প্রত্যাশার মাত্রা যখন বেশি থাকে, তখন প্রাপ্তি নিয়ে আলোচনা, পর্যালোচনা ও সমালোচনাও বেশি হয়। বাংলাদেশ বিশ্বকাপে এসেছে আকাশছোঁয়া প্রত্যাশা নিয়ে। দল, ম্যানেজম্যান্ট, শুভানুধ্যায়ী তথা গোটা জাতি তাকিয়ে রয়েছে মাশরাফি, সাকিব, তামিম, মুশফিকদের দিকে।
শুরুটা হয়েছে দুর্দান্ত। ওভালে শক্তিশালী দক্ষিণ আফ্রিকাকে উড়িয়ে দিয়েছে মাশরাফির দল। একই মাঠে পরের ম্যাচে জিততে না পারলেও, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ২৪৪ রানের মাঝারি পুঁজি নিয়েও লড়াই করেছে দুর্দান্ত। সে ম্যাচে হার মানলেও লড়াই হয়েছে সমানে সমান।
তৃতীয় ম্যাচটি ছিল কার্ডিফে। যেটিকে ধরা হয় টাইগারদের পয়মন্ত ভেন্যু হিসেবে। কার্ডিফের সোফিয়া গার্ডেনে ২০০৫ সালে মোহাম্মদ আশরাফুলের সেঞ্চুরিতে অস্ট্রেলিয়া এবং ২০১৭ সালে সাকিব আল হাসান ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের সেঞ্চুরিতে নিউজিল্যান্ডকে হারানোর সুখস্মৃতি ছিলো বাংলাদেশের।
এ দুটি স্মরণীয় সাফল্য সঙ্গে থাকলেও, শনিবার আর সফলতা ধরা দেয়নি টাইগারদের। বিশ্বকাপের স্বাগতিক ও অন্যতম ফেবারিট ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ব্যাটে-বলে পারদর্শীতা দেখাতে না পারায় মিলেছে ১০৬ রানের বড় পরাজয়।
প্রিয় দলের এ পারফরম্যান্সে ভক্ত-সমর্থকরা খানিক হতাশ। আশাভঙ্গের বেদনা গ্রাস না করলেও আশাহত অনেকেই। তবে ইংল্যান্ডের খেলোয়াড় জেসন রয়, জনি বেয়ারস্টো, জো রুট, জোফ্রা আর্চারদের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স মানদণ্ডে আনলে, ইংলিশদের বিপক্ষে বাংলাদেশের পারফরম্যান্সকে খুব বেশি খারাপ বলা যাবে না।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বোলিংটা হয়নি প্রত্যাশামাফিক। এছাড়া দুর্বল ফিল্ডিংয়ের কারণে হয়েছে বেশ কিছু রান। পরে ব্যাটিংয়ে নেমে সাকিব আল হাসানের সেঞ্চুরি ও মুশফিকুর রহীমের খানিক ঝলকানি ব্যতীত আর কেউই তেমন কিছু করতে না পারায়, পরাজয়ের ব্যবধানটা হয়েছে বড়।
নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে খুব কাছে গিয়ে হারা এবং ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বড় পরাজয়ের পর, ভক্ত-সমর্থকরা হয়ে পড়েছেন আশাহত। বাংলাদেশের বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে খেলার লক্ষ্যের ব্যাপারেও জেগেছে সংশয়।
আগেই বলে রাখা ভালো, এখনই শেষ হয়ে যায়নি সবকিছু। গাণিতিক সমীকরণ কিংবা বাস্তব প্রেক্ষাপটে, এখনও শেষ চারে থাকার বেশ ভালো সম্ভাবনা রয়েছে মাশরাফি বাহিনীর। তবে সেক্ষেত্রে, আগামী যে ছয়টি ম্যাচ রয়েছে- তার মধ্যে অন্তত ৪টিতে জেতার প্রয়োজনীয়তা দেখা রয়েছে।
এখন দেখার বিষয় হলো, বাংলাদেশের পরের ছয় ম্যাচের প্রতিপক্ষ হলো শ্রীলঙ্কা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, অস্ট্রেলিয়া, আফগানিস্তান, ভারত ও পাকিস্তান। এ ছয় ম্যাচের মধ্যে কোন চার দলকে হারাবে বাংলাদেশ? কোন চার দলকে লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে এগুবে বাংলাদেশ?
ক্রিকেট অনিশ্চয়তার খেলা। যার শেষ বলে কোনো কথা। এমনকি বলে কয়ে কিছু করা যায় না। অনেক সময় পঁচা শামুকে পা কাঁটে আবার প্রায়ই রাঘব বোয়ালরাও হার মানে। ফলে বাংলাদেশ কোনো দলকে বলে কয়ে হারাবে- তা আগেভাগে বলে দেয়া সম্ভব নয়।
তবে আপাতদৃষ্টিতে আফগানিস্তান, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ- এ চারটি দলকেই হয়তো বাংলাদেশ তাদের সম্ভাব্য লক্ষ্যবস্তু হিসেবে ঠিক করে সামনে এগুবে। কারণ ভারত এবং অস্ট্রেলিয়া অনেক বেশি শক্তিশালী। তাদের হারানোও হবে বেশ কঠিন।
কাজেই ধরে নেয়া যাক, বাংলাদেশের এখন সেমিতে খেলার মিশন হলো মঙ্গলবার লঙ্কাবধের পর ওয়েস্ট ইন্ডিজ, আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের বিপক্ষে জয়। এতে অবশ্য রয়েছে খানিক দুঃসংবাদ। ইংল্যান্ডের আবহাওয়ায় বৃষ্টির কোনো ধরাবাধা নিয়ম নেই। হুটহাট নেমে যায় ঝুম বৃষ্টি। ফলে প্রকৃতি বাধা দিলে কাজ হয়ে পড়বে কঠিন। অন্যথায় ম্যাচগুলো খেলতে পারে, এখনো সেমিফাইনালের লক্ষ্যপূরণ সম্ভব বাংলাদেশের।