রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ৪৫ হাজার টিকিট হরিলুট হয়েছে। গত ১০ বছরে এই হরিলুট হয় প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে। এসব টিকিট নেয়া হয়েছে ৯০ থেকে ১০০ ভাগ কমিশনে। অভিযোগ উঠেছে, টিকিটগুলো নিজেদের নামে নিলেও তা বিক্রি করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তারা। অথচ এই প্রতিষ্ঠানটি বছরের পর বছর লোকসান গুনছে। এতে সরকারের রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে কয়েকশ কোটি টাকা। আগামীতে এসব কমিশন বাণিজ্য বন্ধ করতে বিমান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করেছে।
গতকাল রোববার (২১ জুলাই) বিকেলে সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে উত্থাপিত কাগজপত্রের এক হিসাব থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
এর আগে কমিটি বিমানের টিকিট কাকে কাকে দেয়া হয়েছে তা জানতে চায়। র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর সভাপতিত্বে কমিটি সদস্য বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী, মো. আসলামুল হক, তানভীর ইমাম, আনোয়ার হোসেন খান, সৈয়দা রুবিনা আক্তার বৈঠকে অংশ নেন।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, এসব টিকিট আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ রুটে হরিলুট হয়েছে। বিমানের অর্থ পরিদফতর, উচ্চপদস্থ থেকে কনিষ্ঠ কর্মকর্তা সবাই এ সুবিধা নিয়েছেন। একইভাবে প্রকিউরমেন্ট অ্যান্ড লজিস্টিক সাপোর্ট পরিদফতরের পরিচালক মমিনুল ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজ নামের পাশাপাশি স্ত্রী-পরিজনদের নামেও নিয়েছেন একাধিক টিকিট। তিনি ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে ১০ বছরে নিয়েছেন ৪৬ টিকিট। এর কোনোটি শতভাগ কমিশন আবার কোনোটি ৯০ ভাগ কমিশনে। একইভাবে, প্রকিউরমেন্ট এবং লজিস্টিক শাখার উপ-ব্যবস্থাপকও কম যাননি। তিনি এবং তার পরিবারের নামে নিয়েছেন ১১টি টিকিট। আর ওই বিভাগের ব্যবস্থাপক (বাণিজ্যিক) মো. সরোয়ার হোসেন নিয়েছেন ১৩টি টিকিট। এসব টিকিটের কোনোটি শতভাগ কমিশনে নেয়া।
সিনিয়র সাইন রাইটার মোহাম্মদ মহসীন নিয়েছেন ২২টি টিকিট। তিনি নিজে, তার স্ত্রী ও সন্তান রয়েছেন এ তালিকায়। সব টিকিট বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যাওয়ার জন্য নেয়া। সহ-ব্যবস্থাপক (প্রকিউরমেন্ট) স্বপন কুমার দে তিনি সবাইকে ছাড়িয়ে নিজে এবং পরিবার-পরিজনের নামে কমিশনে টিকিট নিয়েছেন ৬৮টি। তার প্রতিটি টিকিট কমিশনের পরিমাণ শতভাগ।
সহ-ব্যবস্থাপক মো. নুরুজ্জামান ১২টি, প্রশাসনিক কর্মকর্তা রোকসানা আক্তার ১৮টি, প্রশাসনিক সহকারী দিলরুবা আফরোজা নিজ, স্বামী, ছেলে-মেয়ে এবং পিতা-মাতার নামে নিয়েছেন ২৬টি ওয়ানওয়ে টিকিট। আবুল হাসেম ১৭টি, এ কে এম শাহফুজুর রহমান ১৪টি, মানিকুর রহমান ২টি, লামিয়া শারমিন একাই নিয়েছেন ৫০টি। নিজাম উদ্দিন ৮টি, ফকির আবদুল হালিম ৮টি, আবদুল খালেক ১৪টি, আলমগীর কবির ১৮টি, আবু তালেব ১৭টি, গোলাম রসুল ১টি, ইস্টার হালদার ২২টি, সাইফ উদ্দিন ১৬টি, আবদুর রশীদ ১৩টি, ফরহাদুর রেজা ১৮টি, মাছুদুল আলম খান ৬টি, শরীফুল ইসলাম ১৩টি, শরিফ হাসান ১৩টি, হাবিবা মির্জা ২০টি, নেছার আলী গাজী ৪৬টি, জাহাঙ্গীর আলম তোকদার ২০টি, রবিউল ইসলাম ২০টি, মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন ৪টি এবং মতিউর রহমান ৪টি। এসব কর্মকর্তা-কর্মচারী সবাই প্রকিউরমেন্ট ও লজিস্টিক পরিদফতরে কর্মরত ছিলেন।
প্রশাসন পরিদফতরের কর্মকর্তাদের কেউ নিয়েছেন একাই ২৯টি টিকিট। কেউ ২০টি আবার কেউবা ১৮টি। এর মধ্যে মো. আল মাসুদ খান ও কামাল হোসেন ১৮টি করে টিকিটি নিয়েছেন। ফখরুল আলম চৌধুরী নিয়েছেন ২৯টি। যার প্রত্যেকটি টিকিটে কমিশন ধরা হয়েছে ৯৫ শতাংশ। এ শাখার ৪২ জন কর্মকর্তার সবাই ৯০ থেকে ১০০ ভাগ কমিশন নিয়েছেন টিকিট প্রতি। আন্তর্জাতিক পরিভ্রমণে এ জেড এম আরিফ সহকারী ব্যবস্থাপক (সংগঠন ও পদ্ধতি) এ কর্মকর্তা ভারত সফরে ২০১২ ও ২০১৪ সালেই ২টি টিকিট নিয়েছেন। প্রতিটিতে ৯০ শতাংশ কমিশনে নেয়া। আইটি ডিভিশনের উপ-ব্যবস্থাপক সৈয়দ মোস্তাক হোসেন দেশি-বিদেশি বিভিন্ন রুটে নিজ পরিবারের নামে ৩৩টি টিকিট নিয়েছেন। প্রতিটি টিকিটে কমিশন ৮৫-৯০ শতাংশ।
আরিফুল হাসান সাধন (সিনিয়র সিস্টেম অ্যানালিস্ট) নিয়েছেন ৮৭টি টিকিট। আর এর সবই সব নিজ, ছেলে-মেয়ে এবং পিতা-মাতাসহ আত্মীয় পরিজনের নামে নেয়া। তিনিও ৯০ থেকে ১০০ ভাগ কমিশনে নিয়েছেন প্রতিটি টিকিট। তার পুরো পরিবার গত ১০ বছরে দেশের ভেতরে বিমানে ছাড়া অন্য কোনো যানবাহন ব্যবহার করেনি। নার্গিস আক্তার নিয়েছেন ৪৩টি টিকিট। সব টিকিটে পরিবার-পরিজনের সুবিধা নিয়েছেন। তিনিও ৮৫ থেকে ১০০ ভাগ কমিশনে এসব টিকিট নিয়েছেন।
সৌজন্যে- জাগো নিউজ