য আমেরিকা বা কিউবার নাগরিকদের উদ্ধার করা হয়।
ভৌগলিক অবস্থানগত কারণে ভেরাক্রুজে থামতে বাধ্য হয় অভিবাসীরা। এই অভিবাসীদের বেশিরভাগই উন্নত জীবনের আশায় যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি দিতে আসা মধ্য আমেরিকার নাগরিক।
উদ্ধার করা অভিবাসীদের চিকিৎসা সেবা, পানি ও খাবার দেওয়া হয়েছে এবং তাদের স্থানীয় একটি কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। ওই কেন্দ্রে পরীক্ষা করে দেখা হবে তারা মেক্সিকোতে থাকার উপযুক্ত কিনা।
বুধবারই মেক্সিকোর সরকার ঘোষণা দিয়েছে, গত দুই মাসের এমন পরিস্থিতিতে ১৯ হাজারের বেশি অভিবাসীকে তারা উদ্ধার করেছে।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রগামী বৈধ কাগজপত্রহীন অভিবাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে মেক্সিকো। কর্তৃপক্ষ বলছে, তারা ট্রেন, বাণিজ্যিক বাস, সেমি-ট্রাকে করে অভিবাসীদের পাচার ঠেকানোর জন্য কাজ করছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ সেমি-ট্রাক নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে।
গত দুই মাসে ১৭ সেমি-ট্রাক থেকে ১ হাজার ৭০৭ জন অভিবাসীকে উদ্ধার করেছে। আরেকটি ঘটনায় ৭৯১ জনকে পাচার করা হচ্ছিল কোনো রকম নিঃশ্বাসের ব্যবস্থা না রেখেই।
মেক্সিকো সরকারের অভিযানের ফলে যুক্তরাষ্ট্র সীমান্তে পৌঁছানো অভিবাসীদের সংখ্যা কমে গেছে। তবে সমালোচকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি ও ২১ হাজার ন্যাশনাল গার্ডের সদস্যকে সীমান্তে মোতায়েনের ফলে অভিবাসীরা মানবপাচার চক্রের দ্বারস্থ হবেন। এই পাচারকারীরা আবার প্রভাবশালী মাদকচক্রের সঙ্গে জড়িত।