ঢাকা, ৪ এপ্রিল, ২০১৪:
কোরিয়ার পথ চেয়ে প্রায় দুই বছর ধরে বসে আছেন শত শত ইপিএস রোস্টারভুক্ত বাংলাদেশী যুবক। দুই বছর পার হয়ে রোস্টার থেকে নাম বাতিল হলে শেষ আশাটুকুও নিভে যাবে। রোস্টারভুক্ত এসব কর্মীরা কয়েকদিন ধরে আন্দোলন করছেন। আন্দোলন করলেও এখনো কোন আশ্বাস মিলেনি। গত বুধবার থেকে তারা সিরিয়ালের ভিত্তিতে ভিসা প্রদানের দাবিতে আমরণ অনশন শুরু করেছেন।
ইপিএসের নিয়মানুযায়ী ইপিএস টপিক পরীক্ষায় পাশ করার পর প্রার্থীদের এক বছরের জন্য রোস্টারভুক্ত করা হয়। এক বছরের মধ্যে চাকরি না হলে ঐ প্রার্থী নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আরো এক বছরের জন্য আবেদন করতে পারেন।
পুরাতনদের না নিয়ে নতুন সার্কুলার বন্ধ রাখার দাবি জানিয়েছে আন্দোলনকারীরা। তাদের দাবি, নতুন সার্কুলার দিলে পুরাতনদের যাওয়ার পথ বন্ধ হবে। নতুন সার্কুলারের মাধ্যমে যারা আসবে তাদের বেলায়ও একই ধরণের ঘটনা ঘটবে। তারাও ভুক্তভোগী হবে। আন্দোলনকারীদের প্রত্যাশা সরকার, বোয়েসেল এবং এইচআরডি কোরিয়া মানবিক দিক বিবেচনা করে সিরিয়ালের ভিত্তিতে অপেক্ষায় থাকা কর্মীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ভিসার ব্যবস্থা করবে। আন্দোলনরতরা প্রবাসী ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং বোয়েসেল এর ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেছে।
বোয়েসেলের বক্তব্য
বোয়েসেল বলছে ইপিএস কর্মীদের চাকরি দেওয়ার সম্পুর্ণ এখতিয়ার কোরিয়ার শিল্প মালিকদের। শিল্প মালিকরাই সিদ্ধান্ত নেন কোন দেশের লোক নিবেন বা কাকে নিবেন। বোয়েসেল এবং এইচআরডি কোরিয়া ইপিএস প্রার্থীদের কোরিয়ান ভাষা পরীক্ষা, স্কিল টেস্ট, মেডিকেল টেস্টসহ সকল তথ্য সরবরাহ করে। মালিকরা এইসব তথ্যের উপর ভিত্তি করে কর্মী বাছাই করে থাকেন। রোস্টার তালিকা থেকে কাকে নেওয়া হবে এইটা সম্পূর্ণ শিল্প মালিকদের ব্যাপার। কর্মী এবং শিল্প মালিকদের সাথে সংযোগ স্থাপনের কাজটাই বোয়েসেল এবং এইচআরডি কোরিয়া করে থাকে। এর বাইরে এইচআরডি কোরিয়া কিংবা বোয়েসেল কিছুই করতে পারে না। বোয়েসেল ইপিএস প্রক্রিয়া শুরু থেকেই প্রার্থীদের বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানিয়ে আসছে ইপিএস সিস্টেমে রোস্টারভুক্ত হলেও কারো চাকরির নিশ্চয়তা নেই। সব জেনে শুনেই ইপিএসে আবেদন করেন বলে দাবি বোয়েসেলের।
আন্দোলনকারীদের বক্তব্য
আন্দোলনকারীদের দাবি দুই বছর ধরে কোরিয়া যাওয়ার পথ চেয়ে আছেন। অনেক সাধনা করে কোরিয়ান ভাষা পরীক্ষা দিয়ে, স্কিল টেস্ট দিয়ে দুই বছর ধরে অপেক্ষা করছি। দুই বছর পরে এসে যদি আমাদের নাম বাতিল করে দেওয়া হয় তাহলে আমাদের কি হবে? আমরা সবকিছুই হারালাম।
আন্দোলনকারীদের দাবি, গত দুইবছর ধরে খুবই ধীরগতিতে ভিসা আসছে। সিরিয়াল ভিত্তিতে লোক না নেওয়ায় ২০১২ সালে যারা পাশ করেছে তাদের আগে ২০১৩ সালে পাশ করা কর্মীদের ভিসা আসছে। ইপিএসের নিয়মানুযায়ী কোরিয়ার শিল্প মালিকরা না নিলে বোয়েসেল কিংবা এইচআরডি কোরিয়ার কিছুই করার নেই এমন বক্তব্যের জবাবে আন্দোলনকারীরা বলেন আইনকানুন মানুষের জন্য তৈরী। যে নিয়মে এতগুলো মানুষের জীবন বিপন্ন হয় সেই আইন বদলানো উচিত। ভুক্তভোগীদের একজন জানান বোয়েসেল এবং এইচআরডি কোরিয়া আমাদের দিকে সদয় হলে আমরা কোরিয়া যেতে পারব। আমাদের পরিবারগুলো অসহায় হয়ে পড়েছে। সবাই দুই বছর ধরে তাকিয়ে আছে কবে কোরিয়া গিয়ে আয় করে সংসারের অভাব মেটাবো।
ইপিএস পরিসংখ্যান
২০০৭ সালে কোরিয়ার সাথে চুক্তি হওয়ার পর ২০০৮ সালে প্রথম বাংলাদেশী কর্মীরা কোরিয়া গমন করে। ২০০৮ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত রোস্টারভুক্ত ইপিএস কর্মীর সংখ্যা ১৫,১২৩ জন। যার মধ্যে ১০,০৮৪জন কোরিয়া গিয়েছেন।
বাংলাদেশকে প্রতি বছর ইপিএস থেকে যে কোটা দেওয়া হয় কোরিয়ান মালিকদের সে পরিমাণ কোটা পূরণের জন্য একটি নীতিমালা প্রণয়নে এখন সময়ের দাবি। প্রতিবছর যে পরিমাণ কোটা দেওয়া হবে ঠিক সেই পরিমাণ ছাত্রছাত্রীকে কোরিয়ান ভাষা পরীক্ষায় পাশ করালে এই ধরণের সমস্যা হবে না বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্ট সব মহল।