Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

priya-anisমার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের যে নালিশ প্রিয়া সাহা করেছেন, সেটিকে ‘ছোট্ট ঘটনা’ হিসেবে দেখছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি এটিকে রাষ্ট্রদোহিতা মনে করেন না। রোববার বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে বিচারকদের প্রশিক্ষণের উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এমন অবস্থান ব্যক্ত করেন আইনমন্ত্রী।

তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিষয়ে ট্রাম্পকে যে তথ্যগুলো প্রিয়া সাহা দিয়েছেন তা সর্বৈব মিথ্যা, বিএনপি-জামায়াতের সময় ছাড়া বাংলাদেশে এমন ঘটনা কখনও ঘটেনি। এটি তিনি ব্যক্তিগত ঈর্ষা চরিতার্থের জন্য করেছেন। এত ছোট্ট ঘটনায় রাষ্ট্রদ্রোহ হয়ে গেছে, তা মনে করি না।

chardike-ad

আনিসুল হক বলেন, তিনি (প্রিয়া সাহা) এই বক্তব্য দেওয়ার পরে শুধু হিন্দু সম্প্রদায় নয়, সকলেই বলেছেন- আমরা বাংলাদেশে সকলেই সম্প্রীতির মাধ্যমে বসবাস করছি। যদি ইতিহাসও দেখা হয়, তাহলে দেখা যাবে- এ পর্যন্ত বাংলাদেশের মানুষ সবচেয়ে কম ধর্মীয় বিরোধে জড়িয়েছে।

তবে বাংলাদেশ হওয়ার পর হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সময় এমনটা ঘটেছিল। ধর্মীয় সংঘাত ঘটেছিল। আরেকটা বিএনপি যখন ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসেছিলেন তখন তারা এ ধরনের কাজকর্মে জড়িয়ে ছিলেন। সেগুলোর বিচার এখনও হচ্ছে।

প্রিয়া সাহাকে গুরুত্ব না দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে আনিসুল হক বলেন, প্রিয়া সাহাকে এত গুরুত্ব না দিয়ে শুধু সত্যটাকে তুলে ধরে বাকিটুকু তাকে ইগনোর করলেই ভালো হয়। তিনি বলেন, প্রিয়া সাহার দেওয়া বক্তব্য রাষ্ট্রদ্রোহী হয়ে গেছে এটা বোধ হয় ঠিক না। তবু স্বাধীন বিচার বিভাগে বিচারকরা যেটা মনে করবেন সেটা করবেন।

এ ধরনের ঘটনার পেছনে কোনো গোষ্ঠী জড়িত আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, হয়তো থাকতে পারে। তবে, সেটা আমাদের তদন্ত করে বের করার আগ পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করা ঠিক হবে না। আমরা এগুলো খতিয়ে দেখবো।

প্রসঙ্গত, গত ১৬ জুলাই ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার ২৭ ব্যক্তির সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেখানে ১৬ দেশের প্রতিনিধি অংশ নেন। বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রিয়া সাহাও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পান।

বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতা প্রিয়া সাহা মার্কিন প্রেসিডেন্টকে বলেন, আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি। বাংলাদেশে তিন কোটি ৭০ লাখ হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান নিখোঁজ রয়েছেন। দয়া করে আমাদের লোকজনকে সহায়তা করুন। আমরা আমাদের দেশে থাকতে চাই।

এর পর তিনি বলেন, এখন সেখানে এক কোটি ৮০ লাখ সংখ্যালঘু রয়েছে। আমরা আমাদের বাড়িঘর খুইয়েছি। তারা আমাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দিয়েছে, তারা আমাদের ভূমি দখল করে নিয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো বিচার পাইনি।

ভিডিওতে দেখা গেছে, একপর্যায়ে ট্রাম্প নিজেই সহানুভূতিশীল হয়ে ওই নারীর সঙ্গে হাত মেলান। কারা এমন নিপীড়ন চালাচ্ছে? ট্রাম্পের এমন প্রশ্নের জবাবে প্রিয়া সাহা বলেন, ‘দেশটির মৌলবাদীরা এসব করছে। তারা সবসময় রাজনৈতিক আশ্রয় পাচ্ছে।’

প্রিয়া সাহার দেয়া বক্তব্যের সমালোচনা করে বর্তমান সরকারের আমলে বাংলাদেশের ধর্মীয় সম্প্রীতির বহু উদাহরণ সোশ্যাল মিডিয়ায় তুলে ধরছেন নেটিজেনরা।

এদিকে সরকারের মন্ত্রীরাও তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের তাঁকে ‘দেশদ্রোহী’ অভিহিত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছেন। আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও। তবে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে প্রিয়ার বিরুদ্ধে তড়িঘড়ি করে কোনো আইনি পদক্ষেপ না নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রবিবার (২১ জুলাই) দুপুরে সেতু ও সড়ক পরিবহন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানান, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন প্রিয়া সাহা কেনো এমন কাজ করেছেন এ বিষয়ে তার আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ থাকা উচিত। প্রধানমন্ত্রী বর্তমানে লন্ডনে অবস্থান করছেন। সেখানে বসেই তিনি এই নির্দেশনা দিয়েছেন।