সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার মন্ডলীভোগ গ্রামের লন্ডন প্রবাসী এমরান চৌধুরী তার পিতার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে ধরে তার সম্পত্তি উদ্ধারসহ জান-মালের নিরাপত্তা প্রদানে সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। পরিবারের একমাত্র সন্তান হওয়া সত্ত্বেও তার পিতা হিরন মিয়া চৌধুরী তাকে প্রাণে মারতে চাচ্ছেন বলেও অভিযোগ করে তিনি। তার অভিযোগ, নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করায় তাকেসহ তার মা এবং স্ত্রী-সন্তানদেরও হত্যার হুমকিসহ বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছেন তার পিতা।
বুধবার সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এসব অভিযোগ করেন তিনি। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, তার পিতা একজন খারাপ ও চরিত্রহীন প্রকৃতির লোক। তিনি প্রথম স্ত্রীর অনুমতি ছাড়াই একাধিক বিবাহ করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে এমরান চৌধুরী উল্লেখ করেন, তিনি লন্ডন থেকে জমি ক্রয় করার জন্য তার পিতার কাছে টাকা পাঠালে ক্রয়কৃত জমি পিতা-মাতার নামে রেজিস্ট্রি করা হয়। বর্তমানে সেই জমিতেই ‘চৌধুরী ভবন’নির্মাণ করা হয়েছে। এ ভবনের সামনের অংশে তার নামে একটি মার্কেটও নির্মাণ করা হয়। কিন্তু তার পিতা নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়লে তাতে মা বাঁধা দেন। এ কারণে তিনি তাকে ব্যাপকভাবে মারধর করেন। এ নিয়ে স্থানীয় গণ্যমান্য মুরব্বিদের কাছে বিচার চাইলে তিনি আরো ক্ষেপে যান এবং মায়ের উপর তার নির্যাতনের মাত্রা আরও বেড়ে যায়। একই সাথে নতুন করে আরও নারীদের বাসায় এনে অনৈতিক কার্যক্রমে লিপ্ত হন। তাছাড়া তিনি তার নামীয় মার্কেটের নাম মুছে ফেলে তার দাদা মৃত মনোহর মিয়া চৌধুরীর নামে নামকরণও করেন। এতে তার মা প্রতিবাদ করলে তিনি তার নামীয় জমিসহ সকল সম্পত্তি নিজের নামে লিখে নিতে চাপ প্রয়োগ করেছিলেন। তবে আমার মা তা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তিনি তাকে মারধর করেন।
তিনি অভিযোগ করেন, মা তার নামীয় জমি এবং বাসা আমার নামে লিখে দিলে পিতা আরও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন এবং বাড়িতে থাকতে হলে তাকে ৫০ লাখ টাকা দিতে হবে বলে অর্থ দাবি করেন। অন্যথায় তাকেসহ তার স্ত্রী-সন্তান এবং মাকেও হত্যার হুমকি দেন।
প্রবাসী এমরান গত ৯ মে লন্ডন থেকে দেশে আসেন উল্লেখ করে বলেন, দেশে আসার পর তার পিতা গত ১২ মে দিবাগত রাতে তার উপর হামলা করেন। তিনি রড দিয়ে বেধড়কভাবে পেটানও। এর কয়েক ঘন্টা পর তিনি আবারও বন্দুক নিয়ে এসে আমায় হত্যার হুমকি দেন। এদিন তিনি আমার বাসার বিদ্যুৎ-গ্যাস ও পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। এ ঘটনায় ছাতক থানায় অভিযোগ দায়ের করলে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছিল। পরে জামিনে মুক্তি পেয়ে তিনি বাসায় ফিরে এসে আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেন।
একইভাবে গত ১৫ মে তার মা হাওয়ারুন নেছা চৌধুরীকেও হত্যা করতে বন্দুক নিয়ে বাসায় আসেন পিতা হিরন মিয়া চৌধুরী। এ সময় তার আর্তচিৎকারে আমরা এগিয়ে আসলে তিনি স্থান ত্যাগ করে চলে গেলে আমার মা তার কবল থেকে রক্ষা পান। পরদিন আমার মা সুনামগঞ্জ নির্বাহী ম্যজিস্ট্রেট আদালতে আমার পিতা হিরন মিয়া চৌধুরী ও তার তৃতীয় স্ত্রী মারজানা বেগমকে অভিযুক্ত করে একটি সিআর মামলা দায়ের করেন।
ওই মামলায় আদালতে যাতে হাজির হতে না পারি সেজন্যই গত ১০ জুন সোমবার রাতে ১০টার দিকে ছাতক থানা থেকে সিলেট শহরে ফেরার পথে পেপার মিল সংলগ্ন সড়কে পিতা হিরণ চৌধুরী তার সহযোগিদের নিয়ে তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা করেন। এ সময় তারা ধারালো অস্ত্র দিয়ে আমায় কুপিয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় মৃত ভেবে ফেলে রেখে যান। সেখান থেকে আমার স্বজনরা আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান।
সংবাদ সম্মেলনে প্রবাসী এমরান বলেন, তিনি বর্তমানে প্রাণের ভয়ে স্ত্রী-সন্তান এবং মাকে নিয়ে বাড়ি ছাড়া। তাছাড়া তার পিতা কর্তৃক ক্ষতির আশঙ্কায়ও আছেন। যে কারণে তিনি প্রাণের নিরাপত্তা দিতে প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
সৌজন্যে- নয়া দিগন্ত